ডিসেম্বরে নির্বাচন দিতে হবে, টালবাহানা চলবে না: সালাহউদ্দিন

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২১:৩৬
-67b2060aa55be.jpg)
বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা সালাহউদ্দিন আহমেদ। ছবি- সংগৃহীত
ডিসেম্বরে নির্বাচন দিতে হবে, কোনো টালবাহানা চলবে না বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা সালাহউদ্দিন আহমেদ।
আজ রবিবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) ফেনীর মিজান ময়দানে জেলা বিএনপি আয়োজিত জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন তিনি।
সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘যারা স্থানীয় সরকার নির্বাচন আগে চায় তাদের বিবেক বলতে কিছু নেই। সংস্কার করে যারা নির্বাচনকে বিলম্বিত করছে তাদের উদ্দেশ্য কি, তা জাতি জানতে চায়। নির্বাচনকে বিলম্বিত করার রহস্য উদঘাটন করতে হবে। উপদেষ্টাসহ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে হাসিনার দোসর লুকিয়ে আছে। তাদেরকে চিহ্নিত করতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘এখন দরকার শেখ হাসিনা ও তার দোসরদের মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে বিচার নিশ্চিত করা। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনাল গঠিত হয়েছে। মামলা দায়ের হয়েছে। জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশন বলছে শেখ হাসিনা গণহত্যার জন্য সরাসরি নির্দেশ দিয়েছে। তার শীর্ষস্থানীয় মন্ত্রী ও উপদেষ্টারা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সরাসরি নির্দেশ দিয়েছে গণহত্যা চালানোর জন্য। সংগঠন হিসেবে আওয়ামী লীগ সে দায় এড়াতে পারে না। আওয়ামী লীগসহ তার সকল অঙ্গ সংগঠন ঢাকাসহ দেশের রাজপথে গণহত্যায় অংশ নিয়েছে। বাংলাদেশের মানুষ তা প্রত্যক্ষ করেছে অলিতে গলিতে কীভাবে আওয়ামী লীগ ও তার সন্ত্রাসী বাহিনী হামলা করেছে। আওয়ামী লীগকে রাজনৈতিক দল হিসেবে বিচারের আওতায় আনতে হবে।’
সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘বিএনপি, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনসহ ছাত্র সংগঠন ও জনগনের পক্ষ থেকে দাবি উঠেছে আওয়ামী লীগকে রাজনৈতিকভাবে বিচার করতে হবে। বিচারের প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই তাদের ভবিষ্যৎ নির্ধারিত হবে রাজনৈতিক কর্মসূচি চালাতে পারবে কিনা, নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে কিনা। আওয়ামী লীগের ইতিহাস গণতন্ত্র ধ্বংস করার ইতিহাস, গণতন্ত্রকে কবর দিয়ে একদলের শাসন ব্যবস্থা কায়েম করার ইতিহাস। শেখ মুজিব ৭১ সালে স্বাধীনতার ঘোষণা না দিয়ে পালিয়ে গেছে শেখ হাসিনাও দেশের গণতন্ত্র হত্যা করে একদলীয় শাসন ব্যবস্থা কায়েম করেছিল। তবে আমরা জানতাম শেখ হাসিনার পতন একদিন হবেই। সেজন্যই বিএনপি আন্দোলন সংগ্রাম করে গেছে।’
অন্তবর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টার উদ্দেশ্য বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘কঠোরহস্তে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। বর্তমান বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা বিনষ্টের জন্য ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার দোসররা যেমন আছে তেমনি প্রফেসর ইউনূস সরকার আপনার সরকারেও আওয়ামী ফ্যাসিস্ট দোসররা বসে আছে। উপদেষ্টা পরিষদে হাসিনার যে সকল দোসররা আছে তাদের বাদ দিতে হবে। সরকারের আমলাতন্ত্রে, প্রশাসনে হাসিনার দোসররা বসে আছে তাদেরকে বাদ দিয়ে দোসরমুক্ত করতে হবে।’
সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের মানুষ আশা করেছিল দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে থাকবে তবে সরকারের কয়েকজন উপদেষ্টা রমজানের আগে ভ্যাট বসিয়ে দ্রব্যমূল্যর দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। যেভাবে পারেন বাজারের সরবরাহ বাড়ান, তবুও জনগণের সাধ্যের মধ্য দ্রব্যমূল্যের দাম রাখতে হবে। ভ্যাট ট্যাক্স কমিয়ে জনগণের নাগালের মধ্যে আনতে হবে। বেশি সংস্কার সংস্কার করে দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতি করে জনগণের নাভিশ্বাস উঠাবেন না। মানুষ সংস্কারের চাইতে সংসারের কথা বেশি বুঝে। আমরা এখন আপনাদের সতর্ক করছি রমজানে যেন দ্রব্যমূল্য মানুষের ক্রয়সীমার বাইরে না যায়। নয়ত কঠোরহস্তে দমন করা হবে।’
তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগের বিভিন্ন সংগঠনের লোকজন যারা বিভিন্ন জায়গায় লুকিয়ে আছে এবং ষড়যন্ত্র করছে বাংলাদেশে অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি করার জন্য তাদের আইনের আওতায় নিয়ে আসুন।’
সরকারের উদ্দেশ্য তিনি বলেন, ‘আপনারা ডেকেছেন আমরা জাতীয় ঐক্যমত্য কমিশনের সভায় গিয়েছি। জাতীয় নির্বাচন করার জন্য যেসকল নির্বাচনমুখী সংস্কার জরুরি সেগুলো আলোচনা করে ঐক্যমতে আসুন এবং সে প্রস্তাব বাস্তবায়ন করে নির্বাচনের আয়োজন করুন। এ বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে জাতীয় সংসদ নির্বাচন করতে হবে। আমরা হিসাব করে দেখেছি কোনভানেই নির্বাচনের প্রস্তুতির জন্য মে-জুন মাসের বেশি সময় লাগবে না। যে সকল সংস্কার প্রয়োজন তা করে ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন দিন।’
সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘যারা অনুপাতিক হারে নির্বাচন চায় বাংলাদেশের রাজনীতিতে তাদের আনুপাতিক জ্ঞান নেই। স্থানীয় সরকার নির্বাচন স্থানীয় সরকার মন্ত্রনালয়ের বিষয়, আগে জাতীয় নির্বাচন এরপর স্থানীয় সরকার নির্বাচন করতে হবে। যারা স্থানীয় সরকার নির্বাচন আগে চায় তারা স্থানীয় সরকার নির্বাচনের নামে জাতীয় নির্বাচন বিলম্বিত করার মতলব কি সেটা জানাতে হবে।
জনসভায় ফেনী জেলা বিএনপির আহ্বায়ক শেখ ফরিদ বাহারের সভাপতিত্বে আরও বক্তব্য রাখেন বিএনপির চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা ও সাবেক সংসদ সদস্য অধ্যাপক জয়নাল আবেদীন, চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবের রহমান শামীম, ঢাকা দক্ষিণ বিএনপির আহবায়ক রফিকুল আলম মজনুসহ কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতাকর্মীরা। এ সময় জেলা বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন।