সেন্টমার্টিনে স্থাপনা নির্মাণের হিড়িক

তাহজীবুল আনাম, কক্সবাজার
প্রকাশ: ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ১৫:৫৪

ছবি: কক্সবাজার প্রতিনিধি
প্রবালদ্বীপ সেন্টমার্টিনে নতুন স্থাপনা নির্মাণ নিষিদ্ধ হওয়া সত্ত্বেও সেখানে প্রতিনিয়ত নতুন নতুন স্থাপনা ও বসতি নির্মাণ করা হচ্ছে। সরকারি কাজ ছাড়া সেখানে ইট, বালু, সিমেন্ট ও রড নেওয়ার অনুমতি নেই। তারপরও সেখানে যাচ্ছে নির্মাণসামগ্রী। রিসোর্টের জন্য গড়ে উঠছে একের পর এক নতুন স্থাপনা।
৪ জানুয়ারি সেন্টমার্টিন দ্বীপসহ আশপাশের এক হাজার ৭৪৩ বর্গকিলোমিটার এলাকাকে মেরিন প্রটেক্টেড এরিয়া (এমপিএ) ঘোষণা করে সরকার। এই ঘোষণার পর থেকে দ্বীপটিতে ভবনসহ অন্তত ১১টি স্থাপনা নির্মাণকাজের গতি বেড়ে গেছে। সরেজমিনে দেখা গেছে, ১১টি স্থাপনার মধ্যে ছয়টিই ভবন। এ ছাড়া তিনটি করে সেমিপাকা ভবন ও কাঠ-বাঁশের স্থাপনা রয়েছে। কক্সবাজারের টেকনাফের সেন্ট মার্টিন দ্বীপের বাসিন্দা ছাড়াও দেশের অন্যান্য জেলার লোকজন এসব স্থাপনা নির্মাণের সঙ্গে জড়িত।
এসব বিষয়ে জানতে নির্মাণকারীদের মুঠোফোনে কল দিলেও দু’জন বাদে কেউ ধরেননি। খুদে বার্তা পাঠিয়েও জবাব মেলেনি।
স্থাপনা নির্মাণকারী একজন জানান, তিনি বাঁশ-কাঠ দিয়ে রিসোর্ট বানাচ্ছেন। তার দাবি, অনুমতি নিয়েই তিনি কাজ করছেন। আরেকজন বলেন, বাঁশ-কাঠ দিয়ে রিসোর্ট নির্মাণে অনুমতির প্রয়োজন হয় না।
টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পারভেজ চৌধুরী জানান, দ্বীপে কাউকে কোনো অবকাঠামো নির্মাণের অনুমতি দেওয়া হয়নি। ১৯৮৯ সালে সেন্ট মার্টিন দ্বীপকে প্রতিবেশ সংকটাপন্ন (ইসিএ) এলাকা ঘোষণার পর থেকে সেখানে ভবনসহ স্থাপনা নির্মাণে বিধি-নিষেধ আরোপ করা হয়।
সেন্ট মার্টিন দ্বীপ ইউনিয়ন পরিষদের কয়েক মাস আগের তথ্য মতে, দ্বীপে ছোট-বড় ১৮৮টি রিসোর্ট, হোটেল-মোটেল ও কটেজ আছে।
এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সেন্ট মার্টিন দ্বীপের ড্রিমার্স প্যারাডাইস বিচ রিসোর্টের মালিক রাজধানীর তেজগাঁও কলেজের অধ্যক্ষ আবদুর রশিদ।
ওই রিসোর্টে গিয়ে দেখা যায়, ভবনের তিন তলার আংশিক ঢালাইয়ের কাজ চলছে।
সি ফাইন্ড নামের রিসোর্টের প্রহরী লাল মিয়া জানান, এই রিসোর্টের মালিক কুমিল্লার কান্দিরপাড়ের গোলাম সারওয়ার খোকন। তার কাছে খোকনের মুঠোফোন নম্বর চাইলে তিনি বলেন, তার কাছে নম্বর নেই। সেখানে রিসোর্টটিতে দোতলা ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে।
এ বিষয়ে কক্সবাজার পরিবেশ অধিদপ্তরের উপপরিচালক শেখ মো. নাজমুল হুদা এবং ইউএনও পারভেজ চৌধুরী জানান, দ্বীপে কোনো অবকাঠামো নির্মাণের অনুমতি দেওয়া হয়নি।
জেলা প্রশাসক মো. মামুনুর রশীদ বলেন, ‘সেন্টমার্টিন দ্বীপকে এমপিএ ঘোষণার অনেক আগে থেকেই এখানে রিসোর্ট নির্মাণে নিষেধাজ্ঞা আছে। দ্বীপে এ রকমের স্থাপনা নির্মাণসহ সার্বিক পরিবেশ রক্ষার বিষয়গুলো দেখার জন্য একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটকে সেখানে সার্বক্ষণিক রাখা হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, দ্বীপে নতুন পর্যটন রিসোর্ট তৈরির বিষয়টি দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
নিয়ম অনুযায়ী দ্বীপে কোনো নির্মাণসামগ্রী টেকনাফ থেকে নিতে গেলে অনুমতির দরকার হয়। গাছ-বাঁশ নেওয়ার ক্ষেত্রে অনুমতি দিয়ে থাকেন সেন্ট মার্টিন দ্বীপ ইউপির চেয়ারম্যান। রড, সিমেন্ট ও ইট-কংক্রিটের অনুমতি নিতে হয় ইউএনওর কার্যালয় থেকে।
ইউপি চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান জানান, দ্বীপের কোনো বাসিন্দার ঘর নির্মাণ অথবা মেরামত কাজের জন্য টেকনাফ থেকে গাছ-বাঁশ পরিবহনের অনুমতি দেওয়া হয়।
ইউএনও পারভেজ চৌধুরী জানান, দ্বীপের সরকারি উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের জন্য নির্মাণসামগ্রী পরিবহনের অনুমতি দেওয়া হয়। ব্যক্তিগত কাজে নির্মাণসামগ্রী পরিবহনের অনুমতি দেওয়া হয় না।
সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান নুর আহমদ বলেন, মাত্র আট বর্গকিলোমিটার আয়তনের দ্বীপটিতে ইউনিয়ন পরিষদের হিসাব মতে, ১৮৮টি হোটেল-মোটেল ও কটেজ আছে। সাম্প্রতিক সময়ে এই সংখ্যা আরও বেড়ে গেছে।
২০২০ সালের ডিসেম্বরের শুমারি অনুযায়ী, দ্বীপের জনসংখ্যা ১০ হাজার ২৬। দ্বীপে পরিবারের অর্থাৎ বসতঘরের সংখ্যা এক হাজার ৪৫৪। গত এক বছরে বেড়েছে আরও শতাধিক ঘর। বহিরাগত লোকজনের বসতঘর রয়েছে পাঁচ শতাধিক।
এসব বিষয়ে পরিবেশ অধিদপ্তরের সেন্টমার্টিন দ্বীপের অফিসে কর্মরত সহকারী পরিচালক আজহারুল ইসলাম বলেন, ‘দ্বীপে নতুন স্থাপনা গড়ে তোলার কাজ বন্ধে গত নভেম্বর থেকে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান চলছে। এ জন্য জরিমানাসহ দণ্ড দেওয়া হচ্ছে। তারপরও বন্ধ করা মুশকিল হয়ে পড়েছে স্থাপনা নির্মাণের কাজ। বিনা অনুমতিতে স্থাপনা করায় এ পর্যন্ত ২০টি নিয়মিত মামলা এবং আরও ৫০টি এনফোর্সমেন্ট মামলা করা হয়েছে।