শার্শা সীমান্তে ৩ যুবকের মরদেহ উদ্ধার, মৃত্যু নিয়ে রহস্য

বেনাপোল প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১৯ ডিসেম্বর ২০২৪, ২১:২১

শার্শা থানা। ছবি: সংগৃহীত
যশোরের শার্শা সীমান্তের ইছামতী নদীর পাড় থেকে একদিনেই তিন যুবকের মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। এর আগে বুধবার (১৮ ডিসেম্বর) সকালে দুইজনের এবং বিকেলে একজনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এদের মধ্যে নদীর পাড় থেকে দু’জন এবং নদীতে ভাসমান অবস্থায় আরেকজনকে উদ্ধার করা হয়। তবে কীভাবে তাদের মৃত্যু হয়েছে সে বিষয়ে এখনও পুলিশ কিছু জানাতে পারেনি।
জানা যায়, গতকাল বুধবার বিকেলে শার্শা থানার অগ্রভূলাট সীমান্তের ইছামতী নদী থেকে ভাসমান অবস্থায় সাকিবুর রহমান নামের এক যুবকের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। তিনি বেনাপোল পোর্ট থানার দীঘিরপাড় গ্রামের জামিলুর রহমানের ছেলে। এর আগে সকালে একই এলাকার আরিফুল ইসলামের ছেলে সাবু হোসেন ও একই থানার কাগজপুকুর গ্রামের ইউনুস আলীর ছেলে জাহাঙ্গীর আলমের মরদেহ সীমান্তের পাঁচভুলোট ও পুটখালী থেকে উদ্ধার করা হয়।
সাবু হোসেনের পরিবার সূত্রে জানা যায়, বুধবার সকালে লোকমুখে খবর পান পুটখালী সীমান্তের ইছামতী নদী পাড়ে সাবু আহত অবস্থায় পড়ে আছে। পরে তারা ঘটনাস্থলে গিয়ে তাকে উদ্ধার করেন। বাড়িতে নিয়ে আসার পথেই সাবু মারা যান। মাঝে মাঝে মালামাল আনতে ভারতে যেতেন তিনি।
জাহাঙ্গীরের আলমের পরিবার সূত্রে জানা যায়, জাহাঙ্গীর দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে ভারতে থাকেন। তিনি ভারতীয় একটি মেয়েকে বিয়ে করে ওই দেশেরই নাগরিকত্ব নিয়ে সেখানে বসবাস করছিলেন। বর্তমানে ভারতীয় ভিসা বন্ধ থাকায় জাহাঙ্গীর কয়েকদিন আগে অবৈধ পথে ভারত থেকে বাড়িতে আসেন। গত মঙ্গলবার রাতে ভারতে যাওয়ার জন্য বাড়ি থেকে বের হন তিনি। পরে বুধবার সকালে লোকমুখে পরিবার খবর পান তারা, জাহাঙ্গীরের মরদেহ পাঁচভুলোট সীমান্তের ইছামতী নদীর পাড়ে আছে। পরে পুলিশ সেখান থেকে তার উদ্ধার করে।
সাকিবুরের পরিবার সূত্রে জানা যায়, সাকিবুর ট্রাকের হেলপার হিসেবে কাজ করতেন। গত মঙ্গলবার দুপুরে ট্রাকে কাজের উদ্দেশ্যে বাড়ি থেকে বের হয় সাকিব। এর পর থেকে তার কোন খোঁজ পাওয়া যায়নি। গতকাল বুধবার বিকেলে লোকমুখে খবর পান শার্শার অগ্রভূলাট সীমান্তের ইছামতি নদীর পাড়ে একজনের মরদেহ পড়ে আছে। পরে সেখানে গিয়ে তার মরদেহ শনাক্ত করেন তারা। পরে তারা জানতে পারেন লোভে পড়ে স্থানীয় কিছু চোরাকারবারির সঙ্গে সাকিবুর মঙ্গলবার রাতে চোরাচালানের পণ্য আনতে ভারতে গিয়েছিলেন। কীভাবে তিনি মারা গেছেন সে বিষয়ে তার পরিবার এখনও কিছুই জানতে পারেনি।
এ বিষয়ে স্থানীয়রা জানায়, সীমান্ত থেকে যে তিনজনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে তাদের ৫-৭ জনের একটি দল আছে। তারা ফেনসিডিলসহ বিভিন্ন মাদক ও চোরাচালানি পণ্য অবৈধ পথে ভারত থেকে এনে দেশে সরবরাহ করতেন। তাদের ধারণা, ওই এলাকার স্থানীয়দের সঙ্গে কোন অর্থিক লেনদেনের ঝামেলায় অথবা বিএসএফের নির্যাতনের শিকার হয়ে তাদের মৃত্যু হয়েছে।
বেনাপোল পোর্ট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রাসেল মিয়া ও শার্শা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আমির আব্বাস জানান, গতকাল বুধবার লোকমুখে খবর পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে মরদেহগুলো উদ্ধার করা হয়েছে। ময়নাতদন্তের পর তাদের মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। এ ঘটনায় নিহতদের পরিবারের পক্ষ থেকে উভয় থানায় মামলা দায়ের হয়েছে। তাদের মৃত্যুর বিষয়ে তদন্ত চলছে বলে জানান দুই ওসি।