Logo
×

Follow Us

জেলার খবর

যশোরের ফুলের রাজ্য গদখালী

Icon

আব্দুল্লাহ সুমন

প্রকাশ: ০১ মার্চ ২০২৫, ১২:৫৯

যশোরের ফুলের রাজ্য গদখালী

কেশবপুরে বাণিজ্যিকভাবে ফুল চাষ হচ্ছে। ছবি: সাম্প্রতিক দেশকাল

বিস্তীর্ণ মাঠজুড়ে নানা বর্ণের, গন্ধের ফুলের ছড়াছড়ি। এতে নাম না জানা পাখিদের ওড়াউড়ি আর মৌমাছিরা ফুলে ফুলে মধু সংগ্রহ করছে। এভাবে জীবনের রংগুলোকে আরো রঙিন করে পেতে চাইলে যশোরের বেনাপোলগামী বাসের একটি টিকিট কেটে সবুজ শতবর্ষী ঐতিহাসিক যশোর রোড ধরে গদখালী ঘুরে আসুন। 

গদখালীতে ফুল চাষ শুরু হয়েছিল কীভাবে তার খোঁজ নিতে গিয়ে সন্ধান মিলল শের আলী সরদারের। জানালেন, চার দশক আগে তার হাত ধরে এখানে শুরু হয় ফুলের চাষ আর এলাকার ক্ষেতখামার থেকে বিদায় নিতে শুরু করে ধান-পাট বা এ ধরনের প্রচলিত শস্য।

তিনি বলেন, ‘আমার বাবার নার্সারি ছিল। এক দিনের কথা, আমি নার্সারিতে বসে ছিলাম। ভারত থেকে আসা এক ভদ্রলোক এসে পানি চাইল, তার হাতে ফুল। তিনি বললেন, এই ফুল পশ্চিমবঙ্গে অনেক হয়। তো আমি ভাবলাম পশ্চিমবঙ্গ আর বাংলাদেশের মাটি তো এক। তখন ১৯৮২ সালে এরশাদ আমলে এক বিঘা জমিতে রজনীগন্ধা দিয়ে শুরু করেছিলাম।’ 

শের আলী সরদার ও স্থানীয়দের ভাষ্য মতে, এভাবে প্রায় চার দশক আগে ফুল চাষের যে যাত্রা শুরু হয়েছিল তার এখন বিস্তার ঘটেছে পুরো অঞ্চলজুড়ে। এখন আসছে নিত্যনতুন জাতের ফুল।

এখন দুটি থানার আশপাশের ৯০টি গ্রামে ফুল চাষ করা হয়। ঝিকরগাছা, শার্শা ছাড়াও যশোরের মণিরামপুর, কেশবপুরেও বাণিজ্যিকভাবে ফুলের চাষ হচ্ছে। প্রায় সাড়ে চার হাজার বিঘা জমিতে স্থানীয় কৃষকরা ফুল চাষ করে থাকেন। প্রতি বছর কোটি কোটি টাকার ফুল উৎপন্ন হয় এই গদখালীতে। প্রথম দিকে বছরের নির্দিষ্ট কয়েক মাসে ফুল চাষ হলেও এখন প্রায় সারা বছরই ফুল চাষ হয়ে থাকে।

দেশের ৭০ থেকে ৭৫ শতাংশ ফুলের চাহিদা পূরণ হয়ে থাকে যশোরের ফুল থেকে। যশোর জেলার গদখালী ইউনিয়নের পানিসারা, হাড়িয়া, কৃষ্ণচন্দ্রপুর, পটুয়াপাড়া, সৈয়দপাড়া, মাটিকুমড়া, বাইসা, কাউরা ও ফুলিয়া গ্রামের প্রতিটি মাঠে শত শত বিঘা জমি নিয়ে গাঁদা, গোলাপ, গ্লাডিওলাস, রজনীগন্ধা, জারবেরা, কসমস, ডেইজি জিপসি, ডালিয়া, চন্দ্রমল্লিকাসহ আরো বিভিন্ন প্রজাতির ফুলের চাষ হয়। এখানকার জারবেরার মান চায়নার চেয়েও ভালো। আর গ্লাডিওলাস ও রজনীগন্ধার মান ভারতের চেয়েও উন্নত মানের।

প্রতি বছর এই জেলায় প্রায় ১২০ কোটি পিস ফুল উৎপন্ন হয়। মাঠের পর মাঠে ফুটে আছে ফুল আর ফুল। লাল, হলুদ, গোলাপি, সাদা নীল হরেক রঙের ফুল। যেন এক বাহারি ফুলের রাজ্য এটি। বাতাসে ফুলের সৌরভ আর ফুলে ফুলে উড়ছে রঙিন প্রজাপতি। যেন বাংলাদেশের বুকে এক টুকরা স্বর্গ। 

যেকোনো বাগানে ঢুকে ইচ্ছামতো ঘুরে বেড়ান, ছবি তুলুন, পছন্দমতো কয়েকটা ফুল তুলুন; কেউ কিছু বলবে না। বরং আপনার দিকে তাকিয়ে মিষ্টি একটা হাসি দেবে। তবে ফুলের বাগানে ঢোকার আগে অবশ্যই চাষিদের অনুমতি নেবেন। দিগন্তজুড়ে রঙের সমাহার ছড়িয়ে এক বিস্তীর্ণ চাদর যেন বিছিয়ে রেখেছে আপনারই জন্য। এখানকার চাষিরা জমিতে ফুল চাষই করে থাকেন। মাঠের পর মাঠ জোড়া শুধু ফুলের ক্ষেত আর সুবাস। ফুলই যেন তাদের ফসল। 

গদখালী যাওয়ার সবচেয়ে ভালো সময় জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি। দেশের যেকোনো স্থান থেকে সড়ক, রেল ও আকাশপথে যশোর যাওয়া যায়। যশোর বাসস্ট্যান্ড থেকে রিকশা নিয়ে চলে যান লোকাল বাসস্ট্যান্ডে। এখান থেকেই পেয়ে যাবেন গদখালী যাওয়ার বাস। গদখালী নেমে ক্ষেত দেখার জন্য ভ্যান নিতে পারেন। ভ্যানভাড়া নেবে ১০০ থেকে ১৫০ টাকা।

খুব ভোর থেকে বাসস্ট্যান্ডের ঐতিহাসিক যশোর রোড়ের রাস্তার দুই পাশেই বসে দেশের সর্ববৃহৎ ফুলের পাইকারি বাজার। গদখালী বাজারের নিজস্ব ফুল বাগান থেকে সাইকেল ও ভ্যানে করে রজনীগন্ধা, গাঁদা, জারবেরা, গোলাপ ইত্যাদি ফুল নিয়ে আসে পাইকাররা এই বাজারে।

ফুলচাষি ও ব্যবসায়ীরা জানান, বিশ্ব ভালোবাসা দিবস, পহেলা ফাগুন ও সরস্বতীপূজা সামনে রেখে ফুলের বেচাবিক্রি বাড়ে। এ সময়গুলোতে একটি গোলাপ ২৫ থেকে ৩০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়।

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫