‘পাকিস্তানবিরোধী হিসেবে ভাষা সৈনিকদের নাম ছিল পুলিশের খাতায়’

লালমনিরহাট প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ১৩:৪৭

ভাষা সৈনিক আব্দুল কাদের
একুশে ফেব্রুয়ারি বিকালেই আমরা ঢাকায় গুলিতে নিহতের খবর পাই। সন্ধ্যার আগেই আমরা দুর্বার আন্দোলন গড়ে তলি। ওইদিন কাউকে ডাকতে হয়নি। দেশের প্রতি দেশের মানুষের ভাষার প্রতি মমত্ববোধ থেকেই সবাই আন্দোলনে যোগ দেয়। লালমনিরহাট উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ভাষা আন্দোলন ভাষা সংগ্রাম পরিষদ গঠন হয়।
২৩ ফেব্রুয়ারি হরতালের সমর্থনে ভাষা সংগ্রাম পরিষদের নেতৃবৃন্দ লালমনিরহাট উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ক্লাসবর্জন করে বাড়িতে পাঠিয়ে দেন। খবর পেয়ে কিছুক্ষণের মধ্যে পুলিশ তাদের গ্রেফতারের জন্য বিদ্যালয় গেটে আসলে স্কুলের প্রধান শিক্ষক পুলিশকে বিদ্যালয়ে প্রবেশের অনুমতি না দিলে পুলিশ বাহিরে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে ফিরে যায়। পরে পুলিশের গ্রেফতার এড়াতে কৌশলে ছাত্রনেতাগণ বিদ্যালয়ের পিছনে সুইপার কলোনি দিয়ে পালিয়ে যান। পরে পাকিস্তান বিরোধী হিসেবে চিহ্নিত করে পুলিশের খাতায় নাম লিখে কারণে-অকারণে তাদের ধরে এনে থানায় আটকে রাখা শুরু করলে তারা আত্মগোপনে চলে যান। কিন্তু তখনো তাদের আন্দোলন ছিল চলমান।
সোমবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে সাম্প্রতিক দেশকালকে দেয়া একান্ত সাক্ষাতকারে লালমনিরহাটের ভাষা সৈনিক আবদুল কাদের ভাসানী এসব কথা বলেন।
ভাষা সৈনিক আবদুল কাদের ভাসানী ১৯৫২ খ্রিস্টাব্দে লালমনিরহাট উচ্চ বিদ্যালয়ে দশম শ্রেণিতে পড়ার সময় ভাষা আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে জড়িয়ে পড়েন। লালমনিরহাটে গঠিত ভাষা সংগ্রাম পরিষদে আবদুল কাদের ভাসানী ছিলেন সাধারন সম্পাদক। এছাড়াও তিনি ১৯৭১-এর মহান মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক ছিলেন। বর্তমানে তিনি লালমনিরহাট সদর উপজেলার মহেন্দ্রনগর ইউনিয়নের হাড়ীভাঙ্গা (হলদীটারী) গ্রামে পরিবারের সাথে বসবাস করছেন।
একান্ত আলাপচারিতায় ভাষা সৈনিক কাদের বলেন, ১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলন সংগ্রামে সারা দেশের ন্যায় সক্রীয় ভূমিকায় ছিল লালমনিরহাটের ছাত্রসমাজ ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ। তারা ১৯৪৮ থেকে ১৯৫২ সাল পর্যন্ত ধারাবাহিকভাবে মাতৃভাষার দাবিতে আন্দোলন সংগ্রাম করেছেন।
তিনি বলেন, সন্নাস বিদ্রোহ, ওহাবি আন্দোলন, ফকির আন্দোলন, তেভাগা আন্দোলনসহ বিভিন্ন আন্দোলনে জাতিকে এক করা না গেলেও ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনে জাতি এক হয়ে যায়। সেদিন মুসলমান, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান, সুন্নী, সিয়া সবাই এক হয়ে মায়ের ভাষা বাংলার জন্য আন্দোলন করেছেন। আজ সেই আন্দোনকারী ভাষা সৈনিকদের কোনো মুল্যায়ণ করছে না সরকার। এদের জন্য সরকারের কোনো উদ্যোগ নেই।
শহীদ মিনার ও বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভাষা সৈনিকদের নাম লিপিবদ্ধ করার দাবী জানিয়ে কাদের বলেন, ভাষা আন্দোলন ও স্বাধীনতা যুদ্ধ একই সূত্রে গাঁথা। ব্রিটিশ আমলে জন্ম হয়েছে এটি আমাদের দুর্ভাগ্য, তবে স্বার্ধীন বাংলাদেশের মাটিতে কবর হবে এটি আমাদের সৌভাগ্য। প্রায় ৯৩বছর বয়সী এ ভাষা সৈনিক জীবিত থাকতেই দেশের সব ভাষা সৈনিকদের সরকারিভাবে স্বীকৃতি দাবী করেন।
উল্লেখ্য, জেলায় জীবিত ও প্রয়াত নারী-পুরুষ মিলে ১২জন ভাষা সৈনিক ছিলেন। এদের মধ্যে ১০জন প্রয়াত। তারা হলেন- আশরাফ আলী, ড. শাফিয়া খাতুন, মনিরুজ্জামান, আবদুল বুদ্দুছ, কমরেড শামসুল হক, মহেন্দ্র নাথ রায়, আবিদ আলী, জরিনা বেগম, জাহানারা বেগম (দুলু), কমরেড সিরাজুল ইসলাম। এখনও দুইজন জীবিত রয়েছেন। তারা হলেন- আবদুল কাদের ভাসানী, মো. জহির উদ্দিন আহম্মদ।