বিরামপুরে মদপানে স্বামী-স্ত্রীসহ ৬ জনের মৃত্যু

দিনাজপুর প্রতিনিধি
প্রকাশ: ২৭ মে ২০২০, ১৯:১৭

দিনাজপুরে বিরামপুরে বিষাক্ত অ্যালকোহল পানে এক নারীসহ ৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। বেশ কয়েকজন গুরুতর অসুস্থ হয়ে বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। ঘটনায় জড়িত সন্দেহে ওই এলাকার পল্লী হোমিও হলের সত্ত্বাধিকারী ডা. আব্দুল মান্নানকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়েছে।
বুধবার (২৭ মে) ভোর রাতে পৌরশহরের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের মাহমুদপুর এলাকায় ৩ জন এবং উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শহরের হঠাৎপাড়া এলাকার ২জন মারা যান। সর্বশেষ বুধবার ৩টা ২০ মিনিটে দিনাজপুর এম আব্দুর রহিম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আরো একজনের মৃত্যু হয়।
নিহতরা হলেন- পৌরশহরের মাহমুদপুর এলাকার আনোয়ারুল ইসলামে ছেলে আব্দুল মতিন (২৭), তোজাম্মেল হোসেনের ছেলে আজিজুল ইসলাম (৩৩), একই এলাকার সুলতান মাহমুদের ছেলে মহসিন আলী (৩৮); হঠাৎপাড়া এলাকার শফিকুল ইসলাম (৪৫) ও তার স্ত্রী মঞ্জুয়ারা (৩৫) এবং শহরের ইসলাম পাড়া এলাকায় তাপস কুমার এর ছেলে অমৃত রায় (২৫)।
এছাড়াও আশঙ্কাজনক অবস্থায় চিকিৎসাধীন রয়েছেন জালাল উদ্দিনের ছেলে আব্দুস সাত্তার (৩৭), শহিদুল ইসলামের ছেলে হৃদয় (২১), গোলাম মোস্তফার ছেলে জার্জেস শাহ (৩৮) এবং আব্দুল আজিজের ছেলে সোহেল রানা (৩০)। তারা সবাই পৌরশহরের মামুদপুর এলাকার বাসিন্দা।
মৃত মহসিন আলীর বাবা সুলতান মাহমুদ জানান, তার ছেলে শহরের পরিবহন শ্রমিকের কাজ করত। সে নিয়মিত মদ পান করত। সে ঈদের রাতেও মদ পান করে বাসায় আসলে পরিবারের লোকজন বকাঝকা করে। পরে মঙ্গলবার রাতে এলাকার বেশ কয়েক যুবকের সাথে আবারো সে মদ পান করে বাড়িতে আসে। ভোর রাতে হঠাৎ সে অসুস্থ হলে তাকে বিরামপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেয়া হয়। সেখানে তার শরীরের অবস্থার অবনতি হলে উন্নত চিকিৎসার জন্য রংপুর মেডিকেলে নেয়ার পথে তার মৃত্যু হয়।
অসুস্থ সোহেল রানার ভাই হাবিবুর রহমান হাবিব বলেন, এই এলাকার বেশ কিছু ছেলে অনেক দিন আগে থেকেই নিয়মিত বিষাক্ত মদ পান করত। গতকাল রাতে বেশ কয়েক বন্ধু মিলে বেশি পরিমাণে বিষাক্ত মদ পান করার কারণে একই এলাকার তিন জন মারা যান। গুরুত্বর অসুস্থ রয়েছেন বেশ কয়েক জন।
বিরামপুর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা সোলায়মান হোসেন মেহেদি বলেন, বুধবার ভোরে বিষাক্ত মদ পান করে গুরুত্বর অসুস্থ অবস্থায় ৫ ব্যক্তি চিকিৎসা নিতে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আসেন। এদের মধ্যে তিনজন রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়ার পথে এবং বুধবার দুপুরে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে স্বামী-স্ত্রীসহ আরো দুই জন মারা যান। এ নিয়ে মদ পানে মোট মৃতের সংখ্যা দাঁড়ালো ৫ জনে।
বিরামপুর পৌর মেয়র লিয়াকত আলী সরকার টুটুল বলেন, আমি বিষয়টি শুনে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। মদ পানে স্বামী-স্ত্রীসহ ৫ ব্যক্তির মৃত্যুর ঘটনায় লাশগুলো উদ্ধার করে থানায় নিয়ে গিয়েছে। ঘটনার সাথে জড়িত ব্যক্তিদের শাস্তির আওতায় আনতে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। সর্বশেষ ইসলাম পাড়া এলাকায় অমৃত রায় নামে আরো এক যুবক মারা যান।
বিরামপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনিরুজ্জামান মনির বলেন, মদ পানে স্বামী-স্ত্রীসহ উপজেলার ৬ ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। তাদের মধ্যে ৫ জনের লাশ উদ্ধার করে দিনাজপুর এম আব্দুর রহিম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হবে। রিপোর্ট আসলেই আসল ঘটনা জানা যাবে। তবে প্রাথমিক ভাবে ধারণা করা হচ্ছে, তারা সবাই বিষাক্ত মদ পান করে মারা গেছেন।
বিরামপুর সার্কেলের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার মিথুন সরকার বলেন, এক দিনে ৬ জনের মৃত্যু এটি একটি মর্মান্তিক ঘটনা। ঘটনার সন্দেহে এক পল্লী চিকিৎসককে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।