দেবীগঞ্জে মিথ্যা মামলায় প্রতিবেশীকে ফাঁসানোর অভিযোগ

পঞ্চগড় প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১৫ আগস্ট ২০২০, ১২:৩০

পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জ উপজেলায় মিথ্যা অপহরণ মামলায় প্রতিবেশীকে ফাঁসানোর অভিযোগ উঠেছে হবিবর রহমান নামে এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে।
উপজেলার পামুলি ইউনিয়নের মোসলেম পাইকান পাড়ায় এ ঘটনা ঘটেছে।
গত রবিবার (৯ আগস্ট) হবিবর রহমান দেবীগঞ্জ থানায় তার মেয়ে শারমিন আক্তারকে অপহরণের দায়ে পার্শ্ববর্তী এনায়েতপুর, সর্দারপাড়া ও লক্ষ্মীনারায়ণী এলাকার ছয়জনের নাম উল্লেখ করে মামলা দায়ের করেন। মামলার প্রধান আসামি করা হয়েছে পার্শ্ববর্তী দন্ডপাল ইউনিয়নের উত্তর এনায়েতপুর এলাকার আজমগীর হোসেনের ছেলে লায়ন ওরফে নয়ন।
মামলার নথি থেকে জানা যায়, হবিবরের মেয়ে শারমিন আক্তারকে মামলার ১নং আসামি নয়ন অনেকদিন থেকে উত্যক্ত করে আসছিল। বিষয়টি নয়নের পরিবারকে জানালে তারা কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। ৪ আগস্ট (মঙ্গলবার) সন্ধ্যায় শারমিন তার বড় চাচার বাসায় যাওয়ার জন্য বাড়ি থেকে বের হলে পথিমধ্যে নথিতে উল্লেখিত ছয় আসামি জোর করে মেয়েটিকে ব্যাটারি চালিত থ্রি হুইলারে উঠিয়ে নেয়। এরপর থেকে নয়ন ও শারমিনের আর কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি।
তবে সরেজমিনে গিয়ে অনুসন্ধানে ভিন্ন তথ্য উঠে এসেছে। একই এলাকার স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে অন্তত আটজন সাম্প্রতিক দেশকালকে জানিয়েছেন মামলার বিষয়টি ভিত্তিহীন।
মেয়ের প্রতিবেশী মোসলেম পাইকান এলাকার ষাটোর্ধ বৃদ্ধা লতিফা ও ছখিনা সাম্প্রতিক দেশকালকে বলেন, শারমিনের প্রায় আড়াই মাস আগে বিয়ে হয়েছে ঠাকুরগাঁও জেলার সদর উপজেলার শিবগঞ্জ পারপুগিপাড়া এলাকায়। কিন্তু মেয়ে অপ্রাপ্তবয়স্ক হওয়ায় এখন তার পরিবার বিয়ের বিষয়টি অস্বীকার করছেন। নয়নের সাথে তার প্রেমের সম্পর্কের বিষয়টি আমরা পরে জানতে পারি। শারমিন যদি নয়নের সাথে চলেও যায় তাহলে সে তার নিজ ইচ্ছায় গেছে। এখানে অপহরণের ঘটনা ঘটেনি।
একই কথা বলেন শারমিনের আরেক প্রতিবেশী ধান ব্যবসায়ী আবু বক্কর। আবু বক্কর সাম্প্রতিক দেশকালকে বলেন, প্রায় দুই মাস আগে হবিবর তার মেয়ের জামাইকে ফ্রিজ ও মোটরসাইকেল দেয়ার জন্য আমার কাছে ধান বিক্রি করেছিলেন। আর আজ সব অস্বীকার করছেন। নয়ন-শারমিনের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক থেকে থাকলে সেটা তাদের নিজস্ব বিষয়। কিন্তু অপহরণের মিথ্যা মামলা দিয়ে তার বাবা, চাচাসহ আরো তিন প্রতিবেশীকে হয়রানি করা হচ্ছে।
ছেলের বড় বোন মনি বলেন, নয়ন আর শারমিনের মধ্যে আগে থেকে প্রেমের সম্পর্কের বিষয়টি আমরা বুঝতে পারিনি। মঙ্গলবার (৪ আগস্ট) ঘটনার দিন মেয়ের বাবা আমার স্বামী রশিদুলকে মুঠোফোনে কল করে বলে শারমিন বাসায় নেই, নয়নের সাথে বাসা থেকে চলে গেছে। তখন আমার স্বামীসহ বিষয়টি খোঁজ নিতে বাবার বাসায় আসি। বাসায় আসার পর আমার ভাইয়ের সাথে দেখা হয়নি। আমাদের কাউকে কিছু না বলেই সে বাড়ি থেকে চলে গেছে। পরে জানতে পারি আমাদের হয়রানির জন্য অপহরণের মিথ্যা মামলা দায়ের করেছে মেয়ের বাবা। যেখানে আমার স্বামীকেও আসামি করা হয়েছে। অথচ আমার শ্বশুরবাড়ি বোদা উপজেলাধীন সর্দারপাড়া। বৃহস্পতিবার (১৩ আগস্ট) আদালতে জামিন আবেদন করলে আমার বাবা ও স্বামীকে জেলহাজতে প্রেরণ করা হয়।
পামুলি ইউপি চেয়ারম্যান ফজলে হায়দার বলেন, বাদী হবিবর রহমান বা তার পরিবারের তরফ থেকে আমার সাথে এই বিষয়ে কোনো কথা হয়নি। ঘটনার দিন গ্রাম পুলিশ হামিদুর আমাকে মুঠোফোনে বিষয়টি জানিয়েছিলেন।
দন্ডপাল ইউপি চেয়ারম্যান জামেদুল ইসলাম বলেন, ঘটনার পর ছেলে ও মেয়ের পরিবার আমার কাছে এসেছিল। মেয়ের অভিভাবকরা জানান মেয়েকে ফেরত দিলে আমরা মামলা করবো না। কিন্তু পরে শুনি মেয়ের পরিবার মামলা করেছেন।
উত্তর এনায়েতপুর জামে মসজিদের ইমাম আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, শারমিনের বিয়ের দিন কাজী আকতাবুর বিয়ের রেজিস্ট্রি সম্পন্ন করার পর আমি খুতবা তেলাওয়াত ও দোয়া সম্পন্ন করেছি।
মেয়ের বড় ভাই রুবেল, ছোট ভাই আপেল ও ফুপাতো ভাই শরিফুল ইসলাম বলেন, আমাদের বিরুদ্ধে চক্রান্ত করা হচ্ছে। আমাদের বোনের আগে কোনো বিয়ে হয়নি। অপহরণের ঘটনাটি সত্য। মেয়েকে ফিরিয়ে দেবে বলে আমাদের আস্বস্ত করা হয়েছিল। কিন্তু পরে উপায়ন্তর না পেয়ে আইনের আশ্রয় নিয়েছি।
কিন্তু পুরো এলাকাবাসী মেয়ের আগে বিয়ে হয়েছে এবং কেন ছেলের পরিবারের হয়ে বক্তব্য দিচ্ছেন- এমন প্রশ্নে মেয়ের ফুপাতো ভাই শরিফুল ইসলাম রাগান্বিত হয়ে নিজেকে ইসলামি আন্দোলন বাংলাদেশের ইউনিয়ন শাখার সভাপতি পরিচয় দিয়ে সাংবাদিকদের দ্রুত ঘটনাস্থল ত্যাগ করতে বলেন।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা দেবীগঞ্জ থানার এসআই আব্দুর রাজ্জক বলেন, প্রাথমিকভাবে অপহরণের বিষয়টি সত্য বলে মনে হয়েছে। তবে মামলাটি এখনো তদন্তাধীন। তাই তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত নিশ্চিত করে এখনই কিছু বলা যাচ্ছে না।