
হাওরের বাঁধ ভেঙে পানি প্রবেশ করছে। ছবি : সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি
সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার টাঙ্গুয়ার হাওরের বাঁধ ভেঙে পানি প্রবেশ করছে। এতে নোয়াল, জয়পুরের হাওরসহ ১০টি হাওরে ৬ হাজার হেক্টরের বেশি বোরো জমি পানিতে তলিয়ে যাচ্ছে।
আজ রবিবার (১৭ এপ্রিল) বিকেল সাড়ে ৪টায় গুরমার ২৭নং পিআইসি গলগলিয়া বাঁধটি ভেঙে টাঙ্গুয়ার হাওরে পানি প্রবেশ করছে।
এই বাঁধটি টিকিয়ে রাখতে গত ১২ দিন ধরে তাহিরপুর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রায়হান কবির, দক্ষিণ শ্রীপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আলী আহমদ মোরাদসহ স্থানীয় এলাকাবাসী ও কৃষকরা দিনরাত চেষ্টা করছিল।
এদিকে আজ সকাল ১১টার দিকে টাঙ্গুয়ার হাওরের ওয়াচ টাওয়ারের পাশের বাঁধটি দিয়ে পানি প্রবেশ করছে। এই বাঁধটি ১৫০ ফিট লম্বা। বাঁধটি পানি উন্নয়ন বোর্ডের বাঁধ না হলেও ২৩নং পিআইসির মাধ্যমে কাজ করানো হয় ৯ লাখ টাকা ব্যয়ে। বাঁধটি কিছুদিন আগে ধসে পরলে মেরামত করা হয়। কিন্তু আজ বাঁধ ঠিক থাকলেও বাঁধের পাশ দিয়ে পানি প্রবেশ করছে বলে জানান আহমেদ কবির নামে এক হাওর উন্নয়ন কর্মী।
এর আগে ২ এপ্রিল সকালে টাঙ্গুয়ার হাওরে নজরখালী বাঁধসহ উপজেলার কয়েকটি বাঁধ ভেঙে সাত হাজার হেক্টর বোরো জমি পানিতে তলিয়ে গেছে।
এদিকে টাঙ্গুয়ার হাওরে পানি প্রবেশ করলেও হাওরের ফসল রক্ষা বাঁধ নির্মাণের জন্য প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির (পিআইসি) সভাপতি আনোয়ারের দেখা পাওয়া যায়নি।
অন্যদিকে নদীতে পানি বাড়তে থাকায় শুধু ২৩নং পিআইসি নয় ২৪, ২৫, ২৬, ৪৩, ৪৪ বিনোদপুরের বাঁধসহ প্রতিটি বাঁধের উপর দিয়ে ও বাঁধের পাশে নিচু এলাকা দিয়ে পানি প্রবেশের আশঙ্কা করছেন হাওর পাড়ের কৃষক ও কৃষির সাথে সম্পর্কিত লোকজন।
তারা বলছেন, বেশিভাগ দুর্বল বাঁধ ও ক্লোজারে (খালে) যথাযথ নিয়মে কাজ না হওয়ার কারণেই হাওরে উৎপাদিত একমাত্র বোরো ধান ঝুঁকিতে পড়েছে। বেশিরভাগ ক্লোজারেই বাঁশ, চাটাই ব্যবহার করা হয়নি। বাঁধের নিচে এ কারণে সৃষ্ট এক ধরনের গর্ত (স্থানীয় ভাষায় ফুলপা) রয়েছে। ওই সব গর্ত ভরাটে কাজ হয়নি। মাটিকে ভালো করে স্থায়ী করতে দুরমুজ (চাপ) দেওয়া হয়নি।
হাওর বাঁচাও আন্দোলনের নেতারা বলছেন, সুনামগঞ্জ হাওরের ফসল রক্ষা বাঁধ নির্মাণ ও সংস্কারে অর্থ বরাদ্দ বহুগুণ বেড়েছে। বেড়েছে বাঁধের দৈর্ঘ্য ও উচ্চতাও। কিন্তু ত্রুটিপূর্ণ নকশায় বাঁধ নির্মাণ ও তদারকিতে ঘাটতি থাকায় টেকসই হয়নি। এ কারণেই পাহাড়ি ঢলের পানিতে হাওরসংলগ্ন নদীগুলো ভরে উঠতেই আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন কৃষকরা। তারা বলছেন, বিগত চার বছর পাহাড়ি ঢল হয়নি। পিআইসি ও পাউবোর মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তারা ভেবেছিলেন এ বছরও হবে না। এ কারণেও বাঁধের কাজের মান খারাপ হয়েছে।
টাঙ্গুয়ার হাওরের বাঁধের পাশেই বাড়ি আহমেদ কবিরের। তিনি জানান, আমি টাঙ্গুয়ার হাওরের বাঁধে সকালে গিয়েছিলাম চোখের সামনেই বাঁধের পাশ দিয়ে টাঙ্গুয়ার হাওরে পানি প্রবেশ করছে। এতে করে ছোটবড় ১০টি হাওর পানিতে তলিয়ে যাবে।
চিলানী তাহিরপুর গ্রামের কৃষক সাহাজ উদ্দিন জানান, ওই হাওরে আমি ৪০ কিয়ার (৩০ শতাংশে এক কিয়ার) জমি বোরো আবাদ করেছি ধার দেনা করে। এই জমিই আমার মূল আয়ের উৎস। হাওরে পানি প্রবেশ করায় পথে বসতে হবে।
জয়পুর গ্রামের কৃষক আল আমিন জানায়, ১৩ কিয়ার জমিতে বোরো চাষ করেছেন তিনি। এই হাওরে পানি প্রবেশ করায় আমার কষ্টের ফলানো সোনার ফসল তলিয়ে যাচ্ছে।
কৃষক নুর আলম হাওরে ৩৫ কিয়ার বোরো জমি চাষ করেছেন। ফসল তলিয়ে যাচ্ছে, ছেলে মেয়ে নিয়ে না খেয়ে থাকতে হবে।
তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রায়হান কবির জানান, নদীতে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় টাঙ্গুয়ার হাওরে গাঙের বাঁধের পাশ দিয়ে টাঙ্গুয়ার হাওরে পানি প্রবেশ করছে। এটি পানি উন্নয়ন বোর্ডের না। এটি স্থানীয় এলাকাবাসী ও কৃষক মিলে বাঁধ নির্মাণ করে। এরপরও আমিসহ কৃষকরা বাঁধটি টিকিয়ে রাখতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছিলাম।