
ফাইল ছবি
পাকিস্তান শাসনামলে ১৯৬০ সালের দিকে পার্বত্য চট্টগ্রাম জেলার কাপ্তাইয়ে খরস্রোতা কর্ণফুলী নদীতে বাঁধ দেওয়ার ফলে বিস্তৃত এলাকাজুড়ে সৃষ্টি হয় ৩৫৬ বর্গমাইলের কৃত্রিম কাপ্তাই হ্রদ। দেশ স্বাধীন ও পরবর্তী সময়ে পার্বত্য চট্টগ্রামকে তিন ভাগে বিভক্তির পর কাপ্তাই উপজেলাটি রাঙামাটি জেলার মধ্যে পড়ে। মূলত ষাটের দশকে কর্ণফুলী নদীতে বাঁধ দিয়ে জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রে বিদ্যুৎ উৎপাদন প্রধান লক্ষ্য হলেও সুবিশাল কাপ্তাই হ্রদ ক্রমাগত পরিণত হয়েছে পার্বত্য চট্টগ্রামের মৎস্য ভান্ডারে। রাঙামাটির আট ও খাগড়াছড়ির দুই উপজেলা নিয়ে বিস্তৃত কাপ্তাই হ্রদ এখন দেশের স্বাদু পানির কৃত্রিম জলাধারের মধ্যে সর্ববৃহৎও। সাম্প্রতিক এক গবেষণা প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, গত দেড় দশকে কাপ্তাই হ্রদে ছয় প্রজাতির মাছ বেড়েছে। ২০০৬ সালে হ্রদে ৭৫ প্রজাতির মাছ পাওয়া গেলেও ২০২২ সালের গবেষণায় ৮১ প্রজাতির মাছের অস্তিত্ব মিলেছে।
কাপ্তাই হ্রদের মাছের প্রজাতি ও বাস্তুতন্ত্র দিয়ে গবেষণা করে বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিএফআরআই)। প্রতিষ্ঠানটির রাঙামাটি নদী উপকেন্দ্রের তথ্য মতে, ২০২২ সালের জুনে শেষ হওয়া এক গবেষণায় দেখা গেছে, কাপ্তাই হ্রদে বর্তমানে ৮১ প্রজাতির মাছ রয়েছে। এর মধ্যে ৭২ প্রজাতির দেশি ও ৯ প্রজাতির বিদেশি মাছ রয়েছে; বিদেশি প্রজাতির মধ্যে রয়েছে ক্ষতিকারক সাকার মাউথ ক্যাটফিশও। বিএফআরআইয়ের ২০০৬ সালের তথ্যে বলা হয়েছিল, কাপ্তাই হ্রদে ৭৫ প্রজাতির মাছের মধ্যে ৬৭ প্রজাতির দেশি ও আট প্রজাতি রয়েছে বিদেশি। সে হিসাবে গত দশকে মোট প্রজাতি বেড়েছে ছয়টি। এর মধ্যে পাঁচটি দেশি ও একটি বিদেশি (সাকার)।
বিএফআরআইয়ের গবেষকরা বলছেন, রাঙামাটি সদর, বরকল, কাপ্তাই, লংগদু ও খাগড়াছড়ির মহালছড়ি উপজেলা থেকে মাছের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। গবেষণায় দেখা গেছে, কাপ্তাই হ্রদে ১০ প্রকারের জাল ও ছয়টি পদ্ধতিতে মাছ শিকার করা হয়ে থাকে। কাপ্তাই হ্রদে ছোট প্রজাতির মাছের আধিক্য বেশি। সবচেয়ে বেশি
প্রাকৃতিক প্রজনন ঘটে ছোট (স্থানীয়) প্রজাতির মাছের। হ্রদের মাছের ৯৫ শতাংশ কাচকি, চাপিলা ও মলা। বিদেশি ৯ প্রজাতির মাছের মধ্যে রয়েছে গ্রাসকার্প, সিলভার কার্প, বিগহেড কার্প, কার্পিও, থাই সরপুঁটি, থাই পাঙাশ, মোজাম্বিকা তেলাপিয়া, নাইলোটিকা তেলাপিয়া ও সাকার মাউথ ক্যাটফিশ।
তবে সাধারণত অ্যাকোয়ারিয়ামে শোভাবর্ধনের জন্য রাখা ক্ষতিকর সাকার মাউথ ক্যাটফিশ পাওয়া যাচ্ছে কাপ্তাই হ্রদে, যা কাপ্তাই হ্রদে মৎস্য প্রজনন ও বৃদ্ধির জন্য ক্ষতির কারণ। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে জেলার লংগদুসহ অন্যান্য উপজেলায় বিদেশি প্রজাতির এই মাছটি পাওয়া যেতে শুরু করে। গবেষকরা বলছেন, বাংলাদেশে কোনো একসময় এই প্রজাতির মাছটি অ্যাকোয়ারিয়ামে শোভার জন্য আনা হলেও পরবর্তী সময়ে সেটি মানুষের অসচেতনতায় জলাশয়ে ছড়িয়ে পড়েছে। কাপ্তাই হ্রদের এই মাছ পাওয়ার কারণ হতে পারে কেউ অ্যাকোয়ারিয়ামের মাছ হ্রদে ফেলেছে। পরবর্তী সময়ে এটি হ্রদে ছড়িয়ে পড়ে। তবে এখনো সাকার মাউথ ক্যাটফিশ কাপ্তাই হ্রদে খুব বেশি পাওয়া যায় না।
রাঙামাটি ও খাগড়াছড়ি জেলার মৎস্য অধিদপ্তরের হিসাবে, রাঙামাটির রাজস্থলী ও কাউখালী ছাড়া বাকি আট উপজেলা ও খাগড়াছড়ির দীঘিনালা এবং মহালছড়ি উপজেলা মিলে কাপ্তাই হ্রদের ওপর নির্ভরশীল প্রায় ২৭ হাজারের অধিক নিবন্ধিত জেলে রয়েছেন।