পর্যটকদের ভিড়ে মুখরিত কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত

কক্সবাজার প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১৮ জানুয়ারি ২০২৫, ১৫:১৪
-678b7101c822a.jpeg)
কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে পর্যটকে মুখরিত। ছবি: কক্সবাজার প্রতিনিধি
বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত কক্সবাজারে ছুটে আসছেন লাখো পর্যটক । গত তিন দিনে অন্তত সাড়ে ৩ লাখ পর্যটকের এসেছেন কক্সবাজারে। সারাদেশ থেকে ভ্রমণের জন্য আসা নানা শ্রেণি-পেশার মানুষের উপস্থিতিতে কক্সবাজার এখন উৎসবের নগরীতে পরিণত হয়েছে।
গতকাল শুক্রবার (১৭ জানুয়ারি) বিকেলে সমুদ্র সৈকতের সুগন্ধা, লাবনী ও কলাতলী পয়েন্টে দেখা যায়, চারদিকে শুধু মানুষ আর মানুষ। অনেকে সমুদ্রের নোনাজলে শরীর ভিজিয়ে আনন্দ উল্লাসে মেতেছিলেন। এছাড়া সমুদ্র স্নানের পাশাপাশি টিউবে গা ভাসিয়ে মেতে উঠেন। আবার অনেকে বালুচরে বসে প্রকৃতি আর হিমেল হাওয়ায় ভাসছেন। কেউ কেউ ঘোড়া বা কিটকট চেয়ারে বসে একান্ত সময় পার করছেন। এভাবে সবখানে বিরাজ করছে আনন্দ-উৎসব।
শুক্রবার ছুটির দিনে অতিরিক্ত পর্যটক আসায় শহরের প্রায় রাস্তা ঘাটে জ্যাম লেগেছিল। স্থানীয় ও পর্যটকরা গন্তব্যে ফিরতে ভোগান্তি পোহাতে হয়েছিল।
পর্যটক মিলন তালুকদার বলেন, ‘ছুটির দিন। তাই সমুদ্র সৈকতে অনেক মানুষ। সাগর তীরে হাঁটার মতোও সুযোগ হচ্ছে না। তবে অনেক পর্যটক এক সাথে আসায় বেশ ভালো লাগছে।’
ঢাকা থেকে আসা পর্যটক মীর রেজাউল বলেন, ‘কর্মব্যস্ত জীবনে সব সময় কক্সবাজার আসা হয়ে ওঠে না। সাপ্তাহিক ছুটির দিনকে কেন্দ্র করে দুদিনের জন্য কক্সবাজার আসা। কক্সবাজার আসা হয় মূলত মানসিক প্রশান্তির জন্য।’
পর্যটক শারমিন চৌধুরী বলেন, ‘শীতকাল চলছে- তাই কক্সবাজার ছুটে আসা। এখানে ঘোড়ার পিঠে, বিচ বাইক ও জেড স্কিতে চড়তে এবং ছবি তুলতে বেশ ভালো লাগছে।’
স্থানীয় আবুল কাশেম সিকদার বলেন, অতিরিক্ত পর্যটক আসায় রাস্তাঘাটে তীব্র যানজট ও ভিড় লেগেই থাকে। বিশেষ করে বৃহস্পতিবার-শনিবার পর্যন্ত তিন দিন সকাল-সন্ধ্যা যানজটের কবলে পড়েন স্থানীয় ও পর্যটকরা। অনেক সময় জ্যামে পড়ে সঠিক সময়ে গন্তব্যে পৌঁছানো কঠিন হয়ে উঠে।
পর্যটন সংশ্লিষ্টরা জানান, শহরের প্রায় ৫ শতাধিক হোটেল-মোটেল ও রিসোর্ট আগামী ২০ জানুয়ারি পর্যন্ত বুকিং হয়ে আছে। ধারণা করা হচ্ছে- বৃহস্পতিবার, শুক্রবার ও শনিবার কক্সবাজারে অন্তত সাড়ে ৩ লাখ পর্যটক এসেছে। পর্যটক বেশি আসায় ব্যবসা-বাণিজ্যে সুফল পাচ্ছেন ক্ষুদ্র, মাঝারি ও বড় ব্যবসায়ীরা।
কলাতলী ‘মেরিন ড্রাইভ হোটেল রিসোর্ট মালিক সমিতি’র সাধারণ সম্পাদক মুকিম খান বলেন, ‘পর্যটকদের পদচারণায় মুখরিত কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে প্রতিদিন আসছে লাখ লাখ মানুষ। অধিকাংশ হোটেলের কক্ষ বুকিং রয়েছে। আমরা চেষ্টা করছি, পর্যটকদের সুবিধায় হোটেলে কক্ষ ভাড়ায় সাধ্য মতো ডিসকাউন্ট দেয়ার।
‘সি সেফ লাইফ গার্ড সংস্থা’র সিনিয়র লাইফ গার্ড কর্মী মোহাম্মদ ইউসুফ বলেন, ‘প্রচুর পর্যটক। সৈকতের শৈবাল থেকে কলাতলী পর্যন্ত ৩ কিলোমিটার সৈকতে শুধু মানুষ আর মানুষ । যার মধ্যে বেশিভাগই পর্যটক সমুদ্র স্নান করছে। তবে সাগরের ঢেউয়ের তীব্রতা বেশি থাকায় পর্যটকদের সমুদ্র স্নানে সতর্ক করা হয়েছে। টাওয়ার থেকে পর্যবেক্ষণ, বালিয়াড়ি টহল ও বোট নিয়ে সাগরের নোনাজলে সার্বক্ষণিক নজরদারি রয়েছে।’
কক্সবাজার ট্যুরিস্ট পুলিশের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার আবুল কালাম বলেন, ‘ছুটির দিনে অধিক পর্যটকের আগমনে আমরাও সচেষ্ট হয়ে কাজ করছি। তবে এখন পর্যটকদেরও সচেতনতার সঙ্গে বাচ্চাদের সঙ্গে রেখে চলাচল করতে হবে। পর্যটকদের সেবায় সর্বদাই আমরা সব ইতিবাচক কাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকব।’
কক্সবাজার ট্রাফিক পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জসিম উদ্দিন চৌধুরী বলেন, ‘এক সঙ্গে অনেক পর্যটক আগমন করায় যানজট বেড়েছে। সমস্যা নিরসনে শহরের বিভিন্ন স্থানে দায়িত্ব পালন করছে আমাদের টিম।’