শেরপুরে ৩য় লিঙ্গের আবাসন কেন্দ্রের বেহাল দশা, সরকারি সাহায্যের দাবি

শেরপুর প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০৭ জানুয়ারি ২০২৫, ১৮:৫৭

শেরপুরে অবস্থিত তৃতীয় লিঙ্গের জনগোষ্ঠী হিজড়াদের আবাসন কেন্দ্র। ছবি: সংগৃহীত
অযত্ন আর অবহেলায় বেহাল দশায় পড়ে আছে শেরপুরে অবস্থিত তৃতীয় লিঙ্গের জনগোষ্ঠী হিজড়াদের একমাত্র আবাসন কেন্দ্রটি। সম্প্রতি রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর ওই পল্লীতে দুর্বৃত্তরা হামলা চালায়। এতে আবাসন কেন্দ্রটির অনেক জিনিসপত্র খোয়া গেছে বলে অভিযোগ করেন সেখানে বসবাসরত হিজড়ারা।
জানা যায়, ২০২১ সালের ৭ জুন শেরপুর সদর উপজেলার কামারিয়া ইউনিয়নের আন্ধারিয়া সুতিরপাড় এলাকায় জেলা প্রশাসনের উদ্দ্যোগে ২ একর জমির ওপর নির্মিত হয় হিজড়াদের এই আবাসন পল্লীটি।
সেই সময় হিজড়া জনগোষ্ঠির ৪০ জনের মাঝে জমি সহ ঘরবাড়ি বুঝিয়ে দেন তৎকালীন জেলা প্রশাসক আনারকলি মাহবুব।
সেখানে বসবাসরত হিজড়ারা জানায়, রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর গত ৪ সেপ্টেম্বর দুর্বৃত্তরা হামলা করে ঘরের আসবাবপত্র গ্যাসের চুলা টিউবওয়েলসহ সমস্ত কিছু লুট করে নিয়ে যায়। লুট হওয়া মালামাল ফেরত এবং দুর্বৃত্তদের বিচারের দাবিতে মাঠে নামে হিজড়া সম্প্রদায়।
তারা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে অবস্থান কর্মসূচি, মানববন্ধন, মিছিল করেও কোন প্রতিকার পাননি। পরবর্তীতে হিজড়া পল্লীতে হামলার বিষয়টি তৎকালীন শেরপুর জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক হযরত আলীর নজরে আসলে তিনি দলীয় নেতাকর্মীদের সাথে নিয়ে হিজড়াদের পুনরায় আবাসন কেন্দ্রটিতে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করে দেন। বর্তমানে অনেকটাই কষ্টে বসবাস করতে হচ্ছে এখানকার হিজড়া জনগোষ্ঠীদের।
হিজরা আঁখি আক্তার বলেন, ভিক্ষাবৃত্তি নয়, আমরা কর্মের মাধ্যমে এগিয়ে যেতে চাই। আমাদেরকে যেন কর্মের সুযোগ করে দেয় সেটাই আমাদের সরকারের কাছে দাবি জানাই।
শেরপুর জেলা হিজড়া কল্যাণ সমিতির সভাপতি নিশি সরকার বলেন, জেলা প্রশাসন থেকে আমাদেরকে আবাসনের ব্যবস্থা করে দিলেও ৪ সেপ্টেম্বর দুর্বৃত্তদের হামলার পর প্রশাসন আমাদের কোনো খোঁজখবর নেয়নি। বিএনপি নেতা হযরত আলী অভিভাবকের দায়িত্ব নিয়ে পুনরায় আমাদেরকে আবাসনে ফিরিয়ে দিয়েছেন। কিন্তু একসময় আমরা সরকারি যে সমস্ত সুযোগসুবিধা পেতাম এখন আর আমরা পাচ্ছি না। আমাদের হিজড়াদের দাবি সরকার যেন আমাদেরকে পুনরায় সরকারি সুযোগসুবিধা দিয়ে আমাদেরকে সহযোগিতা করেন।
শেরপুর জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক হযরত আলী বলেন, হিজড়া পল্লীতে দুর্বৃত্তদের হামলার খবরটি শোনার পর আমি দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে তাদেরকে পুনরায় পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করেছি, আসবাবপত্র কিনে দিয়েছি এবং নগদ টাকাও দিয়েছি। বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উচিত তাদেরকে স্থায়ীভাবে কর্মের ব্যবস্থা করে দেওয়া।
সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ ভূঁইয়া বলেন, শেরপুর সদর উপজেলার কামারিয়া ইউনিয়নের আন্ধারিয়া সুতিরপাড় এলাকায় অবস্থিত তৃতীয় লিঙ্গের আবাসন কেন্দ্রটি নানান সমস্যায় জর্জরিত। এটি প্রশাসনের দৃষ্টিগোচর হয়েছে। তৃতীয় লিঙ্গের কেউ যদি সমস্যাগুলো লিখিতভাবে প্রশাসন বরাবর জানায় তাহলে প্রশাসন তা ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।