ওসি প্রদীপসহ আসামি ১৫ জন
মেজর সিনহা হত্যা মামলার চার্জশিট দাখিল

কক্সবাজার প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১৩ ডিসেম্বর ২০২০, ১০:৫৯

মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ। ফাইল ছবি
কক্সবাজারের টেকনাফে পুলিশ চেকপোস্টে অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ হত্যার ঘটনায় ১৫ জনের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দাখিল করা হয়েছে।
আজ রবিবার (১৩ ডিসেম্বর) সকাল সাড়ে ১০টার দিকে টেকনাফের তামান্না ফারাহর আদালতে চার্জশিট দাখিল করা হয়।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা র্যাবের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার মোহাম্মদ খায়রুল ইসলাম এ চার্জশিট দাখিল করেন। মামলায় যে ১৫ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে তারমধ্যে ১৪ জন গ্রেফতার আছে বলে চার্জশিটে উল্লেখ করা হয়েছে।
পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) ফরিদুল আলম এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল শেষে তদন্তকারী কর্মকর্তা খায়রুল ইসলাম সাংবাদিকদের জানান, মামলা রুজুর চার মাস আটদিনের মাথায় চূড়ান্ত প্রতিবেদন করা হলো। এই চূড়ান্ত প্রতিবেদনে তদন্ত সাপেক্ষে ১৫ জনকে অভিযুক্ত করে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করা হলো।
তদন্তে প্রতিবেদনে ওসি প্রদীপের পরিকল্পনায় অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা হত্যা সংঘটিত হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। মূলত ওসি প্রদীপের কিছু অসঙ্গতিমূলক কর্মকাণ্ডের চাঞ্চল্যকর তথ্য সিনহা জেনে গিয়েছিলো। সে কারণে সিনহাকে হত্যার সিদ্ধান্ত নেয় ওসি প্রদীপ। আর ওসি প্রদীপের আদেশ মতো সিনহাকে গুলি করে হত্যা করে পরিদশর্ক লিয়াকত।
মামলার তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, মামলায় টেকনাফ থানার সাবেক ওসি প্রদীপ কুমার, বাহারছড়া ক্যাম্পের পরিদর্শক লিয়াকত আলী, এসআই নন্দদুলাল রক্ষিত, টেকনাফ থানার কয়েকজন পুলিশ সদস্য ছাড়াও আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন-এপিবিএনের তিনজন এবং স্থানীয় তিনজনসহ মোট ১৪ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
গত ৩ জুলাই ‘জাস্ট গো’ নামের একটি ইউটিউব চ্যানেলে ট্রাভেলস শো ডকুমেন্টারির শুটিংয়ের জন্য তিনজন সহযোগীসহ কক্সবাজারের নীলিমা রিসোর্টে ওঠেন মেজর সিনহা। এই খবর পৌঁছায় টেকনাফের তৎকালীন ওসি প্রদীপ কুমারের কাছে। তখন থেকেই ওসি প্রদীপ অধীনস্থ পুলিশ সদস্যদের বলেন, ‘ভিডিও পার্টিকে এখান থেকে সরিয়ে ফেলতে হবে, যেকোনো মূল্যে।’ এরপর থেকেই সিনহাকে নজরদারিতে রাখেন পরিদর্শক লিয়াকত ও এসআই নন্দদুলাল রক্ষিত।
৩১ জুলাই সকালে একটি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ‘ বৃক্ষরোপণ’ অনুষ্ঠান শেষে ওসি প্রদীপকে জানানো হয়, মেজর সিনহা রাশেদ প্রাইভেটকার নিয়ে টেকনাফের শামলাপুর পাহাড়ে গেছেন। এ সময় সোর্সের মাধ্যমে বাহারছড়া ক্যাম্পের ইনচার্জ ইন্সপেক্টর লিয়াকত আলী সিনহার প্রতি নজর রাখতে থাকেন। ওইদিন রাত সাড়ে ১০টার দিকে টেকনাফ থেকে কক্সবাজারের দিকে আসার পথে বাহারছড়া শামলাপুর পুলিশ চেকপোস্টে তল্লাশির নামে গাড়ি থেকে নামিয়ে মেজর (অব.) সিনহা মো. রাশেদকে গুলি করে হত্যা করা হয়। ঘটনাটি দেশজুড়ে আলোড়ন সৃষ্টি করে।
এ ঘটনায় ৫ আগস্ট সিনহার বোন শারমিন শাহরিয়ার ফেরদৌস বাদী হয়ে টেকনাফ থানার সাবেক ওসি প্রদীপ কুমার দাশসহ নয়জনকে আসামি করে হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলায় প্রধান আসামি করা হয় বাহারছড়া পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ পরিদর্শক লিয়াকত আলীকে, যিনি সিনহাকে গুলি করেছিলেন। টেকনাফ থানার ওসি (বরখাস্ত) প্রধীপ কুমার দাশকে করা হয়েছে ২ নম্বর আসামি। এজাহারে বলা হয়েছে, গুলি করার আগে লিয়াকত তার সঙ্গে ফোনে পরামর্শ করেছিলেন। ওসির ‘ প্ররোচনা ও নির্দেশনাতেই’ লিয়াকত ঠান্ডা মাথায় সিনহাকে গুলি করে হত্যা করেন। পরে প্রধীপ ঘটনাস্থলে গিয়ে সিনহার ‘মুখমন্ডল ও শরীরের বিভিন্ন জায়গায় পায়ের জুতা দিয়ে আঘাত করে’ বিকৃত করার চেষ্টা করেন বলে মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে।
মামলার তিন নম্বর আসামি করা হয়েছে টেকনাফ থানার এসআই দুলাল রক্ষিতকে, যিনি সিনহার মৃত্যুর পর মাদক ও অস্ত্র আইনে মামলা করেন। এরপর অভিযুক্ত সাত পুলিশ সদস্য আদালতে আত্মসমর্পণ করেন। পরে তদন্তে নেমে র্যাব হত্যার ঘটনায় স্থানীয় তিনজন ছাড়াও এপিবিএন ও প্রদীপৈর দেহরক্ষীসহ মোট ১৪ জনকে গ্রেফতার করে।