Logo
×

Follow Us

জেলার খবর

আজ বিশ্ব আদিবাসী দিবস

জুমচাষ করেই টিকে আছে পাহাড়ের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীরা

Icon

সমির মল্লিক, খাগড়াছড়ি

প্রকাশ: ০৯ আগস্ট ২০২০, ১২:২৬

জুমচাষ করেই টিকে আছে পাহাড়ের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীরা

আজ বিশ্ব আদিবাসী দিবস। আদিবাসী হিসেবে স্বীকৃতি না মিললেও পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাস করে প্রায় ১৩টি ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী। শিক্ষা, সুপেয় পানি, চিকিৎসা, যোগাযোগ, বিদ্যুৎসহ আধুনিক বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর মানুষেরা।

জুম চাষের উপর নির্ভরশীল বেশির ভাগ মানুষ চরম দারিদ্র্যের সাথে লড়াই করে ঠিকে আছে। বছরের পর বছর জুম চাষই সিংহভাগ পাহাড়ির একমাত্র সম্বল। খাগড়াছড়িতে চাকমা, মারমা ও ত্রিপুরাসহ প্রায় ৩ লাখ ২০ হাজার পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর বসবাস। এদের বেশির ভাগই পাহাড়ের সনাতনী জুম চাষের উপর নির্ভরশীল। অন্তত ২০০ বছরের বেশি সময় ধরে এরা বংশ পরম্পরায় এই পেশায় জড়িত। জুমের উৎপাদিত ফসল দিয়ে সারা বছরে খাদ্য যোগান দিতে পারে না পাহাড়িরা। পার্বত্য চট্টগ্রামের আদিম চাষ পদ্ধতি ‘জুম’। ভৌগলিক গঠন অনুসারে দেশের দক্ষিণ পূর্বাঞ্চলে পার্বত্য চট্টগ্রামের ভূমিরূপ পাহাড় ও উপত্যকা বেষ্টিত। এখানকার জনগোষ্ঠীর মূল জীবিকা কৃষি। তিন পার্বত্য জেলার আয়তন ১৩ হাজার ১৮৪ বর্গ কিলোমিটার। তিন পার্বত্য জেলায় প্রতি বছর ১২ হাজার হেক্টর জমি জুম চাষ করা হয়।

পার্বত্য চট্টগ্রামের বেশির ভাগ ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর মানুষই জুমের উপর নির্ভরশীল। তবে উপর্যপুরি ও বিরতিহীনভাবে জুমে চাষাবাদ হওয়ায় কমছে জুম ভূমির উর্বরতা। ফলে উর্বরতা কমছে। জুমের ফসল না আসা পর্যন্ত অনেক সময় খাদ্য সংকটও দেখা যায়। জুমিয়ারা জানান, অতীতে এক পাহাড়ে জুম চাষ করার পর ১০ থকে ১৫ বছর পর সেই পাহাড় জুমের আবাদ করা হত। তবে বর্তমানে জনসংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় মাত্র ২ থেকে ৩ বছর পর একই পাহাড়ে জুমের আবাদ করা হচ্ছে। ‘জুম ভিত্তিক’ পাহাড়িদের জীবন মানের উন্নয়ন ঘটছে শ্লথগতিতে। জুমের যা উৎপাদিত হয় তা দিয়ে সারা বছরের খাদ্য উৎপাদন সম্ভব হয় না।

এছাড়া পার্বত্য চট্টগ্রামের অনেক গ্রাম, পাড়ায় এখানে পৌঁছেনি নাগরিক সুবিধা। দুর্গম যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে বঞ্চিত হচ্ছে শিক্ষা, চিকিৎসাসহ বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা থেকে। যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো না হওয়ায় অনেকে চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত।

অধিকাংশ পাহাড়ি গ্রামে এখনো পৌঁছেনি বিদ্যুতের আলো। তবে সাম্প্রতিক বছরগুলো সরকারি উদ্যোগে অনেকে সৌর বিদ্যুতের সুবিধা পেয়েছে। পাহাড়ে সুপেয় পানির তীব্র সংকট । শুষ্ক মৌসুমে পাহাড়ি ঝিরি ঝরনার পানি শুকিয়ে যায় অন্যদিকে বর্ষাকালে অতিবৃষ্টি পানি দূষিত হয়ে যায়। এ সময় বিভিন্ন গ্রামে পানিবাহিত রোগে অনেকে আক্রান্ত হয়।

স্থানীয় পাড়ার বাসিন্দা নবীন বিকাশ ত্রিপুরা জানান, আমাদের এখানে বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা নেই। শীত কালে ঝিরি ঝরনা শুকিয়ে যায়। বর্ষাকালে ঝরনার পানি দূষিত হয়ে যায়। অনেকে পানি বাহিত রোগে আক্রান্ত হয়। জুম চাষ করেও আমরা সারা বছর চলতে পারি না। অনেকে দিনে আনে দিনে খায়। যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো না হাওয়ায় আমরা চিকিৎসা সেবা পায়না।

পাড়ার বেশ কয়েকজন নারী সদস্য বলেন, পানির জন্য নির্ভর করতে হয়ে ঝিরি বা কুয়োর পানির উপর। পানির জন্য   সকালে গেলে বিকেলে আসতে হয়। সারা বছরই পানি সংকট।

সীমানা পাড়ার কার্বারী চয়ন ত্রিপুরা জানান, বিকল্প পেশায় না থাকায় বংশ পরম্পরায় জুম চাষ করে ঠিকে আছে পাহাড়ি জনগোষ্ঠী। তবে তা দিয়েও সারা বছর সংসার চলে না।

এখানে ১১০ পরিবারের বসবাস। সবাই জুমের উপর নির্ভরশীল। জুম চাষ ছাড়া এখানে বেঁচে থাকার কোন অবলম্বন নাই। তিনি আরো বলেন, পাড়ার কেউ কেউ নিজেদের উদ্যোগে সৌরবিদ্যুৎ এর ব্যবস্থা করেছে আবার অনেকের সেই সামর্থ্য নেই। ‘যুগের পর যুগ’ যায় অথচ আমাদের এখানে কোন পরিবর্তন নেই।

যে পাড়া যত দুর্গম এলাকায় সেখানকার মানুষ ততবেশি নাগরিক সুবিধা বঞ্চিত। মৌলিক চাহিদা বঞ্চিত এসব পিছিয়ে থাকা পাহাড়ি এলাকার উন্নয়নে সরকারের সুদৃষ্টি চান স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা। মেরুং ইউনিয়নের ইউপি সদস্য ঘনশ্যাম ত্রিপুরা জানান, মেরুং ইউনিয়নের প্রায় শতাধিক পাড়া রয়েছে। অধিকাংশ পাহাড়ি এখনো মৌলিক চাহিদা বঞ্চিত। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বিদ্যুৎ বিভিন্ন সুযোগ থেকে বঞ্চিত। এরা জুমের উপর নির্ভরশীল। সরকার যাতে এসব এলাকার উন্নয়নে বিশেষ দৃষ্টি দেন।

প্রতিবছর জ্যেষ্ঠ থেকে ভাদ্র মাস অব্ধি পাহাড়ে জুম চাষিদের খাদ্য স্বল্পতা দেখা যায়। এসময় অনেকে দিনমজুর বা বনজসম্পদ বিক্রি করে সংসার চালায়।

বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা জাবারাং এর নির্বাহী পরিচালক মথুরা বিকাশ ত্রিপুরা জানান, পার্বত্য চট্টগ্রামে জীবিকার প্রধান অবলম্বন জুমচাষ। জুমের ফসল ঘরে না তোলা পর্যন্ত অনেক জুমিয়া খাদ্য সংকটে থাকে। জুমচাষকে আধুনিকায়ন করাও সময়ের দাবি। জুমচাষকে সাধারণ কৃষি হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে সরকারি ঋণ সহায়তা প্রদান করা উচিত। এছাড়া পাহাড়ে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, যোগাযোগ, বিদ্যুৎসহ নাগরিক সুবিধা নিশ্চিত করার জন্য সরকারি-বেসরকারি সংস্থাগুলোকে এগিয়ে আসতে হবে। 


Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫