ঠাকুরগাঁওয়ে শীতল হাওয়ায় বিপর্যস্ত দিনযাপন

ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি
প্রকাশ: ২৪ জানুয়ারি ২০২৫, ১১:৫৯

শীতে থরথর করে কাঁপছে এক কৃষক। ছবি: ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি
ঠাকুরগাঁওয়ের আকাশ যেন অভিমান করে বসে আছে। গত দুইদিন ধরে সূর্যের আলো দেখা যায়নি। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত আকাশের কোলে লুটোপুটি খাচ্ছে ঘন কুয়াশা। মনে হয়, কুয়াশা আর হিমেল বাতাস মিলে প্রহর জুড়ে বৃষ্টি সাজিয়েছে। গাছের পাতায় জমে থাকা ফোঁটাগুলো যেন অশ্রুবিন্দু হয়ে ঝরছে। এই শীতে প্রতিটি মুহূর্ত যেন আরো কঠিন হয়ে উঠছে এখানকার মানুষের জন্য।
খেটে খাওয়া মানুষের জীবনে এ কুয়াশার স্রোত নিয়ে এসেছে দুঃসহ দুর্ভোগ। রিকশাচালক, ভ্যানচালক কিংবা দিনমজুরদের হাত থেকে যেন রুটিরুজির পথটাই ছিনিয়ে নিয়েছে প্রকৃতির এই বৈরী আচরণ। এই কুয়াশাচ্ছন্ন সময়ে রাস্তাঘাট এতটাই ঝাপসা যে পথচলার নিরাপত্তাটুকুও নিশ্চিত করা যাচ্ছে না। শীতে থরথর করে কাঁপছেন তারা। অনেকেই ঠান্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে কাজ করার শক্তি হারাচ্ছেন।
বাজারে লোকজনের আনাগোনা কম, দোকানিদের পণ্যের দামও যেন এই নীরবতার মতোই থমকে গেছে। কাঁচাবাজার থেকে শুরু করে চায়ের দোকান পর্যন্ত, সবখানেই হতাশার ছায়া। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিশুদের পথচলা যেন আরো কষ্টকর হয়ে পড়েছে। শিশুরা কম্বলের ভেতর মাথা গুঁজে শীতের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে।
কৃষকের মাঠেও ঘন কুয়াশার জাল ফেলে যাচ্ছে বিরূপ প্রভাব। ধানক্ষেত আর সবজির ওপর জমে থাকা সিক্ততা ফসলের ক্ষতির আশঙ্কা বাড়িয়ে তুলেছে। কৃষকদের চোখে-মুখে দুশ্চিন্তার ছাপ স্পষ্ট।
সরকারি-বেসরকারি সহায়তার হাত কিছুটা বাড়লেও তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। শীতবস্ত্রের অভাবে দরিদ্র মানুষগুলো যেন হিমেল হাওয়ার কাছে অসহায় আত্মসমর্পণ করছে।
রংপুর আবহাওয়া অফিসের তথ্য মতে, ঠাকুরগাঁওয়ের আজকের তাপমাত্রা ছিল ১১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। শীতে থেকে মুক্তির আশায় জেলার মানুষ তাকিয়ে আছে আকাশের দিকে। কুয়াশার এই অন্তহীন পর্দা সরিয়ে কবে বেরিয়ে আসবে সোনার সূর্য? কবে আলোকিত হবে চারদিক? কবে জীবনের গতি ফিরে আসবে সেই পুরোনো রূপে? প্রকৃতির এ নিঃশব্দ শীতলতা যেন পুরো এলাকার মানুষের হৃদয়ে জমাট বাধা যন্ত্রণার সুর হয়ে বাজছে।