চিকিৎসক হওয়ার স্বপ্ন দেখা টুম্পা নিজেই হাসপাতালের বিছানায়

মোঃ জাহাঙ্গীর আলম
প্রকাশ: ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২০, ১৪:৫৫

৮ম শ্রেণিতে অধ্যায়নরত নেত্রোকোনার মেয়ে টুম্পা। লেখাপড়া শেষে বড় হয়ে ডাক্তার হবে। মা-বাবার অভাবের সংসারের ইতি টানবে। তিল তিল করে বেড়ে ওঠা এই স্বপ্নগুলো হঠাৎ করেই যেন এলোমেলো হয়ে গেলো।
প্রায় এক বছর আগে অসুস্থ হয়ে টুম্পা এখন অর্থের অভাবে চিকিৎসা করতে পারচ্ছে না। বিছানায় শুয়ে কাতরানো ছাড়া আর কোন উপায় নেই। তার একমাত্র উপার্জনক্ষম বোন এখন অনেকটা হাপিয়ে পড়েছেন । তার ২০ বছর যাবত অসুস্থ্য বাবাকে নিয়ে তার মাও ধুকে ধুকে কাঁদছেন।
টুম্পার স্বজনরা জানায়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে চিকিৎসাধীন টুম্পার হার্ট ছিদ্র হওয়ার পাশাপাশি দুটি কিডনিই ড্যামেজ হয়েছে। অপারেশনের জন্য তিনলক্ষ টাকা জোগাড় করতে না পাড়ায় বাসায় শুয়ে চাপা কান্না করতে হচ্ছে টুম্পা ও তার স্বজনদের।
এদিকে, সামাজের বৃত্তবানরা এগিয়ে এলে মেধাবী এই শিক্ষার্থীর জীবন বাঁচবে এবং শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দিতে পারবে বলে মনে করেন তার সহপাঠীরা ।
নেত্রকোনার বারহাট্টা থানার ধীরপাগলীপাড়া গ্রামের কামাল উদ্দিনের ৪ মেয়ের মধ্যে সবার ছোট টুম্পা। বাবা কামাল উদ্দিন বারহাট্টা ইউনিয়ন পরিষদের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের নির্বাচিত সাবেক মেম্বার।
বিশ বছর আগে প্যারালাইজড হয়ে পঙ্গু হয়ে যায় বাবা কামাল উদ্দিন। তার চিকিৎসার জন্য ভিটেবাড়ি ছাড়া সবকিছুই বিক্রি করে সহায় সম্বল হারাতে হয়। সহায় সম্বল হারিয়ে ১৩ বছর আগে অসুস্থ স্বামীকে নিয়ে কামাল উদ্দিনের স্ত্রী বিলকিস আক্তার ও চার মেয়েকে নিয়ে নেত্রকোনা থেকে গাজীপুরের কোনাবাড়ীতে বাইমাইল এলাকায় এসে বাসা ভাড়া নিয়ে বসবাস শুরু করে। স্থানীয় পোশাক কারখানায় চাকরি করে স্বামীর চিকিৎসা এবং মেয়েদের পড়াশুনাসহ সংসারের কাজ পরিচালনা করেন। এর মধ্যে বড় দুই মেয়েকে বিয়ে বিলকিছ আক্তার ।
স্বামী কামাল উদ্দিনের অবনতি হওয়ায় তার দেখাশুনা করতে ৫ বছর আগে চাকরি ছেড়ে দেন বিলিকিস বেগম। এরপর সংসারের হাল ধরতে তার সেজো মেয়ে সামিয়া আক্তার পোশাক কারখানায় চাকরি নেন । সামিয়ার চাকরির সামান্য বেতনের টাকা দিয়ে বাবার চিকিৎসা ও ছোটবোন কামরুন্নার টুম্পার পড়াশুনাসহ সংস্থারের সব খরচ চলছিল ।
এক বছর আগে ছোট বোন কামরুন্নাহার টুম্পা অসুস্থ্য হয়ে পড়ে বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে এখন অনেকটা অর্থহীন হয়ে পড়েছে পরিবারটি । মাত্র তিন লাখটাকার জন্য মেধাবী এই্ শিক্ষার্থী চিকিৎসা নিতে পাড়ছে না।
টুম্পার সহপাঠী শারমিন আক্তার জানান, দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ টুম্পার পরিবার দরিদ্র হওয়ার কারনে ঠিকমতো চিকিৎসা করাতে পারছে না। দেশের বৃত্তবানরা তার দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিলে বাঁচতে পাড়তো সহপাঠী টুম্পা।
মাহীন-প্রি-ক্যাডেট স্কুলের প্রধান শিক্ষক মোঃ কবির হোসেন জানান, টুম্পা একজন মেধাবী ছাত্রী। সে ক্লাস ওয়ান থেকে ৮ম শ্রেণি পর্যন্ত এই স্কুলে পড়াশুনা করছে। টুম্পা পিএসসিতে জিপিএ-৫ পেয়েছে। তিনি আরও বলেন, টাকার অভাবে একজন মেধাবী ছাত্রীকে হারানোর আশঙ্কা করছি ।
গাজীপুর মহানগরের ৯ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিল মোঃ নাসির উদ্দিন মোল্লা জানান, টুম্পা নামের মেয়েটি খুবই মেধাবী। শুনেছি তার দুটি কিডনি ড্যামেজ ও হার্ট ছিদ্র হয়ে গেছে। সাধ্য মতো ব্যক্তিগত ভাবে সহযোগিতা করা হয়েছে। তার চিকিৎসার জন্য অনেক টাকার প্রয়োজন । দেশের সব শ্রেণি পেশার মানুষ মানবিক হাত বাড়িয়ে দিলে মেধাবী একজন স্কুল ছাত্রীর জীবন বাঁচবে এবং শিক্ষকা আলো ছড়িয়ে পড়বে ।
টুম্পার জীবন বাঁচানোর জন্য তার মা বিলিকিছ আক্তার মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ দেশের বৃত্তবান ব্যক্তিদের কাছে সাহায্যের আবেদন করেছেন।