পুঠিয়ায় ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে চলছে অবৈধ পুকুর খনন, প্রশাসন নীরব

রাজশাহী প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০৭ জানুয়ারি ২০২৫, ২১:৩২

সাধারণ মানুষকে জিম্মি করে জোরপূর্বক জমি নিয়ে অবৈধ পুকুর খনন চলছে। ছবি: সংগৃহীত
রাজশাহী পুঠিয়া উপজেলায় প্রশাসনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে অবৈধ পুকুর খননের হিড়িক পড়েছে। প্রশাসনের সঙ্গে সমঝোতা করে দিন-রাত তিন ফসলি জমিতে পুকুর খনন হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
সাধারণ মানুষকে জিম্মি করে জোরপূর্বক জমি নিয়ে অবৈধ পুকুর খনন করছে। এমন অভিযোগ তুলে আজ মঙ্গলবার (৭ জানুয়ারি) দুপুরে রাজশাহী সদরের একটি পত্রিকা অফিসে ভুক্তভোগীরা সাংবাদিক সম্মেলনও করেছেন।
অপরদিকে ২৬ ডিসেম্বর আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী ওই স্থানে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে। কিন্তু আইন অমান্য করে শিলমাড়িয়ার ইউপির সড়গাছির বিলে প্রায় একশত বিঘা জমিতে বরেন্দ্র সেচ প্রকল্পের পাইপ উঠিয়ে ভেকু হান্নান নামের আওয়ামী লীগ কর্মী এস্কেভেটর (ভেকু) দিয়ে পুকুর খনন করছে বলে জানা গেছে।
ভেকু দিয়ে মাটি খননকারী এই হান্নান বিগত আ.লীগের আমলে নেতাকর্মীদের পুকুর খনন করে দিয়ে ছিল। এখন বিএনপি নেতা এবং নেতাদের কাছের মানুষদের পুকুর খনন করে দেওয়ার চুক্তি করছে।
উপজেলাবাসীরা বলছেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সময়ে কিভাবে অবৈধ পুকুর খনন করা সম্ভব? অবশ্য উপজেলা প্রশাসনের নিকট কোনো ব্যক্তি অভিযোগ দিলে এস্কেভেটরের (ভেকু) ব্যাটারি খুলে আনতে দেখা যায়। পরবর্তী সময়ে দুই/একদিনের ভেতর আবার মোটা অংকের টাকার সমঝোতা করে ব্যাটারিসহ সকল টুলবক্স দিয়ে দেওয়া হয় বলে একাধিক সূত্রে জানা গেছে।
উপজেলা প্রশাসন এবং থানা পুলিশের নাকের ডগায় প্রকাশ্যে প্রতিনিয়ত জমির আকার পরিবর্তন করে পুকুর খনন করা হচ্ছে। কিন্তু প্রশাসন কোনোরকম কঠোর পদক্ষেপ গ্রহন করছে না। থানা পুলিশ বলছে পুকুর খনন বন্ধ করার দায়িত্ব উপজেলা প্রশাসনের। আর উপজেলা প্রশাসন বলছে, আমরা রাতে গিয়ে পুকুর খনন বন্ধ করতে পারবো না! সরেজমিনে পরিদর্শন করে অভিযুক্ত পুকুর খননকারীদের ভ্রাম্যমান আদালতে না দিয়ে রাতের আধারে ভূমিদস্যুদের সাথে সমঝোতা করছে এমনটাই বলছেন স্থানীয়রা।
শিলমাড়িয়া ইউনিয়নের হোসেন আলি হোসেন বলেন, আগে আ. লীগের নেতারা পুকুর খননের ব্যাপারগুলি নিয়ন্ত্রণ করত। এখন খোলস পাল্টে বিএনপির নাম ভাঙ্গিয়ে পুকুর খনন করছে। পুকুর মালিকরা বর্তমানে এই খোলস পাল্টানো দালালদের নিকট জিম্মি।
স্থানীয়রা বলছে, শুধুমাত্র অনেক টাকা লেনদেনের কারণে পুকুর খননের কার্যক্রম কোনোভাবেই থামছে না। তাই উপজেলা জুড়ে তিন ফসলি জমিতেই পুকুর খনন করা হচ্ছে।
আবুল কাশেম আলি নামক ব্যক্তি বলেন, দেশের মানুষ কি শুধু শুধু মাছ খেয়ে জীবনধারণ করবে। সকল ফসলেরও প্রয়োজন রয়েছে। তিনি আরো বলেন, যারা পুকুর খনন করে তারা সমাজের প্রভাবশালী ব্যক্তি, তাদের বিরুদ্ধে গিয়ে এলাকায় থাকা যাবে না।
শিলমাড়িয়া ইউনিয়নের আবুল কালাম বলেন, যেভাবে পুকুর খনন চলছে, এক সময় এই ইউনিয়নে কোনো ফসলি জমি থাকবে না। তারপরও যত্রতত্র পুকুর খননের ফলে এলাকায় ব্যাপক জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। ইতোমধ্যে শিলমাড়িয়া ইউপির বেশিরভাগ জমি পুকুর খনন করা হয়ে গিয়েছে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সময় বেশ কিছুদিন বন্ধ ছিল পুঠিয়ায় পুকুর খনন। এদিকে উপজেলার ২০টি স্থানে পুকুর খনন করার জন্য খননকারী দালালরা, নেতা এবং প্রশাসনের নিকটে দৌড়ঝাপ করতে দেখা যাচ্ছে। আর মাটি বহন করতে গিয়ে সরকারের কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মানকৃত গ্রামীণ সড়কগুলো চোখের সামনে দ্রুত নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা স্মৃতি রানী সরকার বলেন, কৃষি জমিকে পুকুরে রূপান্তরিত করার জন্য আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে তৈরি করা আমাদের একটি কমিটি আছে। সেখানে প্রথমে আবেদন জমা দিতে হয়। তারপরে আমরা সে জমি পরিদর্শন করে পুকুর খনন করা যাবে কিনা না, তা পরিদর্শন শেষে জানিয়ে দেবার নিয়ম থাকলেও কোনোসময় কেউ আমাদের কাছে পুকুরসংক্রান্ত বিষয়ে আসেন না। আমাদের দৃষ্টিকোণ থেকে সবগুলো পুকুর খনন অবৈধ।
এ ব্যাপারে উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তা (ইউএনও) এ কে এম নুর হোসেন নির্ঝর বলেন, আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে। কিন্তু তারা রাতের-আধারে পুকুর খননের কাজ করছে। গভীর রাতে গিয়ে অভিযান পরিচালনা করতে পারবো না! ১৪৪ ধারা বাস্তবায়ন করার দায়িত্ব উপজেলা প্রশাসনের নয়, এটি থানা-পুলিশের দায়িত্ব।