-Ghani--Pic-01-6801cec9cb4a2.jpg)
কাঠের ঘানিতে তৈরি হচ্ছে সরিষার তেল। ছবি: দিনাজপুর প্রতিনিধি
‘কলু’, ‘তেলি’, ‘ঘানি’ বা ‘তেলের গাছ’- এই শব্দগুলোর সঙ্গে বর্তমান প্রজন্মের তেমন পরিচয় নেই বললেই চলে। আগে গ্রামে-গঞ্জে ও হাট-বাজারে মাটির হাঁড়িতে ফেরি করে বিক্রি হতো কাঠের ঘানিতে উৎপাদিত খাঁটি সরিষার তেল। হাঁড়ির ঢাকনির নিচে থাকত তালের বিচির খোসা দিয়ে বানানো বাঁশের হাতলের ওরং। তেল তুলে দেওয়ার ক্ষেত্রে এই ওরং ব্যবহৃত হতো।
কালের বিবর্তনে দেশের প্রায় সব অঞ্চল থেকেই হারিয়ে যাচ্ছে কাঠের ঘানিতে উৎপাদিত তেল তৈরির প্রক্রিয়াটি। প্রায় বিলুপ্ত হচ্ছে ঘানি বা তেলের গাছ। নিত্যনতুন যন্ত্রপাতির আবিষ্কারের ফলে শত বছরের ঐতিহ্য গরু দিয়ে সরিষা তেল উৎপাদনের পেশা ছেড়ে অন্য পেশায় পাড়ি দিতে বাধ্য হচ্ছেন কলুরা।
তবে এখনো দেশে-বিদেশে অনেকে লাভ-ক্ষতির হিসাব না কষে সন্ধান করেন শতভাগ প্রাকৃতিক বিশুদ্ধতায় কাঠের ঘানিতে তৈরি সরিষার তেল, যা এখন পাওয়া খুবই বিরল। তবে এর অভাব অনেকটা পূরণ করছে নতুন এক পদ্ধতিতে উৎপাদিত সরিষার তেল। নতুন পদ্ধতিতে প্রচলিত ‘গরুর’ পরিবর্তে ব্যাটারিচালিত মোটরসাইকেল ও অটোরিকশা দিয়ে ঘানিতে সরিষার তেল উৎপাদন করা হচ্ছে।
আবেগের বশে এভাবেই তিন পুরুষের পেশা টিকিয়ে রেখেছে দিনাজপুরের বোচাগঞ্জ উপজেলার কয়েকটি পরিবার। এরই মধ্যে দুটি পরিবার ‘যান্ত্রিক গরু’ (ব্যাটারিচালিত মোটরসাইকেল ও অটোরিকশা) দিয়ে ঘানিতে সরিষার তেল উৎপাদন করে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, উপজেলার ১ নম্বর নাফানগর ইউনিয়নের ছোট সুলতানপুর গ্রামে তিনজন ও ৬ নম্বর রনগাঁও ইউনিয়নের কনুয়া গ্রামে একজন কাঠের ঘানিতে সরিষা দিয়ে তেল উৎপাদন করছেন। সরেজমিনে তাদের বাড়িতে গিয়ে শুনতে পাওয়া যায় ‘যান্ত্রিক গরুর’ (ব্যাটারিচালিত মোটরসাইকেল ও অটোরিকশা) ঘানির ক্যাঁচ ক্যাঁচ শব্দ।
এ নিয়ে কথা হয় দিনাজপুরের বোচাগঞ্জ উপজেলার বিজেন্দ্র নাথের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘আইয়ুবের শাসন আমল থেকে আমরা ঘানিতে সরিষা দিয়ে তেল উৎপাদন করে আসছি। বাবার মৃত্যুর পর আমি এই ব্যবসা শুরু করি। কিন্তু বর্তমানে গরু দিয়ে তেল তৈরি করা ঝামেলার ব্যাপার হয়ে গেছে। সময় বেশি লাগে, বাড়তি একজনকে সব সময় থাকতে হয়। এ ছাড়া তেল উৎপাদনের সময় গরুর চোখ বেঁধে রাখতে হয়, যা আত্মীয়স্বজনরাও পছন্দ করে না। এ জন্য গরুর পরিবর্তে এখন কলে তেল ভাঙানো হয়।’
একই গ্রামের বিষ্ণু পদ রায় বলেন, ‘আমি ৩০ বছর থেকে ঘানিতে তেল উৎপাদন করছি। এর আগে আমার বাবা, তার আগে আমার দাদাও ঘানিতে তেল উৎপাদন করতেন। আমিও গরু দিয়ে ঘানিতে তেল উৎপাদন করতাম। তবে বর্তমানে আমি মোটরসাইকেল দিয়ে ঘানিতে তেল উৎপাদন করছি। গরু দিয়ে করলে সময় বেশি লাগে, এ ছাড়া একজন মানুষ সব সময় লেগে থাকতে হতো। এ কারণে মোটরসাইকেল দিয়ে ঘানিতে তেল উৎপাদন করছি।