হস্তান্তরের ৮ মাসেই আশ্রয়ণ প্রকল্পের ৩৪ ঘরের বেহাল দশা

নোয়াখালী প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১৩ এপ্রিল ২০২২, ১২:৩৪

নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জের আশ্রয়ণ প্রকল্প থেকে তোলা ছবি। ছবি: নোয়াখালী প্রতিনিধি
নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জে মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া উপহারের আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর নির্মাণের কয়েক মাসের মধ্যেই ঘরগুলোর দেয়ালে ও মেঝেতে ফাটল ধরেছে এবং পলেস্তারা খসে পড়ছে।
সরেজমিনে গিয়ে উপজেলার রামপুর ইউনিয়নে মুজিব কলোনি আশ্রয়ণ প্রকল্পের এ বেহাল দশা দেখা গেছে।
ওই আশ্রয়ণ প্রকল্পের অধীনে ভূমিহীনদের নতুন ৩৪টি ঘর বরাদ্দ দেন প্রধানমন্ত্রী। কিন্তু উপকারভোগীদের কাছে হস্তান্তরের আট মাসের মধ্যে এসব ঘরের দেয়ালের পলেস্তারা খসে পড়ছে। মেঝের পলেস্তারা উঠে যাচ্ছে।
ভুক্তভোগীরা জানান, আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর নির্মাণে নিম্নমানের ইট, বালু, কাঠ, টিন ব্যবহার করা হয়েছে এবং প্রয়োজনের তুলনায় কম সিমেন্ট ব্যবহার করা হয়েছে। তাই নির্মাণের আট মাসের মধ্যেই ঘরের দেয়াল ও মেঝেতে ফাটল ধরেছে। খসে পড়ছে দেওয়ালের পলেস্তারা। এ অবস্থায় যেকোনো সময় বড় ধরণের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে বলে তারা আশঙ্কা করছেন।
প্রকল্পের পরিপত্র অনুযায়ী, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও), সহকারী কমিশনার (ভূমি), প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) ও ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মিলে ঘর বরাদ্দের তালিকা প্রস্তুত করার কথা। প্রাক্কলন অনুযায়ী, ১৯ ফুট ৬ ইঞ্চি দৈর্ঘ্য ও ২২ ফুট ৬ ইঞ্চি প্রস্থের ঘরের ভেতরে দুটি কক্ষ, রান্নাঘর ও শৌচাগার থাকার কথা। নকশা অনুযায়ী, ঘর নির্মাণে ৬ হাজার ইট, ৫০ বস্তা সিমেন্ট, ২০০ ঘনফুট বালু এবং ভিটা নির্মাণে ৫০ ফুট বালু ব্যবহার করার কথা।
সূত্রে জানা যায়, রামপুর ইউনিয়নের ৫নম্বর ওয়ার্ডে মুজিব কলোনিতে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর নির্মাণের জন্য ৬৮ শতক খাসজমি নির্বাচন করা হয়। এ জমিতে ৩৪টি ঘর নির্মাণ করা হয়। প্রতিটি ঘর নির্মাণে এক লাখ ৭১ হাজার টাকা ব্যয় হয়। গত বছরের মাঝামাঝি সময়ে এসব ঘর নির্মাণের কাজ শেষ হয়। ৩৪টি ঘরের মধ্যে ১২টির দলিল সুবিধাভোগীদের হাতে হস্তান্তর করা হয়েছে। বাকি ২২টি ঘরের জমির দলিলও হস্তান্তরের কথা রয়েছে।
ওই আশ্রয়ণ প্রকল্পে নতুন ঘর পেয়েছেন জাহিদুল ইসলাম বাবু। নতুন ঘরের অবস্থা সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ঘর পেয়ে গত আট মাস ধরে এখানে বাস করছেন তিনি। ঘরে ওঠার পরদিন থেকে দেয়াল থেকে পলেস্তারা খসে পড়ছে। এছাড়া ঘরের মেঝের কয়েকটি স্থান থেকে পলেস্তারা উঠে গেছে। ৩৪টি ঘরের অধিকাংশ ঘরের একই বেহাল দশা বলেও তিনি মন্তব্য করেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার সাবেক (পিআইও) কর্মকর্তা ফজলুল কাদের বলেন, কোম্পানীগঞ্জের আগের ইউএনও উপজেলার আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরগুলোর সব মাল ক্রয় করেছিলেন। এ মুহূর্তে এ বিষয়ে তার কথা বলার সুযোগ নেই বলেও তিনি মন্তব্য করেন। তিনি বর্তমান ইউএনও-এর সাথে আলাপ করে এ বিষয়ে কথা বলার পরামর্শ দেন।
কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) জোবায়ের হোসেন বলেন, কিছুদিন হলো আমি কোম্পানীগঞ্জে যোগদান করেছি। এ বিষয়ে আমি কিছু বলতে পারবনা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে তৎকালীন কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বর্তমান চান্দিনা উপজেলার (ইউএনও) মো. জিয়াউল হক মীর আশ্রয়ণ প্রকল্পের নির্মাণ সামগ্রী ঠিকাদারকে কিনে দেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করেন।
কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. খোরশেদ আলম চৌধুরীর সাথে যোগাযোগ করা যায়নি।
এ বিষয়ে নোয়াখালী জেলা প্রশাসক দেওয়ান মাহবুবুর রহমান বলেন, এটি একটি অপ্রত্যাশিত সমস্যা। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে।