বাগেরহাটে বাক প্রতিবন্ধী নারী পেলো স্থায়ী ঠিকানা

বাগেরহাট প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১২ মে ২০২০, ০২:০৪

বাগেরহাটে দীর্ঘদিন ধরে রাস্তার পাশে বাগানের মধ্যে ঝুপড়ি ঘরে থাকা সন্তানসহ বাক প্রতিবন্ধী অজ্ঞাত নারীকে সরকারি গুচ্ছগ্রামে বসতঘর দিয়েছে উপজেলা প্রশাসন।
সোমবার (১১ মে) বিকেলে বারাকপুর গ্রাম থেকে বাগেরহাট সদর উপজেলা প্রশাসনের গাড়িতে করে অজ্ঞাত ওই নারীকে (মরিয়ম) সাড়ে তিন বছর বয়সী সন্তান আব্দুল্লাহসহ বিষ্ণপুর গুচ্ছ গ্রামে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তার জন্য আগে থেকে নির্ধারিত ঘরে তুলে দেয়া হয়।
এ সময় বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক মোঃ মামুনুর রশীদ, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক কামরুল ইসলাম, সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান সরদার নাসির উদ্দিন, সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ তানজিল্লুর রহমান, ষাটগম্বুজ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শেখ আকতারুজ্জামান বাচ্চু, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান রিজিয়া পারভীন, সুপ্তি মহিলা উন্নয়ন সংস্থার নির্বাহী পরিচালক ঝিমি মন্ডলসহ স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন।
এ সময় জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রতিবন্ধী মরিয়ম ও তার সন্তানকে খাদ্য সহায়তা ও পরিধানের জন্য পোশাক দেয়া হয়। স্থানীয় সুপ্তি মহিলা উন্নয়ন সংস্থার নির্বাহী পরিচালক ঝিমি মন্ডল সহজে রান্নার জন্য একটি উন্নত চুলা প্রদান করেন মরিয়মকে।
স্থানীয়রা জানান, প্রায় তিন বছর ধরে সদর উপজেলার বারাকপুর গ্রামের জনৈক শহিদুলের বাগানে একটি ঝুপড়ি ঘর তৈরি করে নিজের ৬ মাস বয়সী শিশু সন্তান নিয়ে থাকতেন বাক প্রতিবন্ধী ওই নারী। সেখানে স্থানীয় লোকজন ও এলাকাবাসীর দেওয়া সামান্য খাদ্যে কোন মতে বেঁচে ছিলেন তিনি।
বাক প্রতিবন্ধী নারীকে স্থান দেয়া শহিদুল বলেন, প্রায় তিন বছর আগে থেকে ওই নারী আমার বাগানে থাকত। যখন যা পারতাম দিতাম। এলাকার অনেকে ওকে সহযোগিতা করেছে। ও আমাদের কথা বুঝলেও আমরা ওর কোন কথা বুঝতাম না। কখনো কারো জিনিসপত্র চুরি করত না সে। এলাকাবাসী ওর ছেলের নাম রাখে আব্দুল্লাহ। ওর ছেলের বয়স এখন সাড়ে তিন বছর। আজ ছেলেসহ সে একটি স্থায়ী নিবাস পেয়েছে এজন্য উপজেলা প্রশাসনকে ধন্যবাদ জানাই।
সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ তানজিল্লুর রহমান বলেন, কিছুদিন আগে জানতে পারি বারাকপুর এলাকায় অজ্ঞাত এক নারী ঝুপড়ি ঘরে মানবেতর জীবন যাপন করছেন। রামপাল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার মাধ্যমে বিষয়টি জানার পরে আমি ঘটনাস্থলে আসি। জনপ্রতিনিধি ও স্থানীয়দের সাথে কথা বলি। কিন্তু সবথেকে বড় সমস্যা ছিলো বাক প্রতিবন্ধী ওই নারীর কোন পরিচয় ছিল না। তারপরও সবকিছু উপেক্ষা করে ওই নারীকে পুনঃবাসনের জন্য কাজ শুরু করি।
বিষ্ণপুর ইউনিয়নের সরকারি গুচ্ছগ্রামে আমরা ওর জন্য একটি আধপাকা ঘর তৈরি করে দেই। গুচ্ছগ্রামে রফিকুল ইসলামকে আব্দুল্লাহ ও তার মায়ের অভিভাবক হিসেবে নিয়োজিত করি। মরিয়ম নাম দিয়ে বিষ্ণপুর ইউনিয়ন পরিষদে জন্ম নিবন্ধন সম্পন্ন করি। ওর সন্তানেরও জন্ম নিবন্ধন করা হয়েছে। সকলের চেষ্টায় মরিয়মকে আমরা তার স্থায়ী নিবাসে তুলে দিয়েছি। তার সকল প্রকার সরকারি সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে বলে জানান তিনি।