
মাছের আঁশ। ছবি: বগুড়া প্রতিনিধি
মাছের আঁশ আর আবর্জনা নয়। মাছ কাটার পর ফেলনা মাছের আঁশ দিয়েই নতুন করে স্বপ্ন দেখছেন বগুড়ার শতাধিক মাছকাটার পেশায় নিয়োজিত শ্রমিক। মাছের আঁশ বিক্রি করে বাড়তি আয় দিয়ে নিজেদের সংসারে তারা ফিরিয়ে আনছেন সুদিন। প্রতি কেজি আঁশ এখন বগুড়ায় বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ৮৫ টাকায়। আর প্রতি টন বিক্রি হচ্ছে ৮৫ হাজার টাকা।
জানা যায়, বগুড়া শহর ও শহরতলির বিভিন্ন এলাকায় রয়েছে প্রায় অর্ধশতাধিক কাঁচাবাজার। এসব বাজারে প্রতিদিন ১০০ মনেরও বেশি মাছ কেনাবেচা ও কাটা হয়ে থাকে। পারিবারিকভাবে সময় বাঁচাতে এখন বেশির ভাগ শহুরে মানুষ বাজার থেকে মাছ কিনে বাজারেই মাছ কেটে ঘরে ফিরছেন। মাছ কাটার শ্রমিক হিসেবে এসব বাজারে প্রতিদিন শতাধিক শ্রমিক কাজ করছেন। তারা বড় ধারালো বঁটি নিয়ে মাছের ফেলনা অংশ যেমন- মাছের ভুঁড়ি, ফেলনা পাখনা, লেজ, কান এগুলো আলাদা করে বিভিন্ন প্রাণীর খাবার হিসেবে কেজি দরে বিক্রি করছেন। আর সবচেয়ে বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে মাছের আঁশ। তবে এই আঁশ পানি দিয়ে ধুয়ে রোদে শুকিয়ে কেজি দরে বিক্রি হয়। ক্রেতারা খুলনা, ঢাকা থেকে প্রতি মাসে বগুড়ায় এসে ওজন করে গাড়িতে নিয়ে চলে যাচ্ছে। প্রতি মাসে বগুড়া থেকে প্রায় দুই টন করে মাছের আঁশ বিক্রি হয়ে থাকে।
বগুড়া শহরের রাজাবাজার, রেললাইন ও ফতেহ আলী বাজারের মাছ কাটার শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তারা মাছের আঁশ প্রথমে জমিয়ে রাখেন। প্রতিদিন একজন মাছ কাটার শ্রমিক যে পরিমাণ মাছের আঁশ সংগ্রহ করেন তা পানি দিয়ে ধুয়ে শুকিয়ে গড়ে তিন থেকে চার কেজি সংগ্রহ করতে পারেন। আর যাদের কাজ কম থাকে তারাও কমপক্ষে দেড় থেকে দুই কেজি আঁশ সংগ্রহ করেন।
বগুড়া শহরের ফতেহ আলী বাজারের বগুড়া বড় আঁশ ভান্ডারের স্বত্বাধিকারী শ্রী গোবিন্দ দাস জানান, মাছের আঁশের চাহিদা রয়েছে। বগুড়ার ফতেহ আলী বাজারেই ২০ থেকে ৩০ জন মাছ কাটেন প্রতিদিন। এ ছাড়া বিভিন্ন বাজার থেকে আরো মাছ কাটার শ্রমিকদের কাছ থেকে মাছের আঁশ সংগ্রহ করা হয়। কাঁচার চেয়ে শুকনা বেশি সংগ্রহ করা হয়। তিনি বলেন বগুড়া ছাড়াও নওগাঁ, রংপুর, জয়পুরহাট, নাটোর, গাইবান্ধা দিনাজপুর জেলা থেকেও মাছের আঁশ সংগ্রহ করা হয়। সংগৃহীত মাছের আঁশ প্রথমে পানি দিয়ে ধুয়ে রোদে শুকিয়ে নেওয়া হয়। এক দিনের রোদে আঁশ শুকিয়ে যায়। শুকানো আঁশ জমিয়ে রেখে প্রতি মাসে এক থেকে দুই টন করে বিক্রি করা হয়। ঢাকার কয়েকজন পাইকার এসে এই আঁশ নিয়ে যান।
তারা জানিয়েছেন, চীন, জাপান, থাইল্যান্ড ও ইন্দোনেশিয়ায় এই আঁশ বিক্রি করে থাকেন। সেখানে আঁশগুলো প্রক্রিয়াজাত করে রিচার্জেবল ব্যাটারির পাউডার, বৈদ্যুতিক জিনিসপত্র, চোখের কৃত্রিম কর্নিয়া, বিভিন্ন ধরনের ওষুধ, মাছ ও মুরগির খাবার, নেইলপলিশ, লিপস্টিকসহ নানা প্রসাধনী সামগ্রী তৈরিতে ব্যবহার হচ্ছে। মাছের আঁশ এখন ডলার আয়ের পথ সৃষ্টি করেছে।
বগুড়া শহরের ফতেহ আলী বাজারের মাছ কাটার শ্রমিক আল আমিন জানান, তিনি প্রতিদিন পাঁচ থেকে ছয় কেজি মাছের আঁশ সংগ্রহ করতে পারেন। এই আঁশ পানি দিয়ে ধুয়ে রোদে শুকিয়ে প্রতি মাসে বিক্রি করেন। তিনি এর আগে তিন হাজার ২০০ টাকা মন দরে আঁশ বিক্রি করেছেন।
বগুড়া জেলা মৎস্য কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, বাজারে যে মাছ কেনাবেচা হয় তার আঁশ সংগ্রহ করে বিক্রি করা হচ্ছে। মাছের ফেলনা আঁশ কেনাবেচার ফলে পরিবেশ দূষণ হচ্ছে না। নয়তো এই আঁশ যত্রতত্র ফেলে পরিবেশ দূষণ করা হতো। একদিকে যেমন দূষণ হচ্ছে না, অন্যদিকে আবার সেই ফেলনা আঁশ থেকে আয় করা যাচ্ছে।