Logo
×

Follow Us

জেলার খবর

কক্সবাজার সৈকতে প্লাস্টিক দানব

Icon

তাহজীবুল আনাম

প্রকাশ: ১৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১:৩১

কক্সবাজার সৈকতে প্লাস্টিক দানব

দানব ভাস্কর্য। ছবি: কক্সবাজার প্রতিনিধি

এশিয়া মহাদেশের সর্ববৃহৎ প্লাস্টিক দানব নির্মিত হয়েছে কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতে। প্রায় ১০ মেট্রিক টন প্লাস্টিকের বিভিন্ন বর্জ্যের সমন্বয়ে তৈরি এই স্ট্যাচু। প্লাস্টিক দূষণের ভয়াবহতা সম্পর্কে মানুষের সচেতনতা বৃদ্ধি  ও প্লাস্টিক ব্যবহার রোধে নির্মাণ করা হয় এই বর্জ্য দানব। দানবটি প্লাস্টিক দূষণে প্রাণ-প্রকৃতির বিরূপতার সাক্ষ্য দিচ্ছে। পর্যটক ও স্থানীয়রা  বিনোদনের পাশাপাশি বিষয়টি শিক্ষণীয় হিসেবে গ্রহণ করছে। কক্সবাজার জেলা প্রশাসন ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে নির্মিত সৈকতের সুগন্ধা পয়েন্টে প্রদর্শন করা হয় প্লাস্টিক বর্জ্য দিয়ে তৈরি এ দানব ভাস্কর্য।

সরেজমিনে দেখা যায়, সমুদ্রসৈকতের সুগন্ধা পয়েন্ট সংলগ্ন বালিয়াড়িতে দাঁড়িয়ে আছে ভয়ংকর এক দানব। রক্ত-মাংসহীন প্রতীকী হলেও যার হিংস্র থাবায় প্রতিনিয়ত ক্ষতবিক্ষত হয় মানবদেহ, প্রকৃতি ও প্রাণবৈচিত্র্য। সৈকতে ঘুরতে আসা যে কেউ দূর থেকে এটি প্রথম দর্শনে ভয় পেয়ে যাবে সন্দেহ নেই। কিন্তু কাছে যেতেই সে ভয় কেটে যাবে। আর জানা যাবে দানবটির দেহে বয়ে বেড়ানো প্লাস্টিক দূষণে প্রাণ-প্রকৃতির ক্ষতির মাত্রা কত তীব্র!

প্রবালদ্বীপ সেন্ট মার্টিন ও কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতের অপার সৌন্দর্য উপভোগ করতে প্রতিদিন সমাগম ঘটে লাখো পর্যটকের। যারা সৈকতের বালিয়াড়ি ও সাগরের পানিতে ফেলছে প্লাস্টিক পণ্যসামগ্রীর বর্জ্য। এতে উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে দূষণ এবং হুমকির মুখে পড়ছে সামুদ্রিক জীব ও মানবজীবন। আর এই প্রাণ-প্রকৃতির দূষণ রোধে এবং সচেতনতা সৃষ্টিতেই কক্সবাজার জেলা প্রশাসন ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশন নিয়েছে প্লাস্টিক বর্জ্যে তৈরি দানব ভাস্কর্যের প্রদর্শনীর মতো ভিন্নধর্মী উদ্যোগ।

বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনের স্বেচ্ছাসেবক মুহাম্মদ মুবারক জানান, প্রায় এক মাস ধরে কক্সবাজার শহর, ইনানী ও টেকনাফের সমুদ্রসৈকত থেকে সংগ্রহ করা হয় অন্তত ১০ মেট্রিক টন প্লাস্টিক বর্জ্য। এসব বর্জ্য দিয়ে কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতে নির্মাণ করা হয় এই প্লাস্টিক দানব। 

৭ নভেম্বর কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতে পর্যটকদের জন্য ‘প্লাস্টিক এক্সচেঞ্জ স্টোর’ ও স্থানীয়দের জন্য ‘প্লাস্টিক এক্সচেঞ্জ মার্কেট’ উদ্বোধন করেন জেলা প্রশাসক। যেখানে প্লাস্টিক বর্জ্য হিসেবে ফেলে দেওয়া খালি পাত্র, বোতল ও পলিথিনের প্যাকেটের বিনিময়ে যে কেউ নিতে পারেন চাল, ডাল, তেল, চিনি, লবণসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি এবং পর্যটকরা জিতে নেন বই, কলম, ক্যাপ, ব্যাগসহ বিভিন্ন উপহার। এই কার্যক্রম থেকেই মূলত ১০ মেট্রিক টন প্লাস্টিক বর্জ্য সংগ্রহ করা হয়।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগের ভাস্কর ও শিল্পী আবীর কর্মকার জানান, বিদ্যানন্দের ভিন্নধর্মী উদ্যোগে প্লাস্টিক দানবটি তৈরি করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগের একদল শিল্পী। এতে তারা প্লাস্টিক বর্জ্যরে পাশাপাশি ব্যবহার করেছেন কাঠ, পেরেক ও আটাসহ (গাম) আরো কয়েকটি উপকরণ। ভাস্কর্য শিল্পীদের দাবি, এটি এশিয়া মহাদেশের সর্বোচ্চ প্লাস্টিক দানব।

প্লাস্টিক বর্জ্যে নির্মিত এই দানবটি দেখতে ভিড় করেছে সৈকতে ঘুরতে আসা পর্যটকরা। তারা বলছে, মানুষ এটি দেখতে এসে দৈত্য-দানবের ভয়ংকর রূপের মতো প্লাস্টিক বর্জ্যরে ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে সচেতন হবে। পাশাপাশি নিজেরাও প্লাস্টিক পণ্য ব্যবহারে সজাগ থাকবে। 

কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মুহম্মদ সালাহউদ্দিন বলেন, ‘আমরা অনেকে সৈকতে বোতল নিয়ে নামি। পানি খেয়ে বোতলটা বালুচরে ছুড়ে মারি। সেই বোতল চলে যাচ্ছে সমুদ্রের পানিতে। প্লাস্টিক বর্জ্য খেয়ে মারা যাচ্ছে সামুদ্রিক প্রাণী। ধ্বংস হচ্ছে পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য। সমুদ্রসৈকত দেখতে এসে যদি আমরা সমুদ্রকে ডাস্টবিন বানিয়ে ফেলি, তাহলে দুর্গতি নেমে আসবে। সমুদ্র দেশের অতি মূল্যবান সম্পদ, সমুদ্রের ক্ষতি করার অধিকার কারো নেই। তাই সমুদ্রকে রক্ষা করতে পারলে রক্ষা হবে প্রকৃতি ও প্রতিবেশ।’

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫