৬ বছর আগে মারা যাওয়া আ.লীগ নেতা হলেন আসামি

ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০৩ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:৩২

মৃত আওয়ামী লীগ নেতা শরিফুল হাসান বাপ্পী। ছবি: ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি
শরিফুল হাসান বাপ্পী (২৯) মারা গেছেন ছয় বছর আগে। তিনি ঠাকুরগাঁও জেলা শহরের বাজারপাড়ার বাসিন্দা আব্দুল মান্নানের ছেলে। ছিলেন ঠাকুরগাঁও পৌরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। ছাত্র-জনতার আন্দোলন চলাকালে বিএনপি নেতাকর্মীদের ওপর হামলা ও দলীয় কার্যালয়ে অগ্নিসংযোগের অভিযোগে সদর থানায় গত বুধবার রাতে করা মামলায় মৃত বাপ্পী হয়েছেন ২১২ নম্বর আসামি।
জেলা
বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ও বাংলাদেশ হিন্দু
বৌদ্ধ খ্রিস্টান কল্যাণ ফ্রন্ট ঠাকুরগাঁও জেলার সাধারণ সম্পাদক সত্যজিৎ কুমার কুন্ডু এ মামলার বাদী।
মামলার
আসামিদের মধ্যে রয়েছেন- জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক দীপক কুমার রায়, সংরক্ষিত নারী আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও জেলা মহিলা
আওয়ামী লীগের সভাপতি দ্রৌপদী আগরওয়ালা, জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সন্তোষ আগরওয়ালা, জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও জেলা যুবলীগের
সভাপতি আবদুল মজিদ, সাবেক পৌর মেয়র আঞ্জুমান আরা বেগম, পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি একরামুল হক প্রমুখ।
এ
ছাড়াও বাংলাদেশ হিন্দু
বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক প্রবীর কুমার গুপ্ত ও বাংলাদেশ পূজা
উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক তপন কুমার ঘোষসহ ২৯৪ জনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাতপরিচয় আরও ৪০০ থেকে ৫০০ জনকে আসামি করেছেন বাদী।
মামলা
সূত্রে জানা গেছে, গত বছরের
৪ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলন চলাকালে ঠাকুরগাঁও শহরের চৌরাস্তায় জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক দীপক কুমার রায়ের নেতৃত্বে দলের নেতাকর্মীরা রড, ধারালো ছুরি, রামদা, চায়নিজ কুড়াল, পিস্তল, শটগান, বোমা-বারুদ নিয়ে হামলা চালান। তারা আন্দোলনের পক্ষে থাকা ছাত্র-জনতাকে ছত্রভঙ্গ করতে ককটেল নিক্ষেপ করতে থাকেন। এক পর্যায়ে হামলাকারীরা
শটগান ও পিস্তলের গুলি
ছোড়েন। এতে ছয়জন আন্দোলনকারী গুলিবিদ্ধ হন। এ ছাড়া আওয়ামী
লীগের নেতাকর্মীরা ছুরি, রড, রামদা, চায়নিজ কুড়াল দিয়ে কুপিয়ে আন্দোলনকারীদের আহত করেন। পরে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা জেলা বিএনপির কার্যালয়ের সামনে গিয়ে ককটেল বিস্ফোরণ করে আতঙ্ক সৃষ্টি করেন। পেট্রল ছিটিয়ে বিএনপির কার্যালয়ে আগুন ধরিয়ে দেন। আগুনে কার্যালয়ের ভেতরে থাকা পাঁচটি ল্যাপটপ, দুটি টেলিভিশন, একটি ফ্রিজ, তিনটি এসি, চেয়ার-টেবিলসহ কাগজপত্র পুড়ে যায়।
শরিফুল
হাসানের পরিবারের সদস্যরা জানান, বাপ্পীর পুরো নাম শরিফুল হাসান। এ সময় তারা
শরিফুল হাসানের মৃত্যুসনদ দেখান।
সেখানে
২০১৮ সালের ২৯ এপ্রিল দিনাজপুরের
এম আব্দুর রহিম মেডিকেল কলেজে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয় বলে উল্লেখ
করা হয়েছে। মৃত্যুর কারণ দেখানো হয়েছে ‘ব্রেন স্ট্রোক’।
মৃত
শরিফুল হাসানের
বড় ভাই সাইদুর হাসান বলেন, একজন মৃত ব্যক্তি কীভাবে হামলা চালাতে পারে? সে সেই কবে
মারা গেছে। ৪ আগস্টের হামলার
ঘটনায় মামলায় মৃত ব্যক্তি কীভাবে আসামি হতে পারে, আমার বুঝে আসে না।
এ
বিষয়ে মামলার বাদী সত্যজিৎ কুমার কুন্ডু বলেন, ‘আমি নই, মামলাটি দল করেছে। দলের
লোকজন মামলা প্রস্তুত করেছে, আমি শুধু স্বাক্ষর করেছি। স্বাক্ষর করেই ঢাকা চলে এসেছি।’
ঠাকুরগাঁও
সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শহিদুর রহমান বলেন, ‘মামলাটি তদন্ত করে দেখা হবে। তদন্তেই সব বের হয়ে
আসবে। এতে মৃত কোনো ব্যক্তি আসামি হলে তাদের নাম বাদ যাবে। একটি ঘটনার বিষয়ে মামলা হলে সেই ঘটনার সত্যতা বেরিয়ে আসে পুলিশের তদন্তে। আমরা ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করব।’
সুশাসনের
জন্য নাগরিক (সুজন) ঠাকুরগাঁওয়ের সাবেক সভাপতি অধ্যাপক মনতোষ কুমার দে বলেন, এখন
রাজনৈতিক মামলাগুলো উদ্দেশ্যমূলকভাবে করা হয়। মামলা করতে হবে, সেই জন্যই করা হচ্ছে। মামলায় দেখা যায় ৪০০ থেকে ৫০০ জনকে আসামি করা হচ্ছে। গণহারে মামলা করলে তো যাচাই-বাছাই
করার সুযোগ থাকে না। অযথা কোনো মানুষকে হয়রানির জন্য মামলা করা অবশ্যই দুঃখজনক। মৃত মানুষকে আসামি করার বিষয়টি কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না।