আ. লীগ গণহত্যাকারী সিন্ডিকেট: জামায়াতে আমির

বরিশাল প্রতিনিধি
প্রকাশ: ২১ জানুয়ারি ২০২৫, ১৯:৪৩

জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান। ছবি- বরিশাল প্রতিনিধি
জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, আওয়ামী লীগ প্রমাণ করে দিয়েছে তার কোনো রাজনৈতিক দল নয়, বরং গণহত্যাকারী একটা সিন্ডিকেট। তারা আমাদের রাজনীতি থেকে নিষিদ্ধ করেছিল,আল্লাহ্ তাদেরকে মানুষের মনের মধ্যে নিষিদ্ধ করেছে।
তিনি বলেন, গণহত্যাকারী এই দল বাংলাদেশের নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারবে না। আগে গণহত্যার বিচারটা হোক, ক্ষতিগ্রস্ত লোকেরা তাদের ইনসাফটা পাক। তারপর তারাই রায় দিবে তারা (আওয়ামী লীগ) এই দেশে রাজনীতি করতে পারে কি না।
আজ মঙ্গলবার (২১ জানুয়ারি) বিকেলে বরিশাল নগরীর কেন্দ্রীয় হেমায়েত উদ্দিন ঈদগাহে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কর্মী সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। বরিশাল জেলা ও মহানগর জামায়াত এই কর্ম সম্মেলন আয়োজন করে।
শফিকুর রহমান বলেন, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে হাজার হাজার মানুষকে হত্যা করা হয়েছে। আহত এবং নিহত যারা হয়েছে, এই সংখ্যাটা ৩৬ হাজারের বেশি হবে। দুই চোখ হারিয়ে যারা অন্ধ হয়েছে সেই সংখ্যাটা ৫০০ হবে। অবচেতন অবস্থায় বাসা কিংবা হাসপাতালের শয্যায় কাতরাচ্ছে এমন সংখ্যাটা ২৫০ এর অধিক। যারা আর কোনদিনই শয্যা ছেড়ে উঠে দাঁড়াতে পারবে না। এক চোখ হারিয়েছে এমন সংখ্যা ৭০০। এই সরকারের কাছে আমরা দাবি জানাবো জাতীয় বীর হিসেবে এদের মর্যাদা দেওয়ার জন্য।
তিনি বলেন, এতো এতো ঘটনা কেনো ঘটলো। তারা দাম্ভিক ছিলেন। বরই অহংকারী ছিলেন। মানুষকে, বিভিন্ন দলকে তারা তুচ্ছ-তাচ্ছিল করেছে। মানুষ বলে তারা কাউকে সম্মান করতো না। দুনিয়ার কিছুটা পাওনা তারা পেয়েছেন। কিন্তু পাওনা তাদের বাকি আছে। যেহেতু তারা গণহত্যাকারী নেত্রী (শেখ হাসিনা) এবং দল সেহেতু আমরা চাই, গণহত্যাকারী দল এবং প্রত্যেকটি ব্যক্তির বিচার হোক। ন্যায় বিচার হোক, দেশের প্রচলিত আইনে বিচার হোক।
বিদেশে আত্মগোপনকারীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আপনারা যারা বিদেশে আছেন, যদি দেশকে ভালোবাসেন তাহলে আপনারা চলে আসেন। অসুবিধা নেই। আপনাদের আমলে তো আমরা দফায় দফায় জেলে গিয়েছি, জেলে থেকেছি। আপনারা আসুন, দেখুন, আমাদেরকে কিভাবে জেলে রেখেছিলেন। এখন না হয় আপনারা একটু দেখার সুযোগ পেলেন।
জামায়াত আমির বলেন, আপনারা মিথ্যা মামলায় সাজানো সাক্ষী দিয়ে পাতানো আদালতে আমাদের নেতৃবৃন্দকে ফাঁসি দিয়েছেন, খুন করেছেন। কিন্তু আপনারা তো প্রকাশ্য দিবালোকে কুপিয়ে খুন করেছেন। যা দেশবাসী সাক্ষী, বিশ্ববাসী সাক্ষী। আপনারা তো খুন করতে করতে এমনো করেছেন, লাশ গুম করতে তাড়াহুরো করে ট্রাকের ওপর একটার পর একটা ছুড়ে মেরেছেন। প্রত্যেকটা লাশে পেট্রোল ঢেলে আগুণ ধরিয়ে দিয়েছেন। কোথায় ছিল আপনাদের মানবিক সত্যাটুকু, কিভাবে আপনারা তা পারলেন। এই গণহত্যা সম্পন্ন করলেন। গণহত্যাকারী এই দল বাংলাদেশের নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারবে না। আমরা বলি আগে গণহত্যার বিচারটা হোক, ক্ষতিগ্রস্ত লোকেরা আগে তাদের ইনসাফটা পাক। তার পর তারাই রায় দেবে তারা (আওয়ামী লীগ) এই দেশে রাজনীতি করতে পারে কি না।
তিনি বলেন, তারা আমাদের কোরআনের পাখিদের ফাঁসি দিয়ে হত্যা করেছে, আমাদের নিবন্ধন কেড়ে নিয়েছে। শেষ পর্যন্ত রাজনৈতিক আত্মহত্যার চারদিন আগে আমাদের নিষিদ্ধ করেছে। যারা আমাদের পহেলা আগস্ট নিষিদ্ধ করলেন, আল্লাহ তাদের মানুষের মনের মধ্যে নিষিদ্ধ করেছেন।
‘অনেকে আন্দোলনের কৃতিত্ব মনে করেন, অনেকে আবার আন্দোলন মানতেও চায় না। আমরা বলি যে, আন্দোলনের মূল কৃতিত্ব আল্লাহর হাতে। তিনি জাতীর সন্তানদেরকে হিম্মত দিয়েছেন, বুক সোজা করে দাঁড়াতে। গুলি বুকে পেতে নেয়ার জন্য। যা আল্লাহর পছন্দ হয়েছে, মঞ্জুর হয়েছে, কবুল হয়েছে, তাই ফ্যাসিবাদের পতন হয়েছে।’
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে দক্ষিণাঞ্চলের উন্নয়ন প্রসঙ্গে আমিরে জামায়াত বলেন, বরিশালের সাথে ভোলার সড়ক যোগাযোগে সেতু নির্মাণের দাবি অযৌক্তিক নয়। আমার কাছে মনে হয় এটি বরিশাল এবং ভোলাবাসীর মৌলিক দাবি। মূল ভূখন্ডের সাথে ভোলাকে যুক্ত করতে হবে। সেই সাথে ভোলার গ্যাস দক্ষিণাঞ্চলের উন্নয়নে সরবরাহ করা হোক।
তিনি আরও বলেন, আমরা বলছি না তারা বরিশালের জন্য কিছু করেনি। আমরা বলতে চাই, যেই বিষয়গুলো সমাধান হয়নি অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সেগুলো সমাধান করতে হবে। আমরা চাই তারা শুরু করুক। পরবর্তী যে সরকার আসবে সেই সেরকার বাকিটা শেষ করবে। কিন্তু শুরুটা আপনাদের মাধ্যমে হোক। ভোলাকে উন্নত জেলা হিসেবে দেখতে চাই, বরিশাল বিভাগকে উন্নত বিভাগ হিসেবে দেখতে চাই। আমরা চাই নদী-নদী-খালের সাথে আরেকটি থালা যুক্ত হোক। সেই থালাটি হবে সোনার থালা।
বরিশাল মহানগর জামায়াতের আমির অধ্যক্ষ জহির উদ্দিন মুহা. বাবরের সভাপতিত্বে কর্মী সম্মেলনে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন- জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সদস্য ও সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান, মাওলানা আব্দুল হালিম, অ্যাডভোকেট মুয়ায্যম হোসাইন হেলাল, কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ও বরিশাল জেলা জামায়াতের আমির অধ্যাপক মোহাম্মদ আব্দুল জব্বার।
এছাড়াও বরিশাল জেলা ও মহানগর, উপজেলা, থানাসহ জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশের বিভিন্ন শাখার নেতৃবৃন্দ বক্তব্য রাখেন।