দুই বছর পর চালু জয়রামপুরের কৃষিপণ্য সংগ্রহ ও বিপণন কার্যক্রম

রিফাত রহমান, চুয়াডাঙ্গা
প্রকাশ: ০৩ ডিসেম্বর ২০১৯, ১২:১১
-02-5de5fc9018790.jpg)
ছবি: সাম্প্রতিক দেশকাল
চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলার হাউলী ইউনিয়নে দীর্ঘ দুই বছর পর চালু হলো জয়রামপুর গ্রামের কৃষিপণ্য সংগ্রহ ও বিপনন কার্যক্রম।
দামুড়হুদা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের আওতায় কৃষিপণ্য সংগ্রহ ও বিপণন কেন্দ্র থেকে প্রতিদিন কৃষকদের উৎপাদিত সবজি পাঠানো হচ্ছে ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে। এতে করে লাভবান হচ্ছেন স্থানীয় সবজি চাষীরা।
কেন্দ্রটি দেখাশোনার দায়িত্বে রয়েছে উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম ও বাজার সুবিধাপ্রদানকারী বদরুল আলম।
দামুড়হুদা উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, ২০১৫ সালে দামুড়হুদা উপজেলায় বিভিন্ন এলাকার কৃষকদের উৎপাদিত পণ্য সংগ্রহ ও বিপণনের সুবিধার্থে জয়রামপুর ও পারকৃষ্ণপুর-মদনা গ্রামে ২৫ লাখ টাকা ব্যয়ে কৃষি অধিদপ্তরের দ্বিতীয় শষ্য বহুমুখীকরণ প্রকল্প কর্তৃক দুটি কৃষি পণ্য সংগ্রহ বিপণন কেন্দ্র নির্মাণ করা হয়।
ওই সময় এলাকার কৃষকরা সমিতির মাধ্যমে তাদের উৎপাদিত পণ্য বেগুন, লাউ, চিচিংগা, পেঁপে, কাঁচাকলা, কুমড়া, শিম, ফুলকপি, বাধাকপি, পেয়ারা, কুল, কাঁঠালসহ বিভিন্ন ধরনের সবজি ও ফল সংগ্রহ করে দেশের বিভিন্ন স্থানে পাঠাতো। এতে তারা লাভবান হোন।
দু’বছর চলার পর দুটি কেন্দ্রই বন্ধ হয়ে যায়। পরে জয়রামপুর গ্রামের কেন্দ্রটি চালু হলেও বন্ধ রয়েছে পারকৃষ্ণপুর-মদনা। এখন প্রতিদিন জয়রামপুর বিপণন কেন্দ্র থেকে ৬-৭ ট্রাক কৃষকের উৎপাদিত কৃষি পণ্য দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে পাঠানো হচ্ছে। তারা পাচ্ছেন পণ্যের ন্যায্য দাম।
দামুড়হুদা উপজেলার জয়রামপুর গ্রামের সবজি চাষী আব্দুল হান্নান, আক্কাছ আলি ও শাহানেওয়াজ বলেন, কেন্দ্রটি চালু হওয়ায় আমাদের অনেক সুবিধা হয়েছে। পণ্য এখানে নিয়ে আসলে স্থানীয় ব্যবসায়ীরা কিনে নিয়ে ট্রাকযোগে দেশের বিভিন্ন এলাকায় পাঠাচ্ছে। এছাড়াও এসব পণ্য নিজেরাই সমিতির মাধ্যমে ট্রাকবোঝাই করে নিয়ে গিয়ে সরাসরি ঢাকা, খুলনা ও চট্টগ্রামের নিজেদের পছন্দের আড়তে পাঠাতে পারছি। সেখানে বেচাকেনার শেষে ঘরে বসে বিক্রি হওয়া কৃষি পণ্যের টাকা মোবাইল ব্যাংকিং অথবা ব্যাংকের মাধ্যমে পেয়ে যাচ্ছি। এতে আমাদের সময় কম ব্যয় হচ্ছে, তেমনি ঘরে বসে সঠিক দাম পাচ্ছি।
উদ্যোক্তা শাহানেওয়াজ ও আব্দুল হালিম বলেন, এলাকার চাষীরা আমাদের মাধ্যমে তাদের কৃষি পণ্য এনে এখান থেকে দেশের বিভিন্ন এলাকায় পাঠাচ্ছে। আমরা চাষীদের দেশের বিভিন্ন আড়ৎদারদের সঙ্গে যোগাযোগ করিয়ে দিচ্ছি। তারা স্থানীয় বাজার ছাড়াও বাইরে বেশি দামে কৃষি পণ্য বিক্রি করতে পেরে ভালো লাভবান হচ্ছে।
তারা অরো বলেন, চাষীদের ন্যায্য দাম পাওয়ার কাজে সহযোগিতা করতে গিয়ে কিছুটা সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। উপজেলার কেশবপুর, চিৎলা, গোবিন্দহুদা এলাকার চাষীরা তাদের উৎপাদিত কৃষি পণ্য এখানে আনতে বাধার মুখে পড়ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। দামুড়হুদা ওদুদ শাহ ডিগ্রি কলেজের অদূরে কৃষি পণ্য কেনাবেচার জায়গা তৈরি করে ওই এলাকার চাষীদের কৃষি পণ্য ওখানে আনতে বাধ্য করা হচ্ছে। এছাড়াও আমাদের এখানে জায়গা কম হওয়ায় প্রধান সড়কের পাশেই ট্রাকে পণ্য উোতে করতে হচ্ছে। এতে সব সময় দুর্ঘটনার ঝুঁকি থাকে।
দামুড়হুদা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মনিরুজ্জামান জানান, দামুড়হুদার পারকৃষ্ণপুর-মদনার কেন্দ্রটি এলাকায় সবজির চাষ না থাকায় বন্ধ হয়ে গেছে। তবে বর্তমান প্রকল্পটি নাম পরিবর্তন নিরাপদ উদ্যান তাত্ত্বিক ফসল উৎপাদন ও সংগ্রহত্তোর প্রযুক্তি সম্প্রসারণ প্রকল্পটি জয়রামপুর গ্রামে খুব ভালোভাবে চলছে। এলাকার কৃষকরা উৎপাদিত সবজি ও ফল ঘরে বসে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বিক্রি করছে। ঘরে বসে মোবাইল ব্যাংকিং অথবা ব্যাংক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে তাদের টাকা পৌঁছে যাচ্ছে।
তবে ঢাকা, চট্টগ্রামে কৃষি পণ্য পাঠাতে তাদেরকে ফেরি পারাপারে ঝামেলা পোহাতে হচ্ছে। ফেরি পারাপারের সময় নিশ্চিত হলে চাষীরা আরো বেশি লাভবান হতো ও আরো আগ্রহ বাড়তো বলে জানান তিনি।