ইজারা বহির্ভূতভাবে শেরপুর সীমান্তে বালু উত্তোলনের মহোৎসব

শেরপুর প্রতিনিধি
প্রকাশ: ২৬ জানুয়ারি ২০২৫, ২১:৪৩

শেরপুরে বালু উত্তোলনের মহোৎসব। ছবি: শেরপুর প্রতিনিধি
বিএনপির নাম ভাঙিয়ে শেরপুর সীমান্তে চোরাকারবারিরা অবৈধভাবে মূল্যবান লাল বালু উত্তোলন করছে। দায়িত্ব পালন করতে গেলে সাংবাদিকদের ওপর চড়াও হচ্ছে তারা।
স্থানীয়দের অভিযোগ বিএনপি নেতাকর্মী ও প্রশাসনের লোকজন অবৈধ বালু উত্তোলন কারীদের সঙ্গে জড়িত। উপজেলা বিএনপি বলছে, চোরাকারবারিদের সঙ্গে আমাদের কোনো সম্পর্ক নেই। জেলা প্রশাসক বলছেন, প্রশাসনের কেউ জড়িত থাকলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
অনুসন্ধানে জানা যায়, বিএনপির কমিটিতে নাম নেই আবার অনেকে সাবেক হয়েছেন এরাই এখন বিএনপির নাম ভাঙিয়ে অবৈধ বালু উত্তোলন, ভারত থেকে মদ, ফেনসিডিল এনে বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলায় পাচার করে বিএনপির বারটা বাজাচ্ছেন।
শ্রীবরদী উপজেলার সীমান্ত মেঘাদল, বাবলাকুনা,হারিয়াকোনা গ্রামের মানুষ জানায়, ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর স্থানীয় বিএনপির নেতাকর্মী পরিচয়ে শেরপুর গাড়ো পাহাড়ের সীমান্ত এলাকার চোরাকারবারিরা সক্রিয় হয়ে ওঠে। প্রতি রাতেই লাল বালুর ট্রাকে করে ভারতীয় মদ, ফেনসিডিল এবং অন্যান্য মাদক পাচার করে যাচ্ছে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায়। চোরাকারবারি কাউকে টাকা দিয়ে কাউকে ভয়ভীতি দেখিয়ে মুখ বন্ধ করে প্রতিদিন লাখলাখ টাকার সরকারি সম্পদ লুট করে যাচ্ছে। মাদকের ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে।
কর্ণজোড়া পাচ মেঘাদল গ্রামের উজ্জল বলেন, এই সীমান্ত এলাকায় অনেকেই চোরাকারবারিতে জড়িত। তবে বর্তমানে কর্ণজোড়া গ্রামের আজিজুল হক মেম্বারের ছেলে মাসুদ ৫ আগস্ট এর পর থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে বিক্রি করে যাচ্ছে। তারা প্রশাসনকে ম্যানেজ করে এটি করছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শ্রীবরদী উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের একজন নেতা বলেন, সিঙ্গাবরুনা ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সভাপতি আবু রায়হান বাবুলের ছত্রছায়ায় মাসুদ ও তার বাহিনী সীমান্ত অঞ্চলে অবৈধ কর্মকাণ্ড করে যাচ্ছে। বদনাম হচ্ছে পুরা বিএনপির। জেলা বিএনপির কমিটি বিলুপ্ত হওয়ায় কারো কাছে আমরা বিচারও দিতে পারছি না।
মাসুদ বলেন, আমি কোনো অপরাধের সঙ্গে জড়িত নই। ১৭ বছর আওয়ামী লীগের সময়ে ১৭টি মামলা খেয়েছি। জেল-জুলুম খেটেছি।
সাবেক বিএনপি নেতা আবু রায়হান বাবুল বলেন, মাসুদের সঙ্গে বালু উত্তোলনের ব্যাপারে আমার কোনো সম্পর্ক নেই। তবে তার সঙ্গে আমার ব্যক্তিগত সম্পর্ক আছে।
২৩ জানুয়ারি একদল সাংবাদিক স্থানীয় বালু দস্যু মাসুদ ও বাবুল চেয়ারম্যান বাহিনীর কবলে পড়ে। এ নিয়ে ১৫ জনের নামে এবং অজ্ঞাতনামা বেশ কয়েকজনকে অভিযুক্ত করে শ্রীবরদী থানায় মামলা (মামলা নং ১৮) দায়ের করা হয়েছে। এদিকে এ ঘটনায় সঠিক তদন্তের মাধ্যমে দোষীদের আইনের আওতায় আনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন শেরপুর পুলিশ সুপার।
হামলার শিকার সাংবাদিকরা হলো শেরপুর প্রেস ক্লাবের কার্যকরী সভাপতি রফিক মজিদ, সাধারণ সম্পাদক ও বাংলাদেশ প্রতিদিনের মাসুদ হাসান বাদল, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও দেশ রুপান্তরের শফিউল আলম সম্রাট, ক্রীড়া ও সংস্কৃতি সম্পাদক মনিরুজ্জামান রিপন।
প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মাসুদ হাসান বাদল বলেন, আমাদের কাছে তথ্য ছিল শ্রীবরদী সীমান্তে রাত নামলেই অবৈধ বালুর গাড়িতে মাদক পাচার হয়। আমরা সেখানে গিয়ে এটির সত্যতা পেয়েছি এবং ভিডিও ধারণ করেছি। সীমান্ত এলাকার গডফাদার বালু দস্যু মাসুদ ও তার বাহিনী প্রতিরাতেই মেঘালয় সীমান্ত ছুঁইছুঁই এলাকা থেকে ইজারাবহির্ভূতভাবে বালু উত্তোলন, মদ, ফেনসিডিল পাচার করে থাকে। ট্রাকে মাদক পাচার-কালীন ভিডিও ধারণ করলে চোরাকারবারিদের ক্রোধের শিকার হতে হয়।
রাতে সীমান্তে পাঁচ মেঘাদল গ্রামে ঢাকা কেরানীগঞ্জ থেকে বালু নিতে আসা একজন ড্রাইভার বলেন, আমাদের চারটি ট্রাক হালুয়াঘাট সার আনলোড করে এখানে এসেছি লাল বালু নিতে। আমাদের মহাজন মাসুদের নাম্বার দিয়েছে তার সঙ্গে যোগাযোগ করার জন্য।
শ্রীবরর্দী পৌর বিএনপি সভাপতি সাবেক ছাত্রদল নেতা ফজলুল হক অকুল চৌধুরী ও উপজেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুর রহিম দুলাল বলেছেন, ওরা বালু ও মাদক ব্যবসায়ী। বিএনপির সঙ্গে ওদের কোনো সম্পর্ক ছিলও না এখনও নেই। আমরা বারবার প্রশাসনকে বিষয়টি অবগত করেছি।
শ্রীবরদী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আনোয়ার জাহিদ বলেন, মাসুদসহ অন্যান্য অপরাধীদের নামে আমার থানায় ২৩ জানুয়ারি রাতে একটি মামলা হয়েছে। আসামিদের গ্রেফতারে পুলিশ কাজ করছে।
শেরপুর জেলা পুলিশ সুপার আমিনুল ইসলাম বলেন,সাংবাদিকদের অবাদ সংবাদ সংগ্রহের ক্ষেত্রে চোরাকারবারিরা বাধা সৃষ্টি করেছে। কোনোভাবেই ছাড় দেওয়া হবে না।
শেরপুর জেলা প্রশাসক তরফদার মাহমুদুর রহমান বলেন, শ্রীবরদী উপজেলার সীমন্ত এলাকায় বালু মহাল ইজারা দেওয়া হয়নি। অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের দায়ে মামলা জেল-জরিমানা করা হচ্ছে। প্রশাসনের কোনো কর্মকর্তা বালু উত্তোলন সঙ্গে জড়িত থাকলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।