সেতাবগঞ্জ চিনিকল
কর্মচারীদের বেতন হচ্ছে লিজের টাকায়

মো. রাসেল ইসলাম, দিনাজপুর
প্রকাশ: ০৬ মে ২০২২, ১৫:২০

সেতাবগঞ্জ চিনিকল। ছবি- সংগৃহীত
৮৪ কোটি টাকা লোকসানের বোঝা মাথায় নিয়ে ২০২০-২১ অর্থবছরে আনুষ্ঠানিকভাবে আখ মাড়াই কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায় এক সময়ের লাভজনক প্রতিষ্ঠান সেতাবগঞ্জ চিনিকলটির। আবারো তা চালু হওয়ার আশা করছেন কর্মকর্তাসহ শ্রমিক কর্মচারীরা। প্রতিষ্ঠানটির চাকা বন্ধ থাকায় কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন ভাতা মিলছে মিলের জায়গা-জমি, পুকুর ও জলাশয় সাধারণ মানুষের কাছে লিজ দিয়ে ও মিলের জমিতে ড্রাগন চাষ করে।
১৯৩৩ সালে ভারতের কিবালিন সুরজমল আগরওয়ালা এবং নাগরমল আগরওয়ালা ইন্দোনেশিয়া হতে পুরাতন ৮ হাজার টন চিনি উৎপাদন ক্ষমতা সম্পন্ন সেতাবগঞ্জ চিনিকল স্থানান্তর করেন। এর জমির পরিমাণ ৩৮৬০.৫০ একর। ১৯৩৩ সাল থেকে ১৯৬৫ সাল পর্যন্ত মিলনটি মাড়োয়ারিদের ব্যবস্থাপনায় ছিল। ১৯৬৫ সালে পাক-ভারত যুদ্ধের সময় মাড়োয়ারিরা দেশ ত্যাগ করেন। সে সময় পাকিস্তান সরকারের পক্ষে বি কে রহমান কাস্টিডিয়ান মিলটির দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। কয়েক মাস পরে ইপিআইডিসির ওপর মিলটির দায়িত্বভার অর্পণ করা হয়।
১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় চিনিকলটির মেশিনপত্র ধ্বংস হওয়ায় ১৯৭৪ সালে মিলটি লে-অফ ঘোষণা করে দেওয়া হয়। এই অঞ্চলের জমি, আবহাওয়া ও প্রকৃতি আখ চাষের উপযোগী হওয়ায় এবং পুরাতন মিলের বেকার শ্রমিক, কর্মচারী ও জনগণের কথা চিন্তা করে ঐতিহাসিক তেভাগা আন্দোলনের কৃষক নেতা মরহুম হাজি মোহাম্মদ দানেশসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতা এবং স্বেচ্ছাসেবীদের প্রচেষ্টায় সরকারি ব্যবস্থাপনায় ১৯৮২ সালে মিলটিতে আধুনিক যন্ত্রপাতি স্থাপন করে পুনরায় উৎপাদন শুরু করা হয়।
শুরুর দিকে প্রতিষ্ঠানটি লাভজনক হলেও প্রয়োজনের অতিরিক্ত লোকবল নিয়োগ, চুরি, ট্রেড ইউনিয়ন, দুর্নীতি-অনিয়মসহ নানা কারণে ৯০ দশকের পর থেকে ধারাবাহিক লোকসানের মুখে পড়ে প্রতিষ্ঠানটি। এরই ধারাবাহিকতায় আনুষ্ঠানিকভাবে আখ মাড়াই কার্যক্রম বন্ধ হওয়া পর্যন্ত সেতাবগঞ্জ চিনিকলের লোকসানের পরিমাণ গিয়ে দাঁড়িয়েছে ৮৪ কোটি টাকা। ধারাবাহিক লোকসানের কারণে দিন দিন রুগ্ন প্রতিষ্ঠান হিসেবে রূপ নেওয়ায় ২০২০-২১ আখ মাড়াই মৌসুম শেষ হওয়ার পর সরকার সেতাবগঞ্জ চিনিকলসহ ৬টি চিনিকলে আখ মাড়াই কার্যক্রম স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। সেই থেকে সেতাবগঞ্জ চিনিকলের চাকা বন্ধ রয়েছে।
সেতাবগঞ্জ চিনিকলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. হুমায়ন কবীর জানান, সেতাবগঞ্জ চিনিকলের চাষযোগ্য প্রায় ২৭২১.৩০ একর জায়গা বন্ধের পর থেকে লিজ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া পুকুর-জলাশয়ও মাছচাষের জন্য লিজ দেওয়া হয়েছে। লিজ দেওয়া হয়েছে আম বাগান। এছাড়াও ১৯ একর জমি ড্রাগন বাগান করার জন্য ৩ বছরের জন্য ৫৭ লাখ টাকায় লিজ দেয়া হয়েছে। চিনি কলের গোডাউনে কোনো চিনি বা চিটা গুড় মজুদ নেই।
তিনি আরো জানান, সম্প্রতি বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশন এবং বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের একটি টিম আখ মাড়াই স্থ’গিত থাকা মিলগুলো পরিদর্শন করেছেন। যে ৬টি মিল পরিদর্শন করেছেন তার মধ্যে সেতাবগঞ্জ চিনি কলটি সবার আগে চালু হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
তিনি আরো বলেন, মিল বন্ধ করা হয়নি, কোনো শ্রমিকও ছাটাই করা হয়নি। চালু থাকা ৯টি চিনি কলে শ্রমিক-কর্মচারী চরম সংকট মোকাবেলায় মন্ত্রণালয় বন্ধ মিলগুলোর শ্রমিক-কর্মচারীদের বদলি করেছে।