Logo
×

Follow Us

জেলার খবর

৫৩ বছর ধরে বাদ্যযন্ত্র ও বাঁশের আসবাবপত্র তৈরি করছেন শিল্পী আ. সাত্তার

Icon

সালাহ উদ্দীন খান রুবেল

প্রকাশ: ১৮ এপ্রিল ২০২৫, ১০:০৭

৫৩ বছর ধরে বাদ্যযন্ত্র ও বাঁশের আসবাবপত্র তৈরি করছেন শিল্পী আ. সাত্তার

বাদ্যযন্ত্র ও বাঁশের আসবাবপত্র। ছবি: বরিশাল প্রতিনিধি

বাঁশের খাট, পালং, শোকেসসহ গৃহস্থালি কাজের বিভিন্ন জিনিসপত্র সনাতনী পদ্ধতিতে তৈরি করে তা বিক্রির মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহ করছেন নব্বই বছরের বৃদ্ধ আ. সাত্তার। নেত্রকোনা জেলার কেন্দুয়া উপজেলার মাসকা ইউনিয়নের চকসাদক কোনাপাড়া গ্রামে সাত্তারের বাড়ি। বাঁশের আসবাবপত্র তৈরি ছাড়াও সাত্তার তার বাড়ির ছোট্ট আঙিনায় প্রতিষ্ঠা করেছেন দেশীয় বাদ্যযন্ত্র তৈরির কারখানা। লোহার ফ্রেম তৈরি করে হাতেটানা মেশিন বসিয়ে খুন্দাই কাজের মাধ্যমে সনাতনী পদ্ধতিতে তৈরি করছেন স্বরাজ, দোতারা, একতারা, ডুগডুগি, খঞ্জনি, ঢোল, খমক, ঘাইল, বেলাইন ইত্যাদি।

এ ছাড়া বাঁশ-বেতের মাধ্যমে তৈরি করছেন মাছ শিকারের চাঁই (বাইর), পলো, ঝুপড়া, চুপরাসহ আরো বিভিন্ন পণ্য। ক্রেতারা তার বাড়িতে এসে এসব পণ্য ক্রয় করে নিয়ে যায়। সাত্তারের তৈরি এসব পণ্যের মূল্য খুব বেশি নয়। এর কারণ সম্পর্কে তিনি জানান, শুধু ব্যবসা লাভের আশায় এগুলো তৈরি করেন না। এ কাজকে তিনি শিল্প হিসেবে মনে করেন। তাই মনের মাধুরী মিশিয়ে একটু একটু করে এসব জিনিস তৈরি করেন।

যে কারণে নিজে কাঠমিস্ত্রি হিসেবে ৫৩ বছর ধরে মানুষের ঘরবাড়ি নির্মাণ ও ঘর সাজানোর আসবাবপত্র তৈরি করলেও নিজের একটি ভালো ঘর তৈরি করা সম্ভব হয়নি। নিদারুণ অর্থকষ্টে একটি ভাঙা ঘরে জীবন যাপন করছেন হস্তশিল্পের এই কারিগর। সাত্তার আরো জানান, তার কোনো প্রাতিষ্ঠানিক পড়াশোনা নেই। স্ত্রী আবিয়া খাতুন, তিন সন্তানসহ ২১ জনের পরিবারটি নিয়ে মাত্র সাড়ে ৩ শতাংশ জমিতে তাদের বসবাস। প্রথম দিকে শখ করে এসব তৈরি করলেও পরে এটিই পেশা ও নেশা হয়ে ওঠে। ৪০ থেকে ৪৫ বছর আগে উত্তর মাসকা গ্রামের ঘাণি তৈরির কারিগর আ. জব্বারের কাছে কারুকাজের তালিম নিয়েছিলেন তিনি। 

এ কাজে সংসার চলে? এমন প্রশ্নের জবাবে এই শিল্পী বলেন, একদম চলে না। ঘরটা ভেঙে পড়ছে, মেরামত করতে পারছি না। ছেলেরা মিস্ত্রির কাজ করলেও তারা আলাদা থাকে। একসময় বৈঠকি বাউল গান করতাম, এখন আর করি না। আমার তৈরি বাদ্যযন্ত্র দিয়ে শিল্পীরা যখন গানবাজনা করে আমার তখন খুবই আনন্দ হয়। তখন ভুলে যাই পেটে ভাত না থাকার কথা।

সাত্তারের স্ত্রী আবিয়া খাতুন বলেন, ‘সারা জীবন মানুষটা কষ্টই করল। থাকার মতো একটা ঘর পর্যন্ত নেই। সরকার যদি একটা ঘর, একটা খুন্দাইল মেশিন দিত বাকি জীবনডা একটু শান্তি পাইত’। স্থানীয় একাধিক বাসিন্দা বলেন, আ. সাত্তার একজন অসাধারণ গুণী মানুষ। সারা জীবন ধরে  তিনি এ কাজগুলোই করে যাচ্ছেন। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা ও সহযোগিতা পেলে শেষ জীবনে একটু শান্তি পেতেন।

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫