লাখো পর্যটকে মুখরিত কক্সবাজার সমুদ্রসৈকত

কক্সবাজার প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০:২৭

সমুদ্র তীর জুড়ে আনন্দ-উল্লাসে মেতেছেন পর্যটকরা। ছবি: কক্সবাজার প্রতিনিধি
বিজয় দিবসের ছুটিতে কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতে ভিড় করেছে লাখো পর্যটক। সৈকতের লাবনী, সুগন্ধা ও কলাতলী পয়েন্টে শুধু মানুষ আর মানুষ। পর্যটকরা সমুদ্র তীর জুড়ে মেতেছেন আনন্দ-উল্লাসে। এছাড়া শহরের ৫ শতাধিক হোটেল-মোটেলের কোথাও কোনো রুম খালি নেই।
কক্সবাজার সমুদ্রসৈকত ছাড়াও মেরিন ড্রাইভ, দরিয়ানগর, হিমছড়ি ঝরনা, পাথুরে সৈকত ইনানী-পাটুয়ারটেক, টেকনাফ সমুদ্রসৈকত, নেচার পার্ক, ডুলাহাজারা সাফারি পার্ক, রামুর বৌদ্ধ পল্লিসহ সকল বিনোদন কেন্দ্রে পর্যটকের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায় । তবে ভ্রমণে এসে অনেক পর্যটক পড়েছেন ভোগান্তিতে। হোটেলে রুম না পেয়ে অনেকে ব্যাগ নিয়ে অবস্থান করছে সৈকতের কিটকটে।
আজ সোমবার (১৬ ডিসেম্বর) বিকেলে সৈকতের সুগন্ধা পয়েন্টে গিয়ে দেখা যায় সৈকতের প্রায় ৪ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে পর্যটক ও স্থানীয়রা ভিড় করেছেন। সমুদ্রের লোনাজল পরিণত হয়েছে সব বয়সের মানুষের মিলনমেলায়।
মহান বিজয় দিবসের ছুটি, তাই সাগরতীরে কেউ এসেছেন বিজয়ের বেশে। আবার কেউ এসেছেন জাতীয় পতাকা হাতে। পরিবার-পরিজন নিয়ে আনন্দ মেতে ওঠার পাশাপাশি তুলছেন ছবি, শিশুদের নিয়ে খেলছেন বালুচরে। অনেকেই চড়ছেন ঘোড়ার পিঠে কিংবা ওয়াটার বাইকে।
ভ্রমণে এসে পর্যটকরা বলেন, সৈকতে গোসল ও সমুদ্রের নীল জলরাশি যেকোন মানুষের মন কাড়বে। এই সুন্দর প্রকৃতি বাংলাদেশের আর কোথাও নেই। মনোরম সৈকতে লাখ লাখ মানুষের ঢল দেখে অবাক হয়ে যান অনেকে।
পর্যটক সজীব উদ্দিন বলেন, অনেক চমৎকার পরিবেশ কক্সবাজারের। এখানে না আসলে বুঝা যাবে না, কক্সবাজারের আসল সৌন্দর্য ও মহিমা। এখানে এতো পর্যটক দেখে সত্যিই অবাক হওয়ার মতো। আমরা অগ্রিম হোটেল কক্ষ বুকিং না দিয়ে এলে বিপদে পড়তাম। এখন পরিবার নিয়ে ঘুরছি আর আনন্দ করছি।
আরেক পর্যটক সিরাজ মিয়া বলেন, ছুটি মানেই কক্সবাজার। শীত মৌসুম কক্সবাজার সৈকত অনেক সুন্দর লাগে। তাই পরিবাবকে সময় দেয়ার জন্য কক্সবাজার ছুটে এসেছি। এখানে গোসল করলাম, বিচ বাইক ও ঘোড়ার পিঠে চড়লাম। খুব আনন্দ উপভোগ করতে পেরেছি।
পর্যটক গিয়াস উদ্দিন বলেন, বিজয় দিবসের ছুটিতে একসঙ্গে লাখো মানুষ আগমন করায়, অনেক পর্যটক পড়েছেন ভোগান্তিতে। হোটেল রুম না পেয়ে অনেকেই ব্যাগ নিয়ে অবস্থান করছে সৈকতের কিটকটে। তিনি বলেন, পর্যটকদের কাছ থেকে অনেক ব্যবসায়ীরা আদায় করছে অতিরিক্ত রুম ভাড়া। আর মানুষের ভিড়ে বসার সিটও পাওয়া যাচ্ছে না কিটকটে।
সৈকতে দায়িত্বরত সিনিয়র লাইফ গার্ড কর্মী মো. জহিরুল ইসলাম বলেন, সৈকতের ৩টি পয়েন্টে লাইফ গার্ড কর্মীরা দায়িত্ব পালন করছে। তবে লাখো পর্যটকের সমুদ্রস্নানে নিরাপত্তা দিতে কিছুটা বেগ পেতে হচ্ছে। পর্যটকদের সার্বিক নিরাপত্তার দায়িত্বে তৎপর দেখা গেছে টুরিস্ট পুলিশের সদস্যদের। গোসলে নেমে ঢেউয়ের ধাক্কায় কিংবা স্রোতের টানে কেউ ভেসে গেলে উদ্ধার তৎপরতার চালাচ্ছেন লাইফগার্ড কর্মীরা।
কক্সবাজার হোটেল রিসোর্ট মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মুকিম খান বলেন, ১৬ ডিসেম্বরের পর কক্ষ ভাড়ার বিপরীতে কোনো ছাড় দেওয়া হচ্ছে না। যদিও নভেম্বর থেকে ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত ছাড় দেওয়া হয়েছিল সর্বোচ্চ ৩০ শতাংশ।
জেলা ট্রাফিক পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জসিম উদ্দিন চৌধুরী বলেন, রবিবার রাত থেকে কক্সবাজারে পর্যটকবাহী প্রায় ৬০০ এর অধিক গাড়ি প্রবেশ করেছে। একসাথে অনেকগুলো গাড়ি প্রবেশ করায় শহরে যানজট সৃষ্টি হচ্ছে। পর্যটকের চাপ থাকায় আগামী জানুয়ারি মাসের ১৫ তারিখ পর্যন্ত জ্যাম থাকবে। যানজট নিরসনে কাজ করছেন ট্রাফিকের প্রায় ৪০ জন পুলিশ সদস্য।
অতিরিক্ত পর্যটকের ভিড়ের সুযোগে হোটেল কক্ষের ভাড়া ও রেস্তোরাঁগুলোতে খাবারের দাম বেশি আদায় করা হচ্ছে কি না, তা তদারকির জন্য প্রথম শ্রেণির ম্যাজিস্ট্রেটের মাধ্যমে একাধিক ভ্রাম্যমাণ আদালত মাঠে নামানো হয়েছে বলে জানান জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন। তিনি বলেন, পর্যটকদের কাছ থেকে অতিরিক্ত কক্ষভাড়া কিংবা খাবারের মূল্য আদায়ের অভিযোগ প্রমাণিত হলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।