তরুণ-তরুণীর ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে দাপট দেখাল পুলিশ

কুমিল্লা প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১৫ এপ্রিল ২০২২, ২০:২৪

ধর্মসাগর পার্কে তরুণ-তরুণী
কুমিল্লার ধর্মসাগর পার্কে তরুণ-তরুণীর ভিডিও ধারণ করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়ার অভিযোগে জেলা গোয়েন্দা পুলিশের দুই সদস্যকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। সামাজিক মাধ্যমে বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা সৃষ্টি হয়।
এ ঘটনায় আজ শুক্রবার (১৫ এপ্রিল) তাদের বরখাস্ত করা হয় বলে জানিয়েছেন কুমিল্লা পুলিশ সুপার ফারুক আহম্মেদ।
ফারুক আহম্মেদ জানান, ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেখেছি। মৌখিকভাবে কয়েকজন বিষয়টি জানান। তদন্ত করে অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় ১৪ এপ্রিল রাতেই তাদের সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। এ ছাড়াও তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বরখাস্তকৃতরা হলেন- জেলা গোয়েন্দা বিভাগের (ডিবি) কনস্টেবল নজরুল ইসলাম ও রোমান হাবিব রবিন।
ভাইরাল ভিডিওটিতে দেখা যায়, নববর্ষের দিন কুমিল্লার নগর উদ্যানে তরুণ-তরুণী বসে ছিল। এ সময় পেছন থেকে ভিডিও করতে করতে তাদের সামনে গিয়ে পরিচয় জানতে চান ডিবি পুলিশের একজন সদস্য। তাদের দাঁড় করিয়ে একের পর এক প্রশ্ন করতে থাকেন তিনি।
এ সময় কিশোরীর মাস্ক খোলার জন্য বলতে গিয়ে তাকে ‘তুই’ করে সম্বোধন করেন পাশে থাকা আরেক সদস্য। এরপরই পরিচয় জানতে যাওয়া সদস্য ওই কিশোরকে বলেন, ‘মুড়ায়া ছাতনা ছিরালামু একবারে।’
ডিবি সদস্যরা এ সময় মেয়েটির বাবার ফোন নম্বর চাইলে তারা ভয়ে মাফ চাইতে থাকে এবং মেয়েটির বাবা বিদেশ থাকেন বলে জানায় ছেলেটি। তখন পাশ থেকে একজন বলতে থাকেন, ‘বিদেশ থেকে (কিশোরীর বাবা) আইব এখন, নইলে অফিসে নিয়া যামু। অফিস থেকে অভিভাবক আইসা নিয়া যাবে।’
এক মিনিট ১০ সেকেন্ডের ভিডিওটিতে ছেলেটিকে কয়েকবার মাফ চাইতে দেখা যায়। তবে কর্ণপাত করেননি পুলিশ সদস্যরা।
ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। অপ্রাপ্ত বয়স্ক তরুণ-তরুণীদের ভিডিও ভাইরাল হলে সচেতন নাগরিক সমাজ প্রতিবাদের ঝড় তুলে।
এ বিষয়ে সচেতন নাগরিক কমিটির কুমিল্লার সাবেক সভাপতি বদরুল হুদা জেনু বলেন, ‘আইনশৃঙ্খলা রক্ষার্থে পুলিশ যেকোনো কিছুর ভিডিও ধারণ করতে পারে। তবে অপ্রাপ্ত বয়স্ক তরুণ-তরুণীদের চেহারাসহ ভিডিও করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়া খুব অন্যায়। পুলিশ সদস্য হিসেবে এমন কাজ আমরা আশা করি না। তারা যদি আত্মঘাতী কোনো সিদ্ধান্ত নিত, সেক্ষেত্রে এর দায়ভার কে নিত?
কুমিল্লা সিটি মেয়র মনিরুল হক সাক্কু বলেন, পার্ক নাগরিকদের বিনোদনের জন্য। পার্কে অশালীনতা কাজ শোভনীয় নয়, কারো সাথে অশোভন আচরণ করা ঠিক না। গতমাসে আমরা জেলা মাসিক সমন্বয় সভায় সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছি, স্কুল কলেজ চলাকালীন ড্রেস পরে কেউ পার্কে প্রবেশ করতে পারবে না। বৈশাখের দিন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছুটি ছিলো। আর ছেলে মেয়ে দুইজন ড্রেস পরা ছিলো না। বিষয়টি পুলিশ সমাধানের দায়িত্ব নিয়েছে।
প্রসঙ্গত, ১৪৫৮ সালে ধর্মসাগর দিঘী খনন করেন হয়। এ দিঘীকে কেন্দ্র করে তৈরি হয় সিটি পার্ক। যার রক্ষণাবেক্ষণ করে কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশন।