একদিন পর ১৭ ডিসেম্বর মুক্ত হয় বাগেরহাট

প্রতিনিধি, বাগেরহাট
প্রকাশ: ১৭ ডিসেম্বর ২০১৯, ১৩:১৬

দীর্ঘ মুক্তি সংগ্রামের পর ১৯৭১ সালের ডিসেম্বর মাসের শুরু থেকে দেশের বিভিন্ন এলাকা পাকিস্তানি হানাদার মুক্ত হতে থাকে। ১৬ ডিসেম্বর ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর আনুষ্ঠানিক আত্মসমর্পণের মাধ্যমে বাংলাদেশ শত্রুমুক্ত হয়।
পৃথিবীর মানচিত্রে নতুন স্বাধীন দেশ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে প্রাণের বাংলাদেশ।
পাকিস্তানি সেনাবাহিনী আনুষ্ঠানিকভাবে আত্মসমর্পণ করলেও রাজাকার-আলবদর বাহিনীর প্রতিষ্ঠাতা পাকিস্থান সরকারের তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রী এ.কে.এম. ইউসুফের জন্মস্থান হওয়ার কারণে বাগেরহাট রয়ে যায় রাজাকার বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে।
ইউসুফের দোসর রাজাকারদের খুলনা অঞ্চল প্রধান রজব আলী ফকিরের নেতৃত্বে বাগেরহাটে তখনো ব্যাপক লুটপাট, মুক্তিকামী মানুষকে হত্যা ও নির্মম নির্যাতন চলছিল।
বাগেরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ড মাঠে ছিল রাজাকারদের ক্যাম্প। বর্তমান জেলা পরিষদ ডাকবাংলো ছিল রাজাকারদের বিচারালয় ও টর্চার সেল। স্বাধীনতার পরে সেখানে নির্মাণ করা হয় বদ্ধভূমি স্মৃতিসৌধ। এর উল্টো পাশে ভৈরব নদীর পাড়ে রজব আলীর নির্দেশে তৈরি করা হয় কসাই খানা।
এদিকে সারাদেশ যখন শত্রুমুক্ত তখন বাগেরহাট শত্রুদের দখলে থাকায় মুক্তিযোদ্ধারা উদগ্রীব ও অস্থির হয়ে পড়ে। প্রাণপন চেষ্টা চলতে থাকে। শুরু হয় পরিকল্পনা। ১৬ ডিসেম্বর বাগেরহাট শহর দখলের পরিকল্পনা হয়। ১৭ ডিসেম্বর ভোরে বাগেরহাট এলাকায় মুক্তিবাহিনীর অন্যতম নেতা রফিকুল ইসলাম খোকনের নেতৃত্বে রফিক বাহিনী শহরের মুনিগঞ্জ এলাকা দিয়ে, ক্যাপ্টেন তাজুল ইসলামের নেতৃত্বে তাজুল বাহিনী শহরের উত্তর-পূর্ব দিক দিয়ে ও সাবসেক্টর কমান্ডার মেজর জিয়া উদ্দিনের বাহিনী দক্ষিণ-পশ্চিম দিক থেকে সম্মিলতভাবে আক্রমণ করে।
বাগেরহাট সদর থানায় রাজাকর ক্যাম্পে অবস্থানরত রাজাকার-আল বদর ও পাকিস্থানী বাহিনী প্রতিরোধ গড়ে তোলার চেষ্টা করে। মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মিলিত আক্রমণের মুখে রাজাকর রজব আলী ফকিরের নেতৃত্বে হানাদাররা বাধ্য হয়ে পাকিস্তানি পতাকা নামিয়ে পালিয়ে যায়।
১৭ ডিসেম্বর দুপুরে হানাদার মুক্ত হয় বাগেরহাট। বিজয়ের আনন্দে ফেটে পড়ে সাধারণ মানুষ। মুক্তিকামী জনতাকে সঙ্গে নিয়ে মুক্তিযোদ্ধারা উত্তোলন করেন বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা।
বাগেরহাট শহর মুক্তি সমরে অংশ নেয়া মুক্তিযোদ্ধা নকীব সিরাজুল হক বলেন, ১৭ ডিসেম্বর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মিলিত আক্রমণের মুখে রাজাকার রজব আলী বাহিনীর বেশিরভাগ সদস্যরা পালিয়ে যায়। তবে কেউ কেউ আত্মসমর্পণও করে। সমগ্র বাগেরহাট মুক্তিযোদ্ধাদের দখলে আসে। আমরা বিজয়ের পতাকা উড়াই স্বগৌরবে।