কক্সবাজার-চট্টগ্রাম রেলপথ: নতুন ট্রেনে ব্যাপক সাড়া

কক্সবাজার প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১৩:৩২

আইকনিক রেল স্টেশনে নতুন ট্রেন। ছবি: কক্সবাজার প্রতিনিধি
বন্দর নগরী চট্টগ্রাম থেকে পর্যটন শহর কক্সবাজার রেলপথে দুই জোড়া নতুন ট্রেন চলাচল শুরু হয়েছে। গতকাল ১ ফেব্রুয়ারি যাত্রার প্রথম দিনেই সৈকত ও প্রবাল এক্সপ্রেসে ছিল যাত্রীদের উপচে পড়া ভিড়। প্রথম দিনেই কক্সবাজার আইকনিক রেল স্টেশন থেকে টিকিট বিক্রি করে আয় হয়েছে ৪ লাখ ৭২ হাজার ৪৩৮ টাকা।
কক্সবাজার আইকনিক রেল স্টেশনের মাস্টার মো. গোলাম রব্বানি জানান, চট্টগ্রাম থেকে সকাল ৬টা ১৫ মিনিটে ছেড়ে আসা সৈকত এক্সপ্রেস কক্সবাজার পৌঁছানোর কথা ছিল সকাল ৯টা ৫৫ মিনিটে। তবে হাতি চলাচলকারী এলাকায় ট্রেনের গতি সীমাবদ্ধতা এবং অন্যান্য কাজ অসমাপ্ত থাকায় ট্রেনটি কক্সবাজার পৌঁছায় সকাল ১০টা ২৫ মিনিটে।
তিনি আরো জানান, কক্সবাজার থেকে সৈকত এক্সপ্রেস সকাল ১০টা ৩৫ মিনিটে ছাড়ার কথা থাকলেও অতিরিক্ত বগি যুক্ত করার কারণে ট্রেনটি বেলা ১১টায় ছাড়তে হয়েছে।
প্রবাল এক্সপ্রেস (৮২২) থেকে প্রথম দিনেই কক্সবাজার স্টেশনে ৯২১টি টিকিট বিক্রি হয়েছে, যা থেকে আয় হয়েছে ২ লাখ ৮ হাজার ৯২৩ টাকা। সৈকত এক্সপ্রেস (৮২৪) থেকে টিকিট বিক্রি হয়েছে ১ হাজার ১৩৪টি, যা থেকে আয় হয়েছে ২ লাখ ৬৩ হাজার ৫১৫ টাকা।
প্রথম দিনেই শুধু কক্সবাজার আইকনিক রেল স্টেশন থেকে মোট ২ হাজার ৫৫টি টিকিট বিক্রি হয়।
গোলাম রব্বানি জানান, দুই জোড়া ট্রেনেই যাত্রীদের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। প্রথম দিনেই কক্সবাজার-চট্টগ্রাম রেলপথে ট্রেন চলাচল নিয়ে যাত্রীদের মধ্যে ব্যাপক আনন্দ উল্লাস দেখা গেছে।
দুটি ট্রেনের সময়সূচি ও যাত্রাবিরতি স্টেশন
সৈকত এক্সপ্রেস: চট্টগ্রাম থেকে প্রতিদিন ভোর ৬টা ১৫ মিনিটে ছেড়ে সকাল ৯টা ৫৫ মিনিটে কক্সবাজার পৌঁছাবে। কক্সবাজার থেকে সন্ধ্যা ৮টা ১৫ মিনিটে রওনা হয়ে রাত ১১টা ৫০ মিনিটে চট্টগ্রামে পৌঁছাবে।
প্রবাল এক্সপ্রেস: কক্সবাজার থেকে সকাল ১০টা ৩৫ মিনিটে চট্টগ্রামের উদ্দেশে ছাড়বে। চট্টগ্রামে পৌঁছে বিকাল ৩টা ১০ মিনিটে আবার কক্সবাজারের উদ্দেশে যাত্রা শুরু করে সন্ধ্যা ৭টায় পৌঁছাবে।
স্টেশনে যাত্রাবিরতি
সৈকত এক্সপ্রেস: ষোলশহর, জানালীহাট, পটিয়া, দোহাজারী, সাতকানিয়া, চকরিয়া, ডুলাহাজারা ও রামু।
প্রবাল এক্সপ্রেস: ষোলশহর, গোমদণ্ডী, পটিয়া, দোহাজারী, সাতকানিয়া, লোহাগাড়া, চকরিয়া, ডুলাহাজারা, ইসলামাবাদ ও রামু।
রেলওয়ের দেওয়া তথ্যমতে, ১৫ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত চট্টগ্রামের দোহাজারী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত ১০২ কিলোমিটার নতুন রেলপথটি ২০২৩ সালের নভেম্বর মাসে উদ্বোধন করা হয়। এরপর ডিসেম্বরে ঢাকা থেকে সরাসরি কক্সবাজার পর্যন্ত আন্তঃনগর ট্রেন চালু হয়। ইঞ্জিন, কোচ ও লোকবল সংকট দেখিয়ে চট্টগ্রাম থেকে ট্রেন চালু হয়নি। পরে অবশ্য ক্ষোভ ও সমালোচনার মুখে চট্টগ্রামের যাত্রীদের জন্য দুটি কোচ বরাদ্দ রাখা হয়। জানুয়ারিতে আরেকটি আন্তঃনগর ট্রেন চালু করা হয়। ঈদুল ফিতর উপলক্ষে গত বছরের ৮ এপ্রিল চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত একটি বিশেষ ট্রেন চালু করা হয়। ট্রেনটি জনপ্রিয় হলেও ওই বছরের ৩০ মে তা বন্ধ করে দেওয়া হয়। স্থানীয়দের ক্ষোভের মুখে ঈদুল আজহার সময় ১২ জুন থেকে বিশেষ ট্রেন চালু করা হয়, যা এখনো চলছে। তবে এই রুট উদ্বোধনের পর থেকে চট্টগ্রাম থেকে স্থায়ী ট্রেন চালুর দীর্ঘদিনের দাবি ছিল। বিশেষ ট্রেনটি স্থায়ী করার পাশাপাশি আরেকটি নতুন ট্রেন চালুর প্রস্তাবনাসহ একটি চিঠি ওই বছরের ১১ ডিসেম্বর রেলওয়ের মহাপরিচালককে দেন রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলের প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা মো. শহিদুল ইসলাম।
রেলওয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, কক্সবাজার রুটের পর্যটকদের পাশাপাশি স্থায়ীদের মধ্যেও ট্রেনের চাহিদা রয়েছে। চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রুটে দৈনিক গড়ে ৪০ হাজার মানুষ কক্সবাজারে যাতায়াত করেন। এর মধ্যে ১০ হাজার মানুষও যদি ট্রেনে ওঠেন, তবে এটি হবে সবচেয়ে লাভজনক রুট। দুর্ঘটনাপ্রবণ মহাসড়ক এবং রেলের ভাড়া তুলনামূলক কম হওয়ায় এই রুটের ট্রেন জনপ্রিয়তা পায়।