
গৃহবধূ লাবণ্য আক্তার। ছবি: বরিশাল প্রতিনিধি
বরিশালের বাকেরগঞ্জে ঘুমন্ত শাশুড়িকে জবাই করে হত্যা করেছেন এক গৃহবধূ। এই ঘটনায় গৃহবধূ লাবন্য আক্তারকে (২১) গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। পাশাপাশি তার বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলাও হয়েছে।
গতকাল বুধবার (১১ মে) রাত সাড়ে ১০টার দিকে উপজেলার রঙ্গশ্রী ইউনিয়নের কাঁঠালিয়া গ্রামে এই হত্যাকাণ্ড ঘটে। নিহত নাজনীন বেগম (৫০) একই এলাকার মৃত হানিফ হাওলাদারের স্ত্রী। এছাড়া গৃহবধূ লাবন্য নিহতের ছেলে উজ্জল হাওলাদারের স্ত্রী। তাদের দাম্পত্য জীবনে একটি পুত্র সন্তান রয়েছে।
পুলিশ জানিয়েছে, নিহত শাশুড়ির সাথে গৃহবধূর বাবার অনৈতিক সম্পর্ক ছিল বলে স্বীকার করেছে গৃহবধূ। তবে শাশুড়ির মদদে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে দ্বন্দ্বের জেরেই এই হত্যাকাণ্ড ঘটেছে বলে আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন লাবন্য আক্তার।
বাকেরগঞ্জ থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) সত্য রঞ্জন খাসকেল গৃহবধূর আদালতে দেয়া জবানবন্দির বরাত দিয়ে বলেন, ‘তিন বছর পূর্বে ঝালকাঠির নলছিটি উপজেলার কুশঙ্গাল গ্রামের মো. খলিল হাওলাদারের মেয়ে লাবন্য আক্তার ও বাকেরগঞ্জের রঙ্গশ্রী গ্রামের উজ্জলের বিয়ে হয়। বিয়ের পর থেকেই তাদের দাম্পত্য জীবন কলহে জড়িয়ে পড়ে।
তিনি আরো বলেন, ‘উজ্জল জীবিকার তাগিদে ঢাকায় থাকেন। সেখানে একটি চাকরি করেন। ছয় মাস বা এক বছর পরে তিনি বাড়িতে আসতেন। আর গৃহবধূ লাবন্য গ্রামে শাশুড়ির সাথে এক বাড়িতে বসবাস করতেন। তবে লাবন্য তার স্বামীর সাথে ঢাকায় থাকার জন্য বায়না ধরেন। কিন্তু উজ্জল তাকে ঢাকায় নিয়ে যেতে অস্বীকৃতি জানান। এমনকি দুই বছরের শিশু সন্তানের দুধ এবং খরচের টাকাও দিতেন না তিনি। এ নিয়ে তাদের মধ্যে কলহের সৃষ্টি হয়। তার ওপর স্বামীর অবর্তমানে শাশুড়ির সাথে বনিবনা হচ্ছিল না লাবন্যের। প্রায় সময় তাদের মধ্যে ঝগড়া হতো।
পুলিশ পরিদর্শক সত্য রঞ্জন জানান, ‘ঈদ উপলক্ষে গত ৩ মে গ্রামের বাড়িতে আসেন উজ্জল। এরপর গত ৮ মে তাদের মধ্যে একই বিষয় নিয়ে ঝগড়া হয়। এজন্য ওইদিনই শিশু সন্তানকে নিয়ে অভিমান করে বাবার বাড়িতে চলে যান গৃহবধূ। পরবর্তী ১০ মে ঢাকায় চলে যান স্বামী উজ্জল। এরপর থেকেই স্ত্রীর সাথে যোগাযোগ বন্ধ করেন তিনি।
আদালতে দেয়া জবানবন্দিতে গৃহবধূ আরো উল্লেখ করেছেন, ‘স্বামী ঢাকায় যাওয়ার পরে তাকে প্রতিদিন একাধিকবার কল দিয়েছেন লাবন্য। ফেসবুকসহ ক্ষুদে বার্তা পাঠিয়েছেন মুঠোফোনে। কিন্তু কোনো কিছুতেই স্বামীর সাথে যোগাযোগ করতে পারছিলেন না।
এরপর ঘটনার রাতে শিশু সন্তানকে বাড়িতে রেখে লুকিয়ে স্বামীর বাড়িতে যান। সেখানে আলমারির মধ্যে গৃহবধূ লাবন্যের দুই হাজার টাকা রাখা ছিল। কিন্তু আলমারির চাবি ছিল শাশুড়ির কাছে। তার কাছে চাবি চাওয়া হলে তিনি তা দিতে অস্বীকৃতি জানান। এ নিয়ে তাদের মধ্যে ঝগড়া হয়। সেই ঝগড়া থেকেই হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে।
তবে গৃহবধূর জবানবন্দী অনুযায়ী শাশুড়িই তাকে হত্যার জন্য ছুরি বের করেন। এসময় তাদের মধ্যে ধস্তাধস্তি হয়। তখন শাশুড়ির হাত থেকে ছুরি কেড়ে নেন গৃহবধূ। এক পর্যায় ছুরি দিয়ে শাশুড়িকে জবাই করে হত্যা করেন বলে আদালতে স্বীকারোক্তি দিয়েছে লাবন্য। তাছাড়া এই হত্যাকাণ্ডের সাথে অন্য কেউ জড়িত নয় বলেও আদালতকে জানিয়েছেন তিনি। এ কারণে লাবন্যকে নতুন করে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের প্রয়োজন হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন বাকেরগঞ্জ থানার পুলিশ পরিদর্শক সত্য রঞ্জন খাসকেল।
অপর এক প্রশ্নের উত্তরে পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, ‘নিহতের ছেলে উজ্জলের বাবা মারা গেছেন অনেক আগেই। তাদের বিয়ের আগে থেকেই লাবন্যের বাবার খলিল হাওলাদারের সাথে পরকীয়ার সম্পর্ক ছিল উজ্জলের মা নাজনীন বেগমের। ছেলে মেয়ের বিয়ের পরে বেয়াই-বেয়ানের সেই সম্পর্ক আরো গভীর হয়। তারা শারীরিক সম্পর্কেও জড়ায়। যা গৃহবধূ লাবন্য পুলিশের কাছে স্বীকার করেছে। তবে হত্যাকাণ্ডের পেছনে বাবা এবং শাশুড়ির সম্পর্কের বিষয়টি জড়িত নয় বলেও দাবি করেছে গৃহবধূ।
পুলিশ কর্মকর্তা সত্য রঞ্জন খাসকেল বলেন, ‘হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় একটি হত্যা মামলা দায়ের হয়েছে। নিহতের ছেলে উজ্জল বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেছেন। ওই মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে গৃহবধূ লাবন্যকে আদালতে সোপর্দ করা হয়। এসময় লাবন্য আদালতে হত্যার দায় স্বীকার করে স্বীকারোক্তি দিয়েছেন। পরে আদালতের নির্দেশে গৃহবধূকে বরিশাল কেন্দ্রীয় কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছে। এসময় গৃহবধূর সাথে তার এক বছর ৬ মাস বয়সী শিশু সন্তান মুজাহিদুল ইসলামকেও কারাগারে রাখা হয়েছে। শিশুটি এখনো মায়ের বুকের দুধ পান করে। এ কারণে আদালতের নির্দেশে তাকে মায়ের সাথে কারাগারে রাখা হয় বলে জানান তিনি।