
সেতু খুলে দেয়ার পর দীর্ঘ যানজট তৈরি হয়েছে। ছবি : সংগৃহীত
উদ্বোধনের একদিন পর আজ রবিবার (২৬ জুন) ভোর থেকে যানবাহন চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হয়েছে পদ্মা সেতু। আজ ভোর ৬টায় সেতু খুলে দেয়ার পর সেতুর দুই প্রান্তে দীর্ঘ যানজট তৈরি হয়েছে।
অবিস্মরণীয় এই মুহূর্তের সাক্ষী হতে দুই পাড় থেকেই ছুটে এসেছেন অসংখ্য মানুষ। ভোর থেকেই সেতুর দুই প্রান্তে ব্যক্তিগত গাড়ি, বাইক, ভাড়া করা গাড়ি, পণ্যবাহী ট্রাক ও বাসের দীর্ঘ সারি দেখা গেছে। এতে টোল প্লাজাগুলোতে দেখা গেছে ব্যাপক চাপ।
টোল প্লাজায় এক একটি যানবাহনের টোল আদায় করতে যে সময় লাগছে, তার তুলনায় যানবাহনের চাপ অনেক বেশি হওয়ায় এই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। মোট ছয়টা বুথ থেকে টোল আদায় করা হলেও, যানবাহনের চাপ অত্যধিক হওয়ায় এই যানজট তৈরি হয়েছে।
বিবিসির সংবাদদাতা নাগিব বাহার বলেছেন, পদ্মা সেতু প্রথমবারের মতো পার হওয়া নিয়ে মানুষের উচ্ছ্বাস এতো বেশি যে যানজট থাকলেও তা নিয়ে মানুষের মধ্যে খুব একটা আক্ষেপ চোখে পড়ছে না তার।
এক দম্পতির সাথে কথা বলেছেন নাগিব, যারা যানজট দেখে বাস থেকে নেমে সেতু অভিমুখে হাঁটা শুরু করেছেন। এই দম্পতির বাড়ি নদীর ঠিক ওপারে শরীয়তপুরে।
তারা বলছিলেন, মূলত প্রথম দিন সেতু পার হওয়ার জন্যই এসেছেন তারা। সারা জীবন এখান থেকে ফেরি পার হয়েছি। যখন সেতু তৈরি হচ্ছিল তখনো বিশ্বাস হয়নি, কোনোদিন এই সেতু পার হতে পারবো। তাই নিজের অবিশ্বাস দূর করার জন্য আজ এসেছি।
সেতু পার হওয়ার অপেক্ষায় থাকা আরেকজন বাসযাত্রী বলছিলেন, পদ্মা নদীকেও যে বশে আনা যায় সেটা তার বিশ্বাস করতে এখনো কষ্ট হচ্ছে।
ভোর ৬টা থেকে যান চলাচলের জন্য সেতু খুলে দেয়ার কথা থাকলেও ১০ মিনিট আগেই যানবাহন চলতে শুরু করে সেতুর উপর দিয়ে।
পদ্মা নদীর ওপর দিয়ে তৈরি ছয় দশমিক ১৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের এই সেতুটির মাধ্যমে দক্ষিণাঞ্চলের ২১টি জেলার সাথে দেশের বাকি অংশের সংযোগ তৈরি করেছে। এটি বাংলাদেশের সবচেয়ে দীর্ঘ সেতু।
গতকাল শনিবার এই সেতু উদ্বোধনের পর প্রথম টোল দিয়ে সেতু পার হন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তবে এদিন সারাদিনই সেতু যান চলাচলের জন্য বন্ধ রাখা হয় নিরাপত্তাজনিত কারণে। এদিন ফেরিও বন্ধ রাখা হয়। ফলে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সাথে এই রুট দিয়ে সড়কপথে যোগাযোগ কার্যত অচল ছিল এই রুট দিয়ে।
প্রথম দিনেই পদ্মা সেতু দিয়ে পাড় হচ্ছে বেশ কিছু পণ্যবাহী ট্রাকও। উচ্ছ্বাসিত শরীয়তপুরের জাজিরা প্রান্ত থেকে পাড় হয়ে আসা কাঁচামালবাহী একটি ট্রাকের চালক আজিজ।
তিনি বলেন, আগে দুই-তিন ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হতো ফেরিতে। আবার কোনো কোনো সময় আরো বেশি সময় লাগতো। সেই তুলনায় আজকের জ্যাম কিছুই না। ভালো লাগছে, এখন থেকে ঢাকায় দিনে দিনে মালামাল বহন করা যাবে। এখন সবজি নিয়ে যাচ্ছি, বিকালে ঢাকা থেকে আবার মালামাল নিয়ে ফিরে আসবো।
পদ্মা সেতু প্রকল্পের নির্বাহী প্রকৌশলী তোফাজ্জল হোসেন জানান, সেতু নিয়ে ব্যাপক আগ্রহ থাকায় যান চলাচল শুরুর দিন আজ ভোর থেকেই ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রসওয়ে ভিড় জমায় শতশত যানবাহন। তবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে চেষ্টা করা হচ্ছে। কর্তৃপক্ষও যথাযথ প্রস্তুতি রেখেছে, সেনাবাহিনীর পাশাপাশি অন্যান্য বাহিনীর সদস্যরাও কাজ করছেন।
প্রধানমন্ত্রী উদ্বোধন ঘোষণা করেই সেতু পাড়ি দিয়েছেন তার গাড়ির টোল দিয়ে। বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনাকে টোল গুনতে হয়েছে ৭৫০ টাকা।
সেতুতে টোলের হার ইতোমধ্যে নির্ধারিত হয়েছে। মিনিবাসে ১৪০০ টাকা, মাঝারি বাসে ২০০০ টাকা এবং বড় বাসে ২৪০০ টাকা টোল দিতে হবে। ছোট ট্রাকের টোল ১৬০০ টাকা, মাঝারি ট্রাকে ২১০০-২৮০০ টাকা, বড় ট্রাকে ৫৫০০ টাকা। পিকআপের টোল ১২০০ টাকা।
কার ও জিপের টোল ধরা হয়েছে ৭৫০ টাকা, মাইক্রোবাসে ১৩০০ টাকা। মোটরসাইকেল নিয়ে পদ্মা সেতু পার হতে চাইলে টোল দিতে হবে ১০০ টাকা।