গাড়ি থামিয়ে গরু নিয়ে দুই পক্ষে টানাটানি, সংঘর্ষের শঙ্কা

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৫ মে ২০২৫, ১২:০৬

রাজশাহীতে রাস্তায় গরুবাহী গাড়ি থামিয়ে হাটে তোলার চেষ্টা করছেন দুই পক্ষের লোকজন। সিটিহাট ও দামকুড়া পশুহাটের ইজারাদারদের এই রশি টানাটানিতে রীতিমতো অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। গরু নিয়ে চলছে জোরাজুরি। এ নিয়ে যেকোনো সময় সংঘর্ষের আশঙ্কা করা হচ্ছে।
রাজশাহী সিটি করপোরেশনের আওতায় থাকা সিটিহাটের ইজারা পেয়েছেন শওকত আলীসহ কয়েকজন। অন্যদিকে পবা উপজেলার অধীনে থাকা দামকুড়া পশুহাট ইজারা নিয়েছেন মোহাম্মদ সাহ জাহান আলী নামে এক ব্যক্তি।
জানা যায়, ১৯৮৯ সালে চালু হওয়া দামকুড়া পশুহাট ২০০৫ সাল পর্যন্ত সক্রিয় ছিল। এরপর সিটিহাট চালু হলে একটি প্রভাবশালী মহল দুই হাটই ইজারা নিয়ে দামকুড়া হাটটি বন্ধ রাখে। এ বছর নতুন করে আলাদা ইজারা হওয়ায় দুই পক্ষ মাঠে সক্রিয় হয়। উভয় হাট বসে সপ্তাহে দুই দিন-রবিবার ও বুধবার।
দামকুড়া হাটের ইজারাদার সাহ জাহান আলীর অভিযোগ, সিটিহাটের লোকজন বিভিন্ন জায়গায় গরুবাহী গাড়ি আটকে জোর করে গরু হাটে নিয়ে যাচ্ছে। বিষয়টি জানিয়ে গত ২৯ এপ্রিল বিভাগীয় কমিশনার বরাবর লিখিত অভিযোগ করেছে তিনি, যার অনুলিপি পাঠানো হয়েছে রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার, জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার ও ইউএনও’র কাছেও।
অভিযোগে বলা হয়েছে, ২৩ ও ২৭ এপ্রিল হাটের দিনে সিটিহাটের লোকজন পলাশবাড়ি, কদমশহর, কাঁকনহাট, দারুসা, হাজির মোড়সহ অন্তত ১০টি স্থানে অবস্থান নিয়ে গরুবাহী গাড়ি আটকে দেয় এবং দেশীয় অস্ত্র দেখিয়ে সিটিহাটে যেতে বাধ্য করে।
রবিবার সকালে মুরারিপুর সিদ্দিকের মোড়ে দেখা যায়, দুই পক্ষই গরুবাহী নসিমন-করিমনগুলোকে তাদের হাটে নেওয়ার চেষ্টা করেন। ফলে মহাসড়কে গাড়ির জট দেখা দেয়। একপর্যায়ে দামকুড়া থানা-পুলিশ গিয়ে গাড়িগুলো সিটিহাটের দিকে পাঠিয়ে দেয়।
এই ঘটনায় ইজারাদার সাহ জাহান আলী পুলিশের নিরপেক্ষতা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন।
একইদিন দুপুরে দামকুড়া হাটে অল্প সংখ্যক গরু দেখা যায়।
গোদাগাড়ীর কুন্দলিয়া গ্রামের গরুর ব্যাপারি আব্দুর রহমান মিলন বলেন, “জোর করে আমার গাড়ি এখানে ঢোকানো হয়েছে। কিন্তু হাটে তো ক্রেতাই নেই। সিটিহাটে গেলে ভালো হতো।”
আমতলীর রাকিব আলী বলেন, ‘সিটিহাটে যেতে চেয়েছিলাম। কিন্তু পথে ধরে এখানে নিয়ে আসছে। অনেকে পরে আবার গরু প্রতি ছাড়ের টাকা দিয়ে এখান থেকে বের হয়ে গেছেন।’
তবে এসব দাবি অস্বীকার করে সাহ জাহান আলী বলেন, “আমরা কখনো গরু ধরে আনি না। বরং সিটিহাটের লোকজন প্রথম থেকেই এটা করছে। বাধ্য হয়েই আমাদের লোকজন এখন মাঠে নেমেছে।”
সিটিহাটের ইজারাদার শওকত আলী বলেন, “আমরা কাউকে জোর করছি না। তারা (দামকুড়া পক্ষ) গরু ধরে নিচ্ছে। আমরা বরং বলছি, ব্যাপারিরা যেন নিজ পছন্দের হাটে যেতে পারে।”
গরু নিয়ে দুই পক্ষ যেভাবে টানাটানি করছে তাতে যেকোনো সময় বড় ধরনের সংঘর্ষের আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা।
রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার (মিডিয়া) মোহাম্মদ রকিবুল হাসান ইবনে রহমান বলেন, “একই দিনে দুই হাট হওয়ায় এমন সমস্যা হচ্ছে। তবে পুলিশ মাঠে কাজ করছে। কারও গরু নিয়ে টানাটানির সুযোগ নেই। ব্যবসায়ীরা যেদিকে যেতে চান, যেতে পারবেন।
“এ নিয়ে এখনো বড় ধরনের উত্তেজনা হয়নি। তবে প্রয়োজনে পুলিশ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে।”