পদ্মা সেতুতে বসলো ১৭তম স্প্যান
দৃশ্যমান আড়াই কিলোমিটারের বেশি

মুন্সীগঞ্জ, প্রতিনিধি
প্রকাশ: ২৬ নভেম্বর ২০১৯, ১৫:৩৮

ছবি: বাসস
পদ্মা সেতুর ১৭তম স্প্যান বসানো হয়েছে। এক সপ্তাহের ব্যবধানে সেতুতে আরেকটি স্প্যান বসানো হলো।
আজ মঙ্গলবার দুপুর ২টার দিকে পদ্মা সেতুর ২২-২৩ নম্বর পিলারে স্থায়ীভাবে বসানো হয়েছে সেতুর ১৭তম স্প্যান। এর ফলে দৃশ্যমান হলো সেতুর আড়াই কিলোমিটারের বেশি।
পদ্মা সেতুর সহকারী প্রকৌশলী হুমায়ূন কবীর এ খবর নিশ্চিত করেছেন।
সকাল ১০টা থেকে এই প্রক্রিয়া শুরু করা হয়। ‘৪ডি’ নম্বর স্প্যানটি ২৮ ও ২৯ নম্বর খুঁটির কাছ থেকে ভাসমান জাহাজ পাজা করে ধরে রওনা হয় সকাল ঠিক ১০টায়। ৩৭ মিনিটেই প্রায় এক কিলোমিটার পথ পারি দিয়ে এটি পৌছে যায় গন্তব্যে অর্থাৎ, ২২ ও ২৩ নম্বর খুঁটির সামনে।
এর আগে ১৬তম স্প্যানটি গত ১৯ নভেম্বর ১৬ ও ১৭ নম্বর খুঁটিতে বসেছিল। দায়িত্বশীল প্রকৌশলীরা জানান, এখন এভাবেই ঘন ঘন স্প্যান বসবে।
কয়েক মাস আগেই ‘৪ডি’ নম্বর স্প্যানটি স্থাপনের উপযোগী করে খুঁটির কিছুটা দূরে পদ্মা তীরে স্টোর করে রাখা ছিল। ধূসর রঙের ১৫০ মিটার দৈর্ঘ্যের ৩ হাজার ১৪০ টন ওজনের প্যানটিকে বহন করে তিন হাজার ৬০০ টন ধারণ ক্ষমতার ‘তিয়ান ই’ ভাসমান ক্রেনবাহী জাহাজ।
হুমায়ূন কবির জানিয়েছেন, ২২ ও ২৩ নম্বর খুঁটির জন্য তৈরি করা ‘৪ডি’ স্প্যানটি ২৮ ও ২৯ নম্বর খুঁটির কাছে প্লাটফরম তৈরি করে নদীর তীরে রাখা ছিল। কিন্তু নদীর চ্যানেলের নাব্যতার কারণে স্প্যানটি সেখান থেকে তুলে এনে স্থাপনে দেরি হয়েছে। পলি জমে থাকায় নাব্যতা সংকটের কারণে ক্রেনবাহী জাহাজ খুঁটির কাছে পৌঁছতে পারছিল না তাই স্প্যান বসাতে দেরি হচ্ছিলো। তবে দিনরাত ড্রেজিং করে ওই এলাকায় নাব্যতা ফিরিয়ে আনা হয়েছে। এখন আর কোনো সমস্যা নেই।
এছাড়া ৪ বা ৫ ডিসেম্বর ১৮তম স্প্যান বসানোর কথা রয়েছে। ১৮তম স্প্যানটি বসবে ১৭ ও ১৮ নম্বর খুঁটিতে। পরবর্তীতে ডিসেম্বরেই ২১ ও ২২ নম্বর খুঁটিতেও স্প্যান বসানোর পরিকল্পনা রয়েছে। এছাড়া ৩৩-৩২ ও ৩১-৩২ নম্বর খুঁটিতেও স্প্যান বসবে অল্প সময়ের মধ্যে। খুঁটি ও স্প্যান তৈরি হয়ে যাওয়ায় দ্রুত সময়ের ব্যবধানে স্প্যান উঠতে থাকবে।
এদিকে চীন থেকে আরো দুটি স্প্যান বাংলাদেশে পৌঁছেছে। সমুদ্রপথে ১৯ নভেম্বর বিকেলে স্প্যান দুটি মোংলা পোর্টে এসে পৌঁছায়। কাস্টমসের কাজ চলছে এখন। শিগ্গিরই এই স্প্যান দুটিও মাওয়ায় এসে পৌঁছানোর কথা রয়েছে।
সেতুর ৪২টি খুঁটির মধ্যে ৩৩টি খুঁটি নির্মাণ সম্পন্ন হয়ে গেছে। এছাড়া আলোচিত ৭ নম্বর খুঁটির কাজ চলতি মাসেই শেষ হতে যাচ্ছে। আগামী ১০ ডিসেম্বর ৬ ও ৩০ নম্বর খুঁটির কাজ সম্পন্ন হওয়ার কথা রয়েছে। আর বাকি ৮, ১০, ১১, ২৬, ২৭ ও ২৯ নম্বর খুঁটির কাজ আগামী মার্চের মধ্যে শেষ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
মাওয়া কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ডে ‘৬এ’, ‘৬-বি’ ও ‘৬-সি’ পেইন্টিং শেষে পিলারের ওপর নিয়ে যাওয়ার অপেক্ষায় রয়েছে। ৪১টি স্প্যানের মধ্যে মাওয়ায় ৩১টি স্প্যান আছে। এর মধ্যে ১৬টি স্প্যান ইতোমধ্যে বসানো হয়েছে।
২০১৪ সালের ডিসেম্বরে পদ্মাসেতুর নির্মাণ কাজ শুরু করা হয়েছে। মূল সেতু নির্মাণের জন্য কাজ করছে চীনের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি (এমবিইসি) ও নদী শাসনের কাজ করছে দেশটির আরেকটি প্রতিষ্ঠান সিনো হাইড্রো করপোরেশন।
৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এ বহুমুখী সেতুর মূল আকৃতি হবে দোতলা। কংক্রিট ও স্টিল দিয়ে নির্মিত হচ্ছে এ সেতুর কাঠামো। পদ্মাসেতু এখন নিজস্ব অর্থায়নে দ্রুত গতিতে কর্মযজ্ঞ চলছে। পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজ সম্পূর্ণ হওয়ার পর আগামী ২০২১ সালেই খুলে দেয়া হবে।