ফেসবুকে স্ট্যাটাস, খুলনায় আ.লীগ নেতা বহিষ্কার

প্রতিনিধি, খুলনা
প্রকাশ: ১০ অক্টোবর ২০১৯, ১১:৪২

খুলনা জেলা আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সদস্য ডা. শেখ বাহারুল আলম। ছবি: সংগৃহীত
দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ করে ফেসবুকে সরকারপ্রধান ও দলীয়প্রধান এবং রাষ্ট্রবিরোধী বক্তব্য প্রকাশের অভিযোগে খুলনা জেলা আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সদস্য ডা. শেখ বাহারুল আলমকে দল থেকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে।
খুলনা জেলা আওয়ামী লীগের গতকাল বুধবার এক জরুরি সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। কেন তাকে দল থেকে স্থায়ী বহিষ্কারের জন্য কেন্দ্রে সুপারিশ করা হবে না, আগামী সাতদিনের মধ্যে সেই কারণ দর্শানোর জন্য সভা থেকে বলা হয়েছে।
আওয়ামী লীগের দফতর সম্পাদক অ্যাডভোকেট ফরিদ আহমেদের পাঠানো ই-মেইল বার্তায় এ তথ্য জানানো হয়। শৃঙ্খলা ভঙ্গ, সরকারপ্রধান, দলীয়প্রধান ও রাষ্ট্রবিরোধী বক্তব্য ফেসবুকে দেয়ায় এবং তা স্থানীয় একটি পত্রিকায় প্রকাশিত হওয়ার বাহারুল আলমকে বহিষ্কারের কারণ দেখানো হয়েছে চিঠিতে।
গত ৬ অক্টোবর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ‘ভারতের সঙ্গে কি চুক্তি হয়েছে তা জানার অধিকার এদেশের জনগণের রয়েছে’ এমন একটি স্ট্যাটাস দিয়েছিলেন বাহারুল আলম। তাঁর স্ট্যাটাসটি হুবহু যুগান্তরের পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো-
“ভারত-বাংলাদেশ দ্বিপক্ষীয় চুক্তি বলা হলেও বাস্তবে একপক্ষীয় সিদ্ধান্ত, বাংলাদেশের জনগণের স্বার্থ ও অধিকার চরম উপেক্ষিত
...........................
দুর্বল অবস্থানে থেকে বন্ধু-প্রতিম শক্তিধর প্রতিবেশী রাষ্ট্রের সাথে বৈঠকে-ফলাফল শক্তিধরের পক্ষেই আসে। বাংলাদেশ-ভারত উভয়-পক্ষীয় সমঝোতা স্মারক নাম দেওয়া হলেও বাস্তবে একপক্ষীয় সিদ্ধান্তই মেনে নিতে হয় দুর্বল রাষ্ট্রকে।
ভারত বাংলাদেশ থেকে তার সকল স্বার্থই আদায় করে নিয়েছে। বিপরীতে বাংলাদেশ ভারতের কাছ থেকে এখনও ন্যায্য হিস্যা আদায় করতে পারেনি।
১. দীর্ঘদিনের আলোচিত তিস্তা নদীর পানি বণ্টন এবারের দ্বিপক্ষীয় আলোচনায় স্থান পায়নি।
২. ভারতের প্রধানমন্ত্রী স্পষ্ট করে কিছু না বললেও তার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ্ হুংকার দিয়েছে নাগরিক পঞ্জীতে বাদ পড়া জনগণকে বাংলাদেশে ঠেলে দেওয়া হবে। তারপরেও এবারের সমঝোতা চুক্তিতে ‘অভ্যন্তরীণ’ অজুহাতে বিষয়টি স্থান পায়নি।
৩. বাংলাদেশে অবস্থানরত রোহিঙ্গা শরণার্থী মায়ানমারের রাখাইন রাজ্যে প্রত্যাবসনের বিষয়ে ভারত কিছু বলে নি ।
৪. তিস্তা নদীর পানি বণ্টন নিয়ে চুপ থাকলেও বাংলাদেশ অংশের ফেনী নদীর পানি ত্রিপুরা রাজ্যের পানীয় জল হিসাবে প্রতিদিন ১.৮২ কিউসেক টেনে নেবে ভারত। এ বিষয়ে বাংলাদেশ সম্মত হয়েছে।
৫. বাংলাদেশের জনগণের তরল গ্যাসের চাহিদা পূরণের ঘাটতি থাকলেও ভারতে তরল গ্যাস রপ্তানির সিদ্ধান্ত হয়েছে এবং যৌথভাবে সে প্রকল্প উদ্বোধনও হয়েছে।
৬. চট্টগ্রাম ও মংলা বন্দর ভারত কীভাবে ব্যবহার করবে, তা নির্ধারিত হলেও বাংলাদেশের জন্য ব্যবহারযোগ্য ভারতের কোনো বন্দর সেই তালিকায় ছিল না।
অমানবিক আচরণের শিকার হয়েও বাংলাদেশ পানি ও গ্যাস সরবরাহ দিয়ে মানবিকতার প্রদর্শন করেছে। বাংলাদেশের মানুষের স্বার্থ ও অধিকার উপেক্ষিত রেখে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক শেষ হয়েছে।
শক্তিধর প্রতিবেশীর আধিপত্যের চাপ এতোই তীব্র যে ভবিষ্যতে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব বজায় থাকবে কিনা আশংকা হয়। কারণ ভারতের চাপিয়ে দেওয়া সব সিদ্ধান্ত বাংলাদেশকে মেনে নিতে হচ্ছে।’’