ফাহাদ হত্যাকাণ্ড
বারবার মুর্ছা যাচ্ছেন মা, বাকরুদ্ধ বাবা

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৭ অক্টোবর ২০১৯, ২০:০৩

আবরার ফাহাদের লাশ এবং ইনসেটে তার মায়ের আহাজারি। ছবি: সংগৃহীত
নিঃস্তব্দ রাতে হঠাৎ মোবাইলে কল আসে। ঘুম ভাঙা চোখে ফোন রিসিভ করে জানতে পারলেন তাদের আদরের সন্তান আর বেঁচে নেই। একটা পরিবারের জন্য এর থেকে দুঃস্বপ্নের রাতের আর্তনাদ আর কি হতে পারে? ছেলে হারানোর শোকে মুহূর্তের মধ্যেই যেন মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে। বারবার মুর্ছা যাচ্ছেন মা। আর বাকরুদ্ধ হয়ে যান বাবা।
কুষ্টিয়া শহরের ম আ আব্দুর রহিম সড়কে (পিটিআই রোড) ফাহাদের বাড়িতে এখন চলছে আহাজারি আর শোকের মাতম। পরিবারের পাশাপাশি এলাকাবাসীও বুঝে উঠতে পারছেন না কে বা কারা আর কী কারণে হত্যা করা হলো শান্ত-শিষ্ট ফাহাদকে।
আবরার ফাহাদ বুয়েটের ইলেক্ট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেক্ট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ও শের-ই-বাংলা হলের আবাসিক ছাত্র ছিলেন। রাত ৩টার দিকে হলের এক বড় ভাইয়ের মোবাইল কলে বাবা-মা জানতে পারেন তাদের সন্তান আর বেঁচে নেই। এর থেকে বাবা-মায়ের কাছে বড় আর্তনাদের শব্দ আর কি হতে পারে।
তবে, অভিযোগ উঠেছে, রোববার দিবাগত রাত ৩টার দিকে শের-ই-বাংলা হলের একতলা থেকে দোতলায় ওঠার সিঁড়ির মাঝ থেকে ফাহাদের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এর আগে রাতে হলের ২০১১ নম্বর কক্ষে তাকে পেটান বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতা। তারাই হত্যা করেন মেধাবী ছাত্র আবরার ফাহাদকে।
এদিকে আহাজারি করতে করতে মা রোকেয়া খাতুন জানান, কয়েক দিন আগে ছুটিতে বাড়ি আসে ফাহাদ। ২০ অক্টোবর পর্যন্ত বাড়ি থাকতে চেয়েছিল। সামনে পরীক্ষা তাই শনিবার ক্যাম্পাসে ফিরে যায়। রাতে ফোন আসে ফাহাদ আর নেই। আমার সন্তানকে যারা এমন নৃংশসভাবে হত্যা করেছে, তাদের সকলের দৃষ্টান্তমূলক বিচার চাই।
ফাহাদের বাবা বরকতুল্লাহ ব্র্যাকের নিরীক্ষক কর্মকর্তা ছিলেন। মা রোকেয়া খাতুন একটি কিন্ডারগার্টেন স্কুলের শিক্ষক। দুই ভাইয়ের মধ্যে ফাহাদ বড়। ছোট ভাই আবরার ফায়াজ ঢাকা কলেজের উচ্চ মাধ্যমিক দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। সেও ঢাকা কলেজের হোস্টেলে থেকে পড়াশোনা করে।
ফাহাদ লেখাপড়ায় বরাবর ভালো ছিল। কুষ্টিয়া জিলা স্কুলে পড়ার সূত্রে বাবা বরকতুল্লাহ গ্রাম ছেড়ে কুষ্টিয়া শহরে এসে বসবাস শুরু করেন। পরিবার জানিয়েছে, ফাহাদ কখনো রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হয়নি। কুষ্টিয়া থেকে এসএসসি পাস করার পর ঢাকায় চলে যায়।