মাতারবাড়ি বিদ্যুৎ সঞ্চালন প্রকল্পের অর্থ গিলে খাচ্ছে কেইসি

ইব্রাহিম খলিল
প্রকাশ: ২০ জানুয়ারি ২০২০, ১২:২০

চলছে প্রকল্পের পাইলিংইয়ের কাজ। ছবি: সাম্প্রতিক দেশকাল
কক্সবাজারের
মাতারবাড়ি থেকে চট্টগ্রামের মদুনাঘাট পর্যন্ত ৯২ কিলোমিটার দীর্ঘ ৪০০ কেভি বিদ্যুৎ
সঞ্চালন লাইন প্রকল্পের টাওয়ার স্থাপনে চলছে পুকুর চুরি। একেকটি টাওয়ারের পাইলিং
কাজে কারসাজি করে অর্ধকোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে ভারতীয় ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান কেইসি
ইন্টারন্যাশনাল।
পাওয়ার
গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশ (পিজিসিবি) প্রায় ৭৯৫ কোটি টাকা ব্যয়ে এ প্রকল্প
বাস্তবায়ন করছে। প্রকল্পের আওতায় বসানো হচ্ছে ৩৫০টি টাওয়ার। যেখান থেকে হাতিয়ে নেয়া
হচ্ছে শতকোটি টাকা। উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা জাইকা, বাংলাদেশ সরকার এবং পিজিসিবি সম্মিলিতভাবে এ কাজে অর্থায়ন করছে।
প্রকল্পের
তথ্যমতে,
মাতারবাড়ি আল্ট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল কোল ফায়ার পাওয়ার
প্রকল্প-২ নামে মাতারবাড়ি, পেকুয়া, বাঁশখালী, আনোয়ারা, শিকলবাহা, মদুনাঘাট
পর্যন্ত গ্রিড সাবস্টেশনে জাপানের হিটাচি করপোরেশনের ৫০০-৭৫০ এমভিএ ক্ষমতার তিনটি
ট্রান্সফরমার বসানো হবে।
এছাড়া ৪০০ কেভি ক্ষমতার ছয়টি বে, দুইটি বাস কাপলার, দুইটি সেকশন এবং দুইটি বাস বিটি স্থাপন করা হচ্ছে। ২৩০ কেভি অংশেও একই সংখ্যক যন্ত্রাংশ থাকবে। পিজিসিবির গৃহীত ঢাকা-চট্টগ্রাম মেইন পাওয়ার গ্রিড স্ট্রেংথদেনিং প্রজেক্ট শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় এই সাবস্টেশন নির্মাণ করা হচ্ছে।
অনুসন্ধানে
জানা গেছে, বর্তমানে প্রকল্পে টাওয়ার
স্থাপনের কাজ চলছে চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলার গন্ডামারা এলাকায়। সেখানে টাওয়ার
স্থাপনের জন্য চারটি খুঁটির একেকটিতে ৫টি করে মোট ২০টি পাইলিং করা হচ্ছে। প্রতিটি পাইলিংয়ে ৩২ মিটার বা ১০৮ ফুট করে করার
কথা থাকলেও ৬০-৭০ ফুট পাইলিং করা হচ্ছে। প্রতিটিতে ৪০-৪৮ ফুট পাইলিং কম করা হচ্ছে।
লোহার রড,
বালু, সিমেন্ট
ব্যবহারেও ব্যাপক কারচুপি চলছে। ফলে টাওয়ার স্থাপন বরাবরই ঝুঁকিতে থাকছে। প্রতিটি
টাওয়ার থেকে হাতিয়ে নেয়া হচ্ছে অর্ধকোটি টাকারও বেশি।
নাম
প্রকাশে অনিচ্ছুক প্রকল্প কাজের এক কর্মকর্তা বলেন, মাতারবাড়ী-মদুনাঘাট সঞ্চালন লাইনটি মদুনাঘাট থেকে নারায়ণগঞ্জের মেঘনাঘাট
পর্যন্ত নির্মাণাধীন ৪০০ কেভি সঞ্চালন লাইনের সঙ্গে জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হবে। এতে
সিস্টেমলস কমবে। এ সঞ্চালন লাইন নির্মাণে ব্যয় হবে প্রায় ৭৯৫ কোটি টাকা। এ লাইনে
৩৫০টি টাওয়ার বসানো হবে। যেখান থেকে শতকোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার ছক তৈরি করেছে
কেইসি।
এ
ব্যাপারে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে প্রকল্পের ব্যবস্থাপক আকতার হোসেন অসুস্থ বলে
জানান। পরে কল দেয়া হলেও তিনি কল রিসিভ করেননি।
বাপ্পি
নামে প্রকল্পের সাইট ইঞ্জিনিয়ারের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি কোনরকম প্রশ্নের
উত্তর না দিয়ে উল্টো অশোভন আচরণ করেন।
প্রকল্পের
প্রধান প্রকৌশলী সুকান্ত চৌধুরী বলেন, স্থাপনা নির্মাণ কাজ কখনো শতভাগ হয় না। হয় বললে মিথ্যা বলা হবে। একটু-আধটু
অনিয়ম থাকেই। সেটা নিয়ে মাতামাতির কিছুই নেই।
জানা যায়, ২০১৯ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় পিজিসিবির প্রধান কার্যালয়ে
প্রতিষ্ঠান দুটির মধ্যে প্রকল্প কাজ বাস্তবায়নে চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। পিজিসিবির
পক্ষে কোম্পানি সচিব মো. আশরাফ হোসেন, কেইসির পক্ষে কান্ট্রি হেড ও মহাব্যবস্থাপক কুলদীপ কুমার সিনহা চুক্তিপত্রে সই
করেন। চুক্তিতে বলা হয়, আগামী ৩০ মাসের
মধ্যে টার্নকি পদ্ধতিতে কাজটি শেষ করে পিজিসিবির কাছে হস্তান্তর করবে
প্রতিষ্ঠানটি।
মাতারবাড়ীতে কয়লাভিত্তিক ১২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণাধীন। পরিকল্পনায় আরও বিদ্যুৎ প্রকল্প রয়েছে। এ জন্য সঞ্চালন লাইনে উচ্চতর প্রযুক্তি ও কন্ডাক্টর (তার) ব্যবহার করা হচ্ছে, যার মাধ্যমে ২ হাজার ৪০০ মেগাওয়াট পর্যন্ত বিদ্যুৎ সঞ্চালন করা সম্ভব হবে। কিন্তু পুকুর চুরির কারণে তা ভুলুন্ঠিত হবে বলে মত প্রকাশ করেছেন সংশ্লিষ্টরা।