আ. লীগ নেতার সম্পত্তি ক্রোক করে ব্যানার ঝুলিয়ে দিলো প্রশাসন

লালমনিরহাট প্রতিনিধি
প্রকাশ: ২৩ জানুয়ারি ২০২৫, ২২:২৯

সাখাওয়াত হোসেন সুমন খান। ছবি- লালমনিরহাট প্রতিনিধি
লালমনিরহাট জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক সাখাওয়াত হোসেন সুমন খানের ক্রোক করা সম্পত্তি বুঝে নিয়ে ব্যানার ঝুলিয়ে দিয়েছে জেলা প্রশাসন।
আজ বৃহস্পতিবার (২৩ জানুয়ারি) দুপুরে জেলা প্রশাসকের একটি টিম গিয়ে তার কয়েকটি ভবনসহ স্থাবর সম্পত্তি বুঝে নেয়।
এর আগে গত ৫ ডিসেম্বর সুমন খানের স্থাবর সম্পত্তি ক্রোক করার নির্দেশ দেয় আদালত। জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক সিনিয়র দায়রা জজ মোহা. আদীব আলী এ নির্দেশ নেন।
এছাড়াও গত অক্টোবরে সুমন খান এবং তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে অবৈধভাবে ২৪১ কোটি ৮৯ লাখ ২০ হাজার ৭০ টাকা ব্যাংকে রাখায় সিআইডি লালমনিরহাট জেলার এএসপি মোহাম্মদ আব্দুল হাই সরকার বাদী হয়ে মানিলন্ডারিং আইনে মামলা করেন।
এদিকে, গত ১১ নভেম্বর রাতে লালমনিরহাট থেকে পালিয়ে যাওয়ার সময় তিস্তা সেতুর টোল প্লাজা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। এরপর থেকে কারাগারে আছেন তিনি। আওয়ামী লীগ নেতা সুমন খানের বিরুদ্ধে হত্যা, অর্থ আত্মসাতসহ মোট ১৬টি মামলা রয়েছে।
জানা গেছে, চোরাচালান, চাঁদাবাজি, জমি দখল, মাদক, স্বর্ণ পাচার, হুন্ডি ব্যবসা আর হুমকি-ধামকিতে ১৫ বছরে কয়েকশ কোটি টাকা কামিয়েছেন আওয়ামী লীগ নেতা সাখাওয়াত হোসেন সুমন। পেটোয়া বাহিনী গড়ে তুলে হয়েছিলেন অপরাধ চক্রের গডফাদার। জ্ঞাত আয়ের বাইরে সুমনের ব্যাংক হিসাবে মিলেছে মোট ৪৬৫ কোটি টাকা লেনদেনের তথ্য।
সুমন খান ছিল লালমনিরহাটবাসীর কাছে এক আতঙ্কের নাম। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগে যোগ দিয়ে শুরু করেন মাদক, ভারতীয় গরু চোরাচালান ও হুন্ডি ব্যবসা। ২০০১ সালে রাজনৈতিক পট পরিবর্তন হলে বিএনপিতে যোগ দেন সুমন। ২০০৯ সালে পুনরায় ফেরেন আওয়ামী লীগে। নানা অপকর্ম করে গত ১৫ বছরে হয়েছেন অঢেল সম্পদের মালিক।
সম্প্রতি সুমন খানের জ্ঞাত আয়বহির্ভূত ৪৬৫ কোটি টাকা ব্যাংক হিসাবে লেনদেনের তথ্য পায় সিআইডি। যার মধ্যে ১৮৬ কোটি টাকার সন্ধান মেলে তার কর্মচারী তৌকির আহমেদ মাসুমের ব্যাংক হিসাবে। পরে মামলা করে সিআইডি।
লালমনিরহাট জেলার এএসপি মোহাম্মদ আব্দুল হাই সরকার জানান, সিআইডির মানিলন্ডারিং আইনের মামলায় আসামি সুমন খানকে আদালত ১৭ নভেম্বর শ্যোন অ্যারেস্ট মঞ্জুর করেন। ১৭ থেকে ১৯ নভেম্বর পর্যন্ত মোট ৩ দিনের সিআইডি কর্তৃক পুলিশ রিমান্ডে ছিলেন। এরপর গত ১ ডিসেম্বর আদালত তার ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ, সম্পত্তি ক্রোক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকে রিসিভার নিয়োগ করে আদেশ দেন।
এ বিষয়ে লালমনিরহাটের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) জিআর সারোয়ার জানান, আমরা আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী বর্তমান বাড়ি, নির্মাণাধীন বাড়ি ও একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ভবনগুলো বুঝে নিয়েছি এবং সেগুলোকে সরকারি মালিকানাধীন হিসেবে চিহ্নিত করেছি। তবে একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের মাধ্যমে ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানটি পরিচালিত হবে।
এদিকে, এ বিষয়ে সুমন খানের পরিবারের পক্ষ থেকে কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।