নদীমাতৃক বাংলাদেশের নদ-নদী এক সময় ছিল ঘড়িয়ালের প্রাকৃতিক আবাসস্থল। কিন্তু পরিবেশ বিপর্যয় ও মানবসৃষ্ট নানা কারণে বিলুপ্তির পথে চলে যাওয়া এই জলজ প্রাণীকে রক্ষায় রাজশাহীতে গড়ে তোলা হলো দেশের প্রথম ঘড়িয়াল প্রজনন কেন্দ্র।

সামাজিক বন বিভাগের উদ্যোগে রাজশাহীর পবা নার্সারির একটি পুকুরে সম্প্রতি এই কেন্দ্রটি স্থাপন করা হয়েছে।

মঙ্গলবার গাজীপুর সাফারি পার্ক থেকে আনা একটি পুরুষ ও একটি স্ত্রী ঘড়িয়াল প্রজনন পুকুরে অবমুক্ত করেন বন অধিদপ্তরের প্রধান বন সংরক্ষক আমির হোসাইন চৌধুরী। তিনি বলেন, “নদী দূষণ, নাব্য হ্রাস, অতিরিক্ত মাছ আহরণ, অবৈধ শিকার ও পাচার, খাদ্য সংকট এবং ডিম নষ্ট হওয়ার কারণে ঘড়িয়ালের প্রজনন হুমকির মুখে পড়েছে। ফলে এই নিরীহ ও উপকারী প্রাণী এখন মহাবিপন্ন।”

ঘড়িয়াল অবমুক্তকরণ অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন উপপ্রধান বন সংরক্ষক গোবিন্দ রায়, বন্যপ্রাণী ও প্রকৃতি সংরক্ষণ অঞ্চলের বন সংরক্ষক ছানাউল্ল্যা পাটওয়ারী, সামাজিক বন অঞ্চল বগুড়ার সংরক্ষক মুহাম্মদ সুবেদার ইসলাম, বিভাগীয় বন কর্মকর্তা রফিকুজ্জামান শাহ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. কামরুল হাসান, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. এ. এম সালেহ রেজা, আইইউসিএনের প্রোগ্রাম কো-অর্ডিনেটর এবিএম সরোয়ার আলম এবং সেভ দ্য ন্যাচার অ্যান্ড লাইফ, রাজশাহীর চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান।

ঘড়িয়াল সংরক্ষণে এই উদ্যোগ নতুন নয়। ২০১৭ সালের ১৩ আগস্ট রাজশাহীর শহীদ এএইচএ কামারুজ্জামান কেন্দ্রীয় উদ্যান ও চিড়িয়াখানার একটি পুকুরে ঘড়িয়ালের প্রজননের উদ্যোগ নেওয়া হয়। সে সময় চিড়িয়াখানায় দুটি স্ত্রী ঘড়িয়াল ছিল, যেগুলো আগে জেলেদের জালে ধরা পড়ে উদ্ধার করা হয়। এর একটিকে পাঠানো হয় ঢাকা চিড়িয়াখানায়, যার নাম রাখা হয় ‘যমুনা’। ঢাকায় ছিল চারটি পুরুষ ঘড়িয়াল। অন্যদিকে ঢাকা থেকে একটি পুরুষ ঘড়িয়াল এনে রাজশাহীর পুকুরে ছাড়া হয়, তার নাম দেওয়া হয় ‘গড়াই’। আর রাজশাহীতে আগে থেকেই থাকা স্ত্রী ঘড়িয়ালটির নাম হয় ‘পদ্মা’।

এটির ফলে ‘যমুনা’ ঢাকা চিড়িয়াখানায় তিনটি পুরুষ সঙ্গী পায়, আর রাজশাহীর ‘পদ্মা’ পায় ‘গড়াই’-কে। তবে আট বছরেও তাদের কোনো বাচ্চা হয়নি। কারণ ছিল প্রজননের অনুপযোগী পরিবেশ। তাই এবার আইইউসিএন এবং সামাজিক বন বিভাগের যৌথ উদ্যোগে রাজশাহীতে গড়ে তোলা হলো ঘড়িয়ালের উপযোগী প্রজনন কেন্দ্র।

প্রাণিবিদ ও পরিবেশবিদদের মতে, যথাযথ ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে এই উদ্যোগ সফল হলে ঘড়িয়াল আবারও ফিরে পেতে পারে দেশের নদীনির্ভর প্রকৃতিতে তার হারানো আবাস।