
শহরে ছাত্র-জনতার অবস্থান। ছবি: আবু সুফিয়ান
জুলাই অভ্যুত্থানের সময় দেশের যে কয়েকটি স্থান গণমাধ্যমের শিরোনামে বারবার উঠে এসেছে, কুমিল্লা জেলা ছিল তার মধ্যে অন্যতম। শহরে আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছে মূলত কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় ও শতবর্ষী কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজ। অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মধ্যে প্রত্যক্ষভাবে আন্দোলনে অংশগ্রহণ করে কুমিল্লার সিসিএন বিজ্ঞান প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, আর্মি বিশ্ববিদ্যালয়, ব্রিটানিয়া ইউনিভার্সিটি, কুমিল্লা সরকারি কলেজ ও সরকারি মহিলা কলেজের শিক্ষার্থীরা।
ঘটনাপ্রবাহ
৬ জুলাই রাত ৯টায় কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম মশাল মিছিল হয় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রতি সংহতি জানিয়ে। ৭ জুলাই ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক চার ঘণ্টা অবরোধ করেন শিক্ষার্থীরা। ১১ জুলাই ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কোটবাড়ী বিশ্বরোড অবরোধ করে শিক্ষার্থীরা। একই দিনে কুমিল্লার জিরো পয়েন্ট কান্দিরপাড় দখল করে মিছিল ও সমাবেশ করে ছাত্রলীগ। বৃহস্পতিবারের শেষ কর্মদিবসে প্রায় ছয় ঘণ্টা সড়ক বন্ধ রেখে মিছিল করে তারা। ১২ জুলাই সারা দেশে মিছিলের ঘোষণা দেয় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় ও ভিক্টোরিয়া কলেজে মিছিল হয়। ভিক্টোরিয়া কলেজের মিছিলে ছাত্রলীগের বাধা প্রদানের ভিডিও করায় কলেজের ডিগ্রি প্রথম বর্ষের ছাত্র ও সাংবাদিক সমিতির সদস্য তামিম হোসেনকে নির্যাতন করেন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। পরে খবর পেয়ে কান্দিরপাড় পুলিশ ফাঁড়ির সদস্যরা তাকে উদ্ধার করেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে ১৩ জুলাই ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ মিছিল করেন। কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ব্লকেড কর্মসূচিতে’ হামলার প্রতিবাদে ১৪ জুলাই পুলিশ লাইনস থেকে গণপদযাত্রা ও জেলা প্রশাসক বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। ১৬ জুলাই ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ করতে গেলে পুলিশের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ হয়। এ সময় পুলিশ ছাত্রছাত্রীদের ওপর গুলিবর্ষণ করলে উত্তেজিত ছাত্র-জনতা সদর দক্ষিণ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার গাড়িতে আগুন দেয়, যা আন্দোলনে নতুন মাত্রা যোগ করে। ১৮ জুলাই পুলিশ ও বিজিবির সঙ্গে দফায় দফায় সংঘর্ষ হয় শিক্ষার্থীদের। ওই দিন বিকেল ৪টার দিকে পুলিশের সাঁজোয়া যান ও ভ্যানে আগুন দেন শিক্ষার্থীরা।
কারফিউ জারির পর কুমিল্লার বিভিন্ন আবাসিক ছাত্রাবাসে অভিযান চালাতে থাকে পুলিশ। জেলার ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলায় রেলপথ অবরোধ করেন ছাত্ররা। ২৪ জুলাই বিএনপির বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মীসহ ২২ জনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ৩১ জুলাই পর্যন্ত কুমিল্লায় ৫০০ জনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
সারা দেশে শিক্ষার্থী হত্যা, নিপীড়ন ও শিক্ষকদের লাঞ্ছনার প্রতিবাদে ১ আগস্ট কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছয়জন শিক্ষক প্রশাসনিক ভবনের সামনে প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করেন। ২ আগস্ট শুক্রবার নগরীর রেসকোর্সে এলাকায় গণমিছিল করে ছাত্র-জনতা। মিছিলে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা হামলা চালান। একই দিনে দাউদকান্দিতে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে মিছিল ও সড়ক অবরোধ করেন ছাত্ররা। ৩ আগস্ট দুপুরে নগরীর পুলিশ লাইনস ও রেসকোর্স এলাকায় শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ মিছিলে স্বেচ্ছাসেবক ও যুবলীগের নেতাকর্মীদের হামলায় সাতজন গুলিবিদ্ধ হন, আহত হন অন্তত ৩০ জন। চান্দিনায় উপজেলা সহকারী কমিশনারের ( ভূমি) গাড়িতে আগুন দেয় ছাত্র-জনতা। এদিন আন্দোলনের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করেন কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫১ জন শিক্ষক। ৪ আগস্ট দেবীদ্বার পৌর সদরে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা রুবেল নামের একজনকে হত্যা করেন। ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ও শেখ হাসিনার দেশ ছাড়ার খবরে দেশের অন্যান্য স্থানের মতো কুমিল্লায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে ছাত্র-জনতা আনন্দ মিছিল বের করে।