Logo
×

Follow Us

জেলার খবর

পুঠিয়ায় জুয়েলার্স ব্যবসার আড়ালে স্বর্ণ বন্ধকি ব্যবসা

Icon

পুঠিয়া (রাজশাহী) প্রতিনিধি

প্রকাশ: ২৮ অক্টোবর ২০২১, ১৪:০০

পুঠিয়ায় জুয়েলার্স ব্যবসার আড়ালে স্বর্ণ বন্ধকি ব্যবসা

প্রতীকী ছবি

আনোয়ার হোসেন জিউপাড়া ইউনিয়ন পরিষদ এলাকার একজন ক্ষুদ্র কাঁচামাল ব্যবসায়ী। ২০২০ সালের শুরুতে ব্যবসার পরিধি বড় করার (মুদি দোকান) পরিকল্পনা করেন তিনি। পুঁজি হিসেবে দুটি এনজিও থেকে ৫০ হাজার টাকা ঋণ নেন। কিন্তু এতে মালপত্র কেনার পুরো চাহিদা পূরণ হচ্ছিল না। 

তাই স্ত্রীর তিন ভরি স্বর্ণের গহনা ঝলমলিয়া বাজারের একটি জুয়েলারি ব্যবসায়ীর কাছে এক লাখ টাকায় বন্ধক রাখেন। চুক্তি ছিল তিন মাসের মধ্যে এক লাখ টাকার সাথে অতিরিক্ত ৩০ হাজার সুদসহ পরিশোধ করতে হবে। আর নির্ধারিত সময়ের মধ্যে উক্ত টাকা পরিশোধ করতে না পারলে বন্ধকি গহনার মালিক জুয়েলারি ব্যবসায়ী। 

এর মধ্যে সারা দেশে হানা দেয় করোনাভাইরাস মহামারি। লকডাউনের কারণে আনোয়ার হোসেনের দোকানে ব্যবসায় মন্দা দেখা দেয়। শেষ পর্যন্ত দোকানের মালপত্র বিক্রি করে কোনওমতে এনজিওর ঋণ শোধ করেন। আর যথাসময়ে অর্থের যোগান দিতে না পারায় গহনাগুলোও হাতছাড়া হয়ে গেছে। 

শুধু আনোয়ার হোসেন নয়, তার মতো অনেকেই রাজশাহীর পুঠিয়া উপজেলার বিভিন্ন জুয়েলারি ব্যবসায়ীর ফাঁদে পড়ে তাদের মুল্যবান গহনা খোয়াচ্ছেন।

ঝলমলিয়া বাজারের জুয়েলারি ব্যবসায়ী জিয়াউর রহমান জিয়া বলেন, অনেকেই অর্থ সংকটের কারণে চড়া সুদে জুয়েলারি ব্যবসায়ীদের কাছে গহনা বন্ধক রাখছেন। এদের মধ্যে অনেকই চুক্তি মোতাবেক যথা সময়ে টাকা পরিশোধ করতে না পেরে গহনা খুইয়েছেন। জুয়েলারি ব্যবসায়ীরা বন্ধককৃত গহনার অর্ধেক দাম হিসাবে টাকা দেন। এর মধ্যে কোনো ব্যবসায়ী মাসিক সুদ নেন। আবার কেউ নিধারিত সময় বেধে দেন।

পুঠিয়া পৌরসভা এলাকার জুয়েলারি ব্যবসায়ী সুজিৎ কুমার বলেন, পুঠিয়া উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় প্রায় শতাধিক জুয়েলারি ব্যবসায়ী রয়েছেন। তবে এই ব্যবসায়ীদের কোনো সমিতি বা সংগঠন নেই। যে যেভাবে পারছেন তাদের ব্যবসা পরিচালনা করছেন। তবে হাতেগোনা দুই চারজন বাদে বেশিরভাগ ব্যবসায়ী গহনা বন্ধকের নামে রমরমা সুদের ব্যবসা করছেন। 

তিনি বলেন, গত কয়েক বছর থেকে স্বর্ণের দাম বেশি। তাই আগের মতো আর গহনা ক্রেতারা আসেন না। সে সুযোগে এখন জুয়েলারি ব্যবসায়ীরা শুধু নামে মাত্র জুয়েলারি ব্যবসার আড়ালে তারা সুদের কারবার করছেন।

নাম প্রকাশ না করা শর্তে একজন জুয়েলারি ব্যবসায়ী বলেন, অধিকাংশ ব্যবসায়ী বন্ধকির ব্যবসা করছেন খুবই গোপনে। তার মধ্যে ঝলমলিয়া বাজার, পুঠিয়া সদর, রাজবাড়ী বাজার, বানেশ্বর বাজার, বেলপুকুর ও ধোপাপাড়া বাজারে কয়েকজন জুয়েলারি ব্যবসায়ী প্রকাশ্যে চড়া সুদে বন্ধকির ব্যবসা করছেন। তাদের এক একজনের কোটি টাকার ওপর সুদের কারবার চলছে। এদের মধ্যে ঝলমলিয়া বাজারের একজন ব্যবসায়ী প্রতিবছর সুদের টাকা আদায় করতে হালখাতাও করে থাকেন।

উপজেলা চেয়ারম্যান জি এম হিরা বাচ্ছু বলেন, মানুষ চরম বিপদে না পড়লে গচ্ছিত অলংকার বন্ধক বা বিক্রি করেন না। আর লেনদেনের বিষয়টি উভয়ের সম্মতিতেই হয়। তাই যতই ক্ষতিগ্রস্ত হোক না কেন এই নিয়ে কোনও ভুক্তভোগী প্রতিবাদ জানাতে চান না। আর এই সুযোগটা নেন কিছু অসাধু জুয়েলারি ব্যবসায়ী।

এ ব্যাপারে পুঠিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) সোহরাওয়ার্দী হোসেন বলেন, জুয়েলারি ব্যবসায়ীরা সুদের ব্যবসা করছেন বা কেউ প্রতারণার শিকার হয়েছেন- এমন অভিযোগ থানায় কেউ দেননি। অভিযোগ পেলে অবশ্যই আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।


Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫