Logo
×

Follow Us

জেলার খবর

অবৈধ ইটভাটায় পুড়ছে কাঠ

Icon

ঝালকাঠি প্রতিনিধি

প্রকাশ: ২৫ জানুয়ারি ২০২৫, ১৭:১২

অবৈধ ইটভাটায় পুড়ছে কাঠ

অবৈধ ইটভাটায় পুড়ছে কাঠ। ছবি: ঝালকাঠি প্রতিনিধি

ফসলি ও আবাদি জমিতে ইটভাটা বানিয়ে নষ্ট করা হচ্ছে পরিবেশ। গাছ কেটে ধ্বংস করা হচ্ছে বনজ সম্পদ। বিপর্যয়ের মুখে পরিবেশ। 

সরেজমিনে দেখা গেছে, ঝালকাঠি জেলা শহরের অদূরে কৃষ্ণকাঠি গ্রামের আগরবাড়ি এলাকায় আব্দুল করিম ব্রিকস ভাটায় পোড়ানো হচ্ছে বন-জঙ্গলের কাঠ। পরিবেশ অধিদফতরের ছাড়পত্র না নিয়েই গত ২০ বছর ধরে চলছে ভাটাটির কার্যক্রম। এই অবৈধ ইটভাটায় দেদারদে কাঠ পোড়ানো হলেও তা যেন দেখার কেউ নেই।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এখন ইট মৌসুম থাকায় এই ভাটায় কাঠের চাহিদা বেড়ে গেছে। প্রতিদিনই আশেপাশের বিভিন্ন অঞ্চল গেছে গাছ কেটে তা স্তূপ করে রাখা হয় এখানে। সেগুলো পুড়িয়ে বানানো হচ্ছে ইট।


গ্রামের বাসিন্দারা বলছেন, ঘনবসিতপূর্ণ এই গ্রামেই আইন ভেঙে কৃষিজমিতে গড়ে উঠেছে ইটভাটাটি। উর্বর কৃষিজমির মাটি কেটে তৈরি করা হচ্ছে ইট। জ্বালানি হিসেবে পোড়ানো হচ্ছে বিভিন্ন গাছের কাঠ। এতে কৃষিজমির পরিমাণ কমে যাওয়ার পাশাপাশি আশেপাশের ফসলি জমি ও বনায়ন হুমকির মুখে পড়েছে।  

ওই গ্রামের বাসিন্দা কবির বলেন, আব্দুল করিম ব্রিকস্ ভাটায় সবসময়ই কাঠ দিয়ে ইট পোড়ানো হয়। এ বিষয়ে প্রশাসনের কোনো নজরদারি নেই।

আলামিন নামে এক কৃষক বলেন,  ইটভাটার কারণে ফসলের মাটি নষ্ট হচ্ছে। ভাটার ধুলোর কারণে শ্বাসকষ্ট হচ্ছে। এগুলো দেখার যেন কেউ নেই।

আশাদুল নামের অপর এক কৃষক বলেন, এক সময় অনেক ফসল হতো। গ্রামের মানুষ যে আবাদ করে খাবে সেই পরিস্থিতি নেই। কৃষি একেবারে বিলুপ্তির পথে এই গ্রামে। আমরা দিনদিন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি।

কৃষ্ণকাঠি গ্রামের বাসিন্দা সারোয়ার বলেন, ভাটা ও পাজার কালো ধোঁয়ায় পরিবেশ দূষিত হচ্ছে। সরকারি নীতিমালা অনুযায়ী ইটবাটার জ্যিকজ্যাক চুঙ্গা ব্যবহারের নির্দেশনা থাকলেও এই ভাটায় তা নেই।

ইটভাটা স্থাপন ও ইট প্রস্তুত আইন ২০১৩-এর ৬ ধারায় বলা হয়েছে, যদি কোনো ব্যক্তি ইটভাটায় ইট পোড়ানোর কাজে কাঠ ব্যবহার করেন, তাহলে ওই ব্যক্তি তিন বছরের কারাদণ্ড অথবা তিন লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।

বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন ১৯৯৫ (সংশোধিত ২০১০) এবং পরিবেশ সংরক্ষণ বিধিমালা ১৯৯৭-এর ৭ ধারা অনুযায়ী কাঠ দিয়ে ইট পোড়ানোকে অবৈধ ঘোষণা করা হয়েছে।


ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইন, ২০১৩-তে বলা হয়েছে— কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, আবাসিক এলাকা, বাণিজ্যিক এলাকা, হাট-বাজার এলাকা; সিটি করপোরেশন, পৌরসভা বা উপজেলা সদর; এবং বন, অভয়ারণ্য, বাগান, জলাভূমি ও কৃষি জমিতে ইট ভাটা স্থাপন করা যাবে না।

আব্দুল করিম ব্রিকস্ ভাটার পরিচালক সাইদ জোমাদ্দার বলেন, কাঠ দিয়ে ইট পোড়াব না। কয়লা দিয়েই পোড়াব। কিন্তু কয়লার সংকট থাকায় অল্পকিছু কাঠ দিয়ে আগুন জ্বালানো হচ্ছে।

তিনি জানান, গত বছরের এপ্রিলে পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্রের জন্য আবেদন করা হয়েছে। এছাড়া জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে আবেদন করা হয়েছে।

ঝালকাঠি জেলা পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক আনজুমান নেছা জানান, যেসব ভাটায় জিগজাগ চুঙ্গা নেই সে সব ভাটা মালিককে নোটিশ দিয়ে ভাটা বন্ধের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। কোনোভাবেই ভাটায় কাঠ পোড়ানোর বৈধতা নেই। কয়লা ছাড়া কাঠ দিয়ে ইট পোড়ানো হলে মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে ব্যবস্থা নেব। অবৈধ ভাটা বন্ধে অভিযান চলমান রয়েছে। এরইমধ্যে কয়েকটিতে অভিযান চালিয়ে বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। 

পরিবেশ অধিদফতরের তথ্য মতে, ঝালকাঠি জেলায় মোট ৪২টি ইট ভাটা রয়েছে। এর মধ্যে ২৬টি নিবন্ধিত ও মাত্র ৫টি আধুনিক জিগজাগ ভাটা। বাকি ইটভাটার বৈধতা নেই।

ঝালকাঠির জেলা প্রশাসক আশরাফুর রহমান জানান, অবৈধ ইটভাটা বন্ধে অভিযান চলছে। এরইমধ্যে জেলার বিভিন্ন স্থানের কয়েকটি ইটভাটা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। আবদুল করিম ব্রিকস ভাটার বিরুদ্ধেও আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫