
মঙ্গলবার সকালে জেলার মুলাদী থানা ঘেরাও করতে আসেন বাবুগঞ্জের মানুষ। ছবি: সাম্প্রতিক দেশকাল।
বরিশালে ডাকাতির অভিযোগে গ্রেপ্তার পাঁচজনকে ছাড়িয়ে নিতে ছাত্রদল নেতার নেতৃত্বে থানা ঘেরাওয়ের ঘটনা ঘটেছে।
মঙ্গলবার সকালে জেলার মুলাদী থানায় এ ঘটনা ঘটে।
মুলাদীতে রবিবার রাতে মানুষের মাঝে ডাকাত আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। এলাকাবাসীকে সতর্ক করতে মাইকিং করা হয় বিভিন্ন মসজিদ থেকে। এরপর সোমবার সকালে উপজেলার জয়ন্তী নদী থেকে অস্ত্রসহ নৌ-পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হয় পাঁচ ডাকাত।
এদের ছাড়িয়ে আনতে থানা ঘেরাও করতে যান পার্শ্ববর্তী বাবুগঞ্জ উপজেলার কিছু মানুষ। আর তাদের নেতৃত্ব দেন বরিশাল জেলা ছাত্রদলের সাংগঠনিক সম্পাদক সোহেল রাঢ়ী।
সোহেল রাঢ়ীর দাবি, যে পাঁচজনকে পুলিশ গ্রেপ্তার করা হয়েছে তাদের মধ্যে মহিউদ্দীন ওরফে পিস্তল মহিউদ্দীন ছাড়া বাকিরা নির্দোষ। সেখানে একজন যুবদল নেতাও আছেন। আওয়ামী লীগের ইউপি চেয়ারম্যান ষড়যন্ত্র করে তাদের ফাঁসিয়েছেন।
এদিকে পাঁচ ডাকাত আটক হলেও নৌ-পুলিশ বাদী হয়ে তাদের নামে অস্ত্র মামলা করেছেন। ওই মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে তাদের আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে।
মুলাদী থানার ওসি জহিরুল আলম এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
কারাগারে যাওয়া পাঁচ ডাকাত সদস্য হলেন, বরিশাল সিটি করপোরেশনের ২৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাশিপুরের বাসিন্দা মহিউদ্দীন, বরিশাল সিটির ১০ নম্বর ওয়ার্ডের হাবিব, বরিশালের গৌরনদীর সরিকল ইউনিয়নের কাণ্ডপাশা গ্রামের ইদ্রিস ফকির, বাবুগঞ্জ উপজেলার জাহাঙ্গীরনগর ইউনিয়নের চরফতেহপুর গ্রামের ফিরোজ আকন এবং একই উপজেলার নতুন চরজাহাপুর গ্রামের সায়েম ব্যাপারী।
এরমধ্যে মহিউদ্দীন মহানগর আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত এবং ওয়ার্ড যুবলীগের পদ প্রত্যাশি ছিলেন। তার বিরুদ্ধে অস্ত্র ও মাদকসহ বিভিন্ন অপরাধে অন্তত এক ডজন মামলা রয়েছে। ফিরোজ আকন ইউনিয়ন যুবদলের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন।
ডাকাত দলের পাঁচ সদস্যকে আটক করার সময় আরও ২০ থেকে ২৫ জন পালিয়ে যায় বলে দাবি পুলিশ এবং প্রত্যক্ষদর্শীদের।
নদী থেকে আটকের পর তাদের কাছ থেকে একটি পন্টুন ও একটি ভেকু মেশিন উদ্ধার করে পুলিশ। পাশাপাশি তাদের কাছ থেকে একটি শর্টগান, একটি চাইনিজ রাইফেল, ১৭টি কাতুর্জ, পাঁচটি রাইফেলের গুলি, ১৬টি রিভলবারের গুলিসহ আরও অনেক অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে।
মুলাদী নৌ-পুলিশ পরিদর্শক শফিকুল ইসলাম জানান, শনিবার বিকেলে বাবুগঞ্জ উপজেলার কেদারপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নূরে আলমের ইটভাটা থেকে পন্টুন ও ভেকু ডাকাতি হয়। ওই ভেকু ও পন্টুন জয়ন্তী নদীর মাদারীপুরের কালকিনি উপজেলার নুর মোহাম্মদ মোল্লার ইটভাটায় এলাকায় নিয়ে রাখা হয়। পরে ভেকু ও পন্টুনসহ দুইটি ট্রলারযোগে ২০ থেকে ২৫ জন ডাকাত বাবুগঞ্জের দিকে পালিয়ে যাচ্ছিল। এ সময় স্থানীয়রা ধাওয়া দিয়ে পাঁচজনকে আটক করে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ডাকাতির পন্টুন এবং ভেকু পাচারের সময় ডাকাত দলের সঙ্গেই ছিলেন বরিশাল জেলা ছাত্রদলের সাংগঠনিক সম্পাদক হোসেল রাঢ়ী। জনতা ডাকাত বলে ধাওয়া করার পর তিনি বিকল্পপথে মাছ ধরার ট্রলারে পালিয়ে যান।
তবে এ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন জেলা ছাত্রদল নেতা সোহেল রাঢ়ী।
ওসি জহিরুল আলম বলেন, “বাবুগঞ্জ থেকে এক-দেড়শ মানুষ গ্রেপ্তারদের পক্ষে থানায় আসেন। তাদের দাবি, গ্রেপ্তার পাঁচজন ষড়যন্ত্রের শিকার। আমরা তাদের জানিয়েছি, অভিযোগ তদন্ত করে দেখা হবে। তারা যদি জড়িত না থাকেন, তাহলে মুক্তি পাবেন।”
সোহেল রাঢ়ী বলেন, “যে পাঁচজন গ্রেপ্তার হয়েছেন তাদের মধ্যে মহিউদ্দীনকে নিয়ে আমার কোনো মন্তব্য নেই। তবে বাকি যে চারজনের মধ্যে একজন ইউনিয়ন যুবদলের নেতাও আছেন। তারা ডাকাত না।”
তবে যারা গ্রেপ্তার হয়েছেন তারা ভোরবেলায় পন্টুন ও ভেকু নিয়ে কোথায় যাচ্ছিলেন এবং উদ্ধার হওয়া অস্ত্র কোথা থেকে এলো, সে বিষয়ে কিছুই বলতে পারেননি সোহেল রাঢ়ী।
থানা ঘেরাও প্রশ্নে তিনি বলেন, “আমি থানা ঘেরাও করতে যাইনি। বাবুগঞ্জের সন্তান হিসেবে স্থানীয় মুরব্বিদের দাবির কারণে সেখানে গিয়েছিলাম।”