Logo
×

Follow Us

জেলার খবর

বিদেশে রপ্তানি হচ্ছে কক্সবাজারের সুপারি

Icon

তাহজীবুল আনাম

প্রকাশ: ০২ জানুয়ারি ২০২৫, ১০:৪৭

বিদেশে রপ্তানি হচ্ছে কক্সবাজারের সুপারি

মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে রপ্তানি হচ্ছে সুপারি। ছবি: কক্সবাজার প্রতিনিধি

আকারে বড়, স্বাদ ও মানে সমৃদ্ধ হওয়ায় সারা দেশে ব্যাপক সুনাম রয়েছে কক্সবাজারের সুপারির। এবার আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এখানে সুপারির ফলন বেশ বেড়েছে এবং দেশের চাহিদা মিটিয়ে তা মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে রপ্তানিও হচ্ছে। এদিকে চাহিদা বেশি থাকায় সুপারির দামও ভালো পাচ্ছেন চাষিরা। 

জেলায় সবচেয়ে বেশি সুপারি উৎপন্ন হয় উখিয়া উপজেলার সোনারপাড়া এবং টেকনাফের সাবরাং এলাকায়। স্থানীয় একেকটি হাটে অন্তত ৭০ থেকে ৮০ লাখ টাকার সুপারি বিক্রি হচ্ছে। চাষিরা জানান, পাঁচ বছর আগেও প্রতিটি কাঁচা সুপারি বিক্রি হতো দু-তিন টাকায়। এখন ছয় থেকে আট টাকায় বিক্রি হচ্ছে। চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার অঞ্চলে অতিথি আপ্যায়নে পানের খিলির ঐতিহ্য রয়েছে। বিয়েসহ সামাজিক নানা অনুষ্ঠানে রাখা হয় পানের বাটা। পানের সঙ্গে সুপারি মিশিয়ে তৈরি হয় পানের খিলি।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য মতে, জেলার উখিয়া, টেকনাফ, রামু, কক্সবাজার সদর, ঈদগাঁও,  চকরিয়া, পেকুয়া উপজেলাসহ বিভিন্ন এলাকায় আট হাজার ৬৪৫ একর জমিতে সুপারি বাগান রয়েছে। কৃষি বিভাগ কাঁচা সুপারির পরিবর্তে শুকনা সুপারির হিসাব রাখে। কৃষি বিভাগের হিসাব মতে, আট হাজার ৬৪৫ একর জায়গায় শুকনা সুপারি উৎপাদিত হবে ১২ হাজার ৯৬৭ মেট্রিক টন। প্রতি কেজি শুকনা সুপারির দাম ৩০০ টাকা ধরলে ১২ হাজার ৯৬৭ মেট্রিক টনের দাম হয় ৩৯০ কোটি টাকা। পাঁচ কেজি কাঁচা সুপারি থেকে পাওয়া যায় এক কেজি শুকনা সুপারি। তবে চাষিরা জানান, প্রতি একর জায়গায় কাঁচা সুপারি উৎপাদিত হয় ১৮ দশমিক ৫ মেট্রিক টন। কৃষকদের হিসাব মতে, আট হাজার ৬৪৫ একর জায়গায় সুপারি উৎপন্ন হবে এক লাখ ৫৯ হাজার ৯০০ মেট্রিক টন, যার বাজারমূল্য প্রায় ৬০০ কোটি টাকা।

উখিয়ার জালিয়াপালং ইউনিয়নের ইনানী উপকূলের গ্রামগুলো সুপারি বাগানে ভরপুর। সম্প্রতি ওই এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, প্রতিটি গাছে সুপারি ঝুলে রয়েছে। চাষি গিয়াস উদ্দিনের বাড়ির চারপাশে সুপারিগাছ আছে ৪৩০টি। প্রতিটি গাছে ৫০ থেকে ২০০টি সুপারি ফলন হয়েছে। 

তিনি বলেন, অক্টোবর মাস থেকে গাছের সুপারি পাকতে শুরু করেছে। বেচাবিক্রিও তখন থেকে শুরু হয়। ২৫ নভেম্বর পর্যন্ত গত দুই মাসে তিনি চার লাখ টাকার সুপারি বিক্রি করেছেন। গাছে আরো চার-পাঁচ লাখ টাকার সুপারি আছে। সব মিলিয়ে তিনি এবার ৯ লাখ টাকার সুপারি বিক্রি করার আশা করছেন। গত বছর বাগানের সুপারি বিক্রি করে সাত লাখ টাকা পেয়েছিলেন বলেও জানান তিনি।

ইনানী সমুদ্রসৈকতের পাশে সোনারপাড়া গ্রাম। এই গ্রামের প্রতিটি ঘরে সুপারি বাগান রয়েছে। গাছ থেকে সুপারি সংগ্রহ করে, সেসব সুপারি ব্যাটারিচালিত ইজি বাইক (টমটম) এবং জিপ গাড়িতে বোঝাই করে বিক্রির জন্য আনা হয় সোনারপাড়া বাজারে। সপ্তাহের প্রতি রবি ও বুধবার দুই দিন সুপারির বড় বাজার বসে। প্রতি হাটে অন্তত ৭০ থেকে ৮০ লাখ টাকার সুপারি বিক্রি হয়। বেশির ভাগ সুপারি সরবরাহ হয় কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, ঢাকা, রাজশাহী, রংপুর, দিনাজপুর, কুড়িগ্রাম, নীলফামারী, বগুড়া, ময়মনসিংহ, নেত্রকোনা, কিশোরগঞ্জ, কুমিল্লা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, হবিগঞ্জ, সুনামগঞ্জ, সিলেট, নোয়াখালী, ফেনীসহ বিভিন্ন জেলায়।

সোনারপাড়া বাজারে গিয়ে দেখা যায়, লাল সুপারিতে ভরপুর বাজার। প্রতি পণ (৮০টি) সুপারি বিক্রি হচ্ছে ৩৫০ থেকে ৪৫০ টাকায়। সুপারি চাষি মহিউদ্দিন বলেন, সকাল ৭টা থেকে সুপারি বিক্রি শুরু হয়। দুপুর ১২টা পর্যন্ত তিনি ১০ লাখ টাকার সুপারি বিক্রি করেছেন। গত বছর প্রতি পণ সুপারি বিক্রি করেন ২৮০ থেকে ৩৮০ টাকায়। এবার ১০০ থেকে ১৫০ টাকা বেশি পাচ্ছেন। তিনি বলেন, সোনারপাড়ার সুপারি আকারে বড়, স্বাদেও মজা। এই সুপারি ঢাকা ও রাজশাহী অঞ্চলে ৭-৮ টাকায় বিক্রি হয়।

সুপারি কিনতে আসা ঢাকার ব্যবসায়ী আমির জাফর বলেন, সোনারপাড়ার সুপারির ভেতরে কষ কম থাকে, আকারেও বড়। ১০ থেকে ১৫টি সুপারিতে এক কেজি ওজন হয়। বড় আকারের সুপারি বিদেশে রপ্তানি করা হয়। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি রাসেল চৌধুরী বলেন, উখিয়া উপজেলার হলদিয়া পালং, জালিয়াপালং, ইনানী, সোনারপাড়া, রুমখা, মরিচ্যা, চেপটখালীসহ অন্তত ১২ থেকে ১৫টি গ্রামে সুপারির চাষ হয়। ধারণা করা হচ্ছে, চলতি মৌসুমে অন্তত ৬০ কোটি টাকার সুপারি বিক্রি হবে।

সোনারপাড়ার পাশাপাশি মরিচ্যা, কোটবাজারেও সুপারি বিক্রি করতে দেখা যায়। স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন, এবার সুপারির দাম ভালো পাওয়ায় অনেকে নতুন করে সুপারির বাগান করছেন।

স্থানীয়  চাষি আব্দুল আজিজ বলেন, সাবরাং ইউনিয়নের অন্তত ৪০০ পরিবারে সুপারিবাগান রয়েছে। ৯০ শতাংশ পরিবার সুপারি বিক্রির আয়ের ওপর নির্ভরশীল। প্রতি সপ্তাহে এসব গ্রাম থেকে ২০-২৫ ট্রাক সুপারি দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সরবরাহ করা হয়। 

ব্যবসায়ীরা বলেন, টেকনাফ, রামু, ঈদগাঁও, চকরিয়ার অন্তত ২৩টি বাজার থেকে শতাধিক ব্যবসায়ী সুপারি কেনেন। সপ্তাহে গড়ে ২২৫ ট্রাক সুপারি দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করছেন। সুপারি বেচাবিক্রি আরো বেশ কিছুদিন চলবে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা আশীষ কুমার বলেন, আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবার সুপারির ফলন ভালো হয়েছে। সুপারির চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় দামও বেশি পাওয়া যাচ্ছে। এ ছাড়া ভারত ও মিয়ানমার থেকে সুপারি পাচার বন্ধ থাকায় স্থানীয় চাষিরা লাভবান হচ্ছেন। তিনি বলেন, সারা বছর গাছে সুপারি ফলন হলেও সুপারি উৎপাদনের ভরা মৌসুম ধরা হয় সেপ্টেম্বর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত চার মাস। শুকনা সুপারির চেয়ে কাঁচা সুপারি বিক্রিতে চাষিরা বেশি লাভবান হন।

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫