নেত্রকোণায় জমি দখলে ওসির বিরুদ্ধে মদদের অভিযোগ

নেত্রকোণা প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১৮ এপ্রিল ২০২১, ১৫:৫৫

নেত্রকোণা জেলার আটপাড়া থানার ওসি জাফর ইকবালের বিরুদ্ধে ময়মনসিংহ রেঞ্জ ডিআইজি বরাবর লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন রিয়া আক্তার নামের এক ভুক্তভোগী নারী।
গতকাল শনিবার (১৭ মার্চ) রাতে আটপাড়া তেলিগাতী বাজারের গো-হাটার পশ্চিমে নিজ জমিতে নির্মিত দুইটি দোকানের তালা ভেঙে তা দখলের চেষ্টা করে প্রতিপক্ষের ভাড়াটে সন্ত্রাসীরা।
ঘটনাটি থানা পুলিশকে জানানো হলে পুলিশ এসে দোকানে তালা ঝুলিয়ে চাবি ভুক্তভোগীকে না দিয়ে তেলিগাতী বাজারের ইজারাদার আবুবকরের কাছে জমা রাখে। পরবর্তীতে অভিযুক্ত মতিন মাস্টার গংরা ইজারাদারের কাছ থেকে চাবি নিয়ে বেআইনিভাবে দোকানে প্রবেশ করেন।
আটপাড়া থানায় বারবার লিখিত অভিযোগ দায়ের করতে গেলে ভারপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তা কোনো অভিযোগ গ্রহণ করেনি। তাই রিয়া আটপাড়া থানার ওসির বিরুদ্ধে ময়মনসিংহ রেঞ্জ ডিআইজি বরাবর লিখিত অভিযোগ করেছেন।
রিয়া বলেন, ১৯৯৩ ও ১৯৯৪ সালে আমার বাবা মৃত আব্দুল কাদের একই এলাকার মৃত নবাব হোসেনের ছেলেদের কাছ থেকে পাঁচ শতাংশ ভূমি সাফ (কাউলা) দলিল করেন। এরপর থেকেই আমরা এই জায়গায় বসবাস করে আসছি। মা ও বাবার মৃত্যুর পর আমাদের কোনো ভাই না থাকায় আমরা তিনবোন উত্তরাধিকার সূত্রে এই সম্পত্তির মালিক হই। স্থানীয় তহসিলদার সঠিক কাগজপত্র দেখেই আমাদের নামে নামজারি করে দিয়েছেন। আমরা প্রতিবছর এই জমির খাজনা দিয়ে আসছি। বিগত ২৮ বছর ধরে এই জমি আমরা ভোগ দখল করছি।
তিনি আরো বলেন, আমাদের জমির পাশে রামশিদ্ব গ্রামের মতিন মাস্টারের জমি থাকায় হুমকি-ধামকি দিয়ে আমাদের জমি দখল করার চেষ্টা করছেন। ওই জমিতে দোকান তৈরির পর ভাড়াটে গুন্ডা নিয়ে আমাদেরকে হুমকি দিতে থাকে। আমরা তিন বোন এখন প্রাণনাশের শঙ্কায় আছি। মতিনের ভাই মিলন মিয়া সেনাবাহীনিতে চাকরি করেন। তিনি এলাকায় এসে স্থানীয় সন্ত্রাসীদের সহায়তায় আমাদের উপর অত্যাচার শুরু করেন। আমরা তাদের অত্যাচারে অতিষ্ট হয়ে আইনের আশ্রয় চেয়েছি।
বাজারের ইজারাদার আবুবকরের কাছে বিষয়টি জানতে চাইলে তিনি বলেন, ফোনে সব কথা বলা যাবে না। সামনাসামনি কথা বলবো। এরপর থেকে তার সাথে আর কোনো যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
দোকানদার জাহাঙ্গীর আলম, শাসনকান্দি গ্রামের আবুল কালাম ও তেলিগাতী বাজারের রফিকুল ইসলাম জানান, আমরা জানি এই সম্পত্তি রিয়াদের। এখন কিভাবে মতিন এই সম্পত্তির মালিক হলো আমরা বুঝতে পারছি না। আসলে মেয়েদেরকে অত্যাচার করা হচ্ছে। ভাড়াটে গুন্ডা দিয়ে হুমকি দেয়া হচ্ছে জায়গা ছেড়ে চলে যেতে।
এ বিষয়ে বিবাদী মিলন বলেন, এই জায়গাটির ক্রয়সূত্রে আমরাই মালিক। আমার বাবা রিয়ার বাবাকে এখানে থাকতে দিয়েছিল। আমি জমির কাগজপত্র সম্পর্কে এতকিছু বুঝি না। আমার ভাগ্নেকে পাওয়ার অব অ্যাটর্নি করে দিয়েছি জায়গাটির।
মতিনের ভাগ্নে মো. ফজলু মিয়া জানান, আমার নানা ১৯৮২ সালে তারা মিয়া ও হালান মিয়ার কাছ থেকে এই জমি নগদ মূল্যে ক্রয় করেন। ৮৩ সালে আমার নানার নামে বিআরএস হয়েছে। সেই সূত্রে এই সম্পত্তির ওয়ারিশ আমরা। নেত্রকোণা আদালতে মামলা করেছি। আদালত যে সিদ্বান্ত দেয় আমরা মেনে নেবো।
তেলিগাতী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম জানান, জমি নিয়ে কোনো সমস্যা হয়েছে কি না তা আমি জানি না। আমাকে কোনো পক্ষই জানায়নি।
অভিযোগ বিষয়ে জানতে চাইলে আটপাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, ঘর নিয়ে যে সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে তা আমি জানি। আমাকে রিয়া প্রায় সময় ফোনে অভিযোগ দিতো। আমি পুলিশ পাঠিয়ে সমস্যা সমাধান করার চেষ্টা করেছি। কখনো থানায় এসে আমার কাছে কোনো লিখিত অভিযোগ করেনি।
ময়মনসিংহ রেঞ্জের পুলিশের ডিআইজি হারুন অর রশিদ বলেন, অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি তদন্তাধীন রয়েছে এবং এটি গুরুত্বসহ দেখা হচ্ছে।