হিমাগার সিলগালা, আলু রাখা নিয়ে শঙ্কায় চাষিরা

ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০১ মার্চ ২০২৫, ১৩:৩৫

হিমাগার বন্ধ হওয়ায় হতাশ আলু চাষি। ছবিঃ ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি
হিমাগার সিলগালা করায় আলু নিয়ে বিপাকে পড়েছেন উত্তরের দুই জেলা দিনাজপুর ও ঠাকুরগাঁওয়ের চাষিরা। সংরক্ষণ করতে না পারায় মাঠেই নষ্ট হচ্ছে হাজার হাজার টন আলু।
দিনাজপুরের বীরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) সিদ্ধান্তে হিমাগার সিলগালা করায় বিপাকে পড়তে হয়েছে এই দুই জেলার আলু চাষিদের।
চলতি মাসের ১৩ ফেব্রুয়ারি হিমাগারে ভাড়া কমানোর দাবিতে সড়ক অবরোধ করলে বীরগঞ্জ উপজেলা প্রশাসনের আশ্বাসে অবরোধ তুলে নেয় চাষিরা। কিন্তু সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও সমস্যার সমাধান না হওয়ায় ২৩ ফেব্রুয়ারি পৌরশহরের বিজয় চত্বরে মানববন্ধন শেষে আলু ফেলে সড়ক অবরোধ করেন চাষিরা।
পরে ইউএনও ফজলে এলাহী দুপুর
১২টার দিকে আলু চাষি ও ব্যবসায়ী সমিতির প্রতিনিধিদের সঙ্গে নিয়ে হিমাদ্রী কোল্ড
স্টোরেজ লিমিটেড, শাহী কোল্ড স্টোরেজ-৪, রাহবার কোল্ড স্টোরেজ ও
শাহী কোল্ড স্টোরেজ-২ সিলগালা করে দেন। ইউএনওর এমন সিদ্ধান্তে আরও বিপাকে পরেন আলু
চাষিরা৷ সংরক্ষণ না করতে পারায় মাঠেই নষ্ট হচ্ছে আলু৷
বীরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফজলে এলাহী বলেন, ‘‘গত বছর যেখানে হিমাগারের সংরক্ষণ ফি ছিল প্রতি কেজি ৪ টাকা, এবার তা দ্বিগুণ করা হয়েছে, যা অনৈতিক। মালিকপক্ষ আলোচনায় রাজি না হওয়ায় স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে এ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।’’
ঘটনা বীরগঞ্জে হলেও উত্তরের আরেক জেলা ঠাকুরগাঁয়েও এর প্রভাব পড়েছে। পাশাপাশি জেলা হওয়ায় আলু সংরক্ষণ করতে পারছেন না দুই জেলার আলুর চাষিরা।
ঠাকুরগাঁওয়ের সদর উপজেলার আলু চাষি মানিক বলেন, ‘‘আমরা বছরের পর বছর ধরে এই হিমাগারেই আলু রাখি। কিন্তু এখন এটি বন্ধ থাকায় আমাদের বিকল্প কোনো ব্যবস্থা নেই। মাঠে আলু রেখে দিলে তা শুকিয়ে যাবে, এতে আমরা বড় ক্ষতির মুখে পড়ব।’’
স্থানীয় কৃষকরা বলেন, ‘‘আমাদের ভুল বুঝিয়ে আন্দোলনে নামানো হয়েছে। মূলত কিছু মধ্যস্বত্বভোগী ও বড় ব্যবসায়ী নিজেদের স্বার্থে এ বিক্ষোভ করানো হয়। তাদের উদ্দেশ্য হিমাগার বন্ধ করে আমাদের আলু মাঠে নষ্ট করা। যাতে তারা কম দামে আলু কিনতে পারেন। দ্রুত হিমাগার খুলে দিতে হবে। নাহলে আমাদের আর্থিক ক্ষতির দায় প্রশাসনকেই নিতে হবে।’’
শাহী হিমাগারের ব্যবস্থাপক জানান, নোটিশ ছাড়াই হিমাগার সিলগালা করা হয়েছে। ইউএনও ও পুলিশের উপস্থিতিতে আমাদের অফিস কক্ষ ও প্রধান ফটকে তালা দেওয়া হয়। এ সময় কিছু ব্যবসায়ী আমাদের হুমকি ও গালিগালাজ করলেও প্রশাসন নীরব ছিলেন।
শাহী গ্রুপের চেয়ারম্যান আরমান হোসেন বলেন, ‘‘কী কারণে আমাদের হিমাগার সিলগালা করা হয়েছে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো তথ্য দেওয়া হয়নি। আমাদের হিমাগারে কোনো অবৈধ জিনিস ছিল না যে সিলগালা করতে হবে। সিলগালা করার ফলে যারা আমাদের কাছ থেকে স্লিপ নিয়েছিল তাদের আলু ক্ষেতের মধ্যে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। প্রশাসন দ্রুত হিমাগার খুলে না দিলে আমরা সংগঠনের পক্ষ থেকে কঠোর সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হব।’’
ব্র্যাকের ডিস্ট্রিবিউশন অফিসার লিটন খন্দকার বলেন, ‘‘আমরা শাহী হিমাগারে আলুর বীজ সংরক্ষণ করি। এটি বন্ধ থাকলে আমাদের বীজ নষ্ট হয়ে যাবে। মাঠের আলু দ্রুত সংরক্ষণ করতে না পারলে চাষিরা ভয়াবহ ক্ষতির মুখে পড়বে।’’
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফজলে এলাহী বলেন, ‘‘জেলা প্রশাসনের নির্দেশে হিমাগার সিলগালা করা হয়েছে। তবে কৃষকদের যাতে ক্ষতি না হয় সে বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনা চলছে।’’