পিলখানা হত্যাকাণ্ড: ১৬ বছর পর বাড়ি ফিরছেন বিডিআর রবিউল

ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি
প্রকাশ: ২২ জানুয়ারি ২০২৫, ১৩:২৮

পিলখানা হত্যাকাণ্ডে কারাগারে থাকা বিডিআর রবিউল ১৬ বছর পর মুক্ত হয়ে বাড়ি ফিরছেন। অপেক্ষায় স্বজনরা। ছবি: ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি
পিলখানা হত্যাকাণ্ডের প্রায় ১৬ বছর কারামুক্তি পাবেন ঠাকুরগাঁওয়ে রবিউল ইসলাম (৩৪)। গত রোববার কেরানীগঞ্জের কেন্দ্রীয় কারাগারে স্থাপিত অস্থায়ী আদালতে ঢাকার বিশেষ ট্রাইব্যুনাল-১ যে ২৫০ জন বিডিআর সদস্যকে খালাস দিয়েছেন, তার মধ্যে একজন রবিউল ইসলাম।
রবিউলের ভাই শাহাজাহান আলী বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
রবিউল ইসলাম উপজেলার ভানোর ইউনিয়নের নেংটিহারা গ্রামের মৃত আব্দুর রহমানের ছেলে। রবিউলের কারামুক্তির খবরে খুশি মা, ভাই পরিবার ও আত্মীয়-স্বজন এবং গ্রামবাসী। কাল বৃহস্পতিবার (২৩ জানুয়ারি) কেরানীগঞ্জ কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে শুক্রবার (২৪ জানুয়ারি) সকালে বাড়ি ফেরার কথা রয়েছে তার। ১৬ বছর পর তার ফেরার খবরে পরিবারের সঙ্গে গ্রামের লোকজন তাকে একনজর দেখার অপেক্ষায় রয়েছে।
জানা গেছে, এসএসসি পাস করার পর চাকরি হয় রবিউলের। প্রশিক্ষণ শেষ করে যোগ দেন পিলখানায় বিডিআর সদর দপ্তরে। ২৬ দিনের মাথায় ঘটে পিলখানায় বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনা। এরপর থেকে কারাগারে রবিউল। প্রথমে একটি মামলায় ৭ বছর সাজাভোগ করেছেন রবিউল। সাজা খেটে বের হওয়ার কিছুদিন পরে আবার বিস্ফোরক আইনের একটি মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে তাকে কারাগারে রাখা হয়।
রবিউলের ভাই শাহাজাহান আলী জানান, চাকরি পাওয়ার পর বাবা ও মা খুব খুশি হয়েছিলেন। কিন্তু এক মাস যেতে না যেতেই সব খুশি ম্লান হয়ে যায়। চাকরি করে উপার্জন করে রবিউল আমাদের অর্থনৈতিকভাবে সহযোগিতা করার কথা ছিল। কিন্তু তার উল্টো হয়েছে। রবিউল কারাগারে থাকা অবস্থায় তাকে প্রতি মাসে ৫ হাজার টাকা খাওয়া খরচ দিতে হয়। কিছুদিন পরপর কাপড়-চোপড় কিনে দেওয়া, আদালতপাড়ায় অনেক খরচ করতে হয়েছে। তার পেছনে খরচ করতে করতে পুরো পরিবার প্রায় নিঃস্ব।
রবিউলের চাচা রেজাউল করিম জানান, ছেলের জন্য নানা দুশ্চিন্তায় অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন রবিউলের বাবা আব্দুর রহমান। ফিরবে ফিরবে বলে অপেক্ষায় থাকতে থাকতে গত বছরের অক্টোবর মাসে মারা গেছেন। তার মা সালেহা খাতুন এখনও অসুস্থ, বোনের বাড়িতে ঠাকুরগাঁও শহরে রেখে চিকিৎসা করাচ্ছেন। আজ যদি রবিউলের বাবা বেঁচে থাকতেন, রবিউলের বাড়ির ফেরার খবরে সবচেয়ে বেশি খুশি হতেন।
রবিউলের স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রবিউল আর ফিরবে না, এমনটাই ধরে নিয়েছিল পুরো পরিবার। গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান ফলে রবিউল ফিরছে বাড়িতে। ছোট সেই ছেলেটা এখন কত বড় হয়েছে, কেমন আছে। সেটা দেখার জন্য কবে ফিরবে- এমন খোঁজ খবর নিতে রবিউলের বাড়িতে লোকজনের আসা-যাওয়ার শুরু হয়েছে।
রবিউলের দাদি জমেলা বেগম জানান, ছুয়াডা কোন অপরাধে নি করে, তাহু ছুয়াডাক ১৬ বছর জেলত থাকিবা হইল। এতদিন বাড়িত থাকিলে বেহা করিলেহে, ওয়ার বাপ-মা নাতি-পুতির মুখ দেখিবা পারিলেহে।
রবিউল ইসলামকে আবার চাকরিতে পুনবর্হাল, একই সঙ্গে দীর্ঘদিন বিনা অপরাধে কারাগারে থাকা এবং তার পেছনে খরচ করতে গিয়ে আর্থিকভাবে যে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারটি। তার ক্ষতিপূরণ সরকারের কাছে দাবি করেছেন রবিউলের ভাই শাহাজাহান আলী।