Logo
×

Follow Us

জেলার খবর

৭ মিনিটে পদ্মা পাড়ি, চার ঘণ্টায় বরিশাল

Icon

খান রুবেল, বরিশাল

প্রকাশ: ২৬ জুন ২০২২, ১৮:২৬

৭ মিনিটে পদ্মা পাড়ি, চার ঘণ্টায় বরিশাল

পদ্মা সেতুর বদৌলতে নেই ভোগান্তি। ছবি: বরিশাল প্রতিনিধি

পদ্মা সেতুর উদ্বোধ হয়েছে শনিবার। আর রবিবার (২৬ জুন) সকাল থেকে সেতুতে বাস চলাচল শুরু হয়েছে। ফেরিবিহীন কোনো ভোগান্তি ছাড়াই সরাসরি বরিশালে এসে পৌঁছাতে পেরে খুশি যাত্রীরা। কেননা যেই পদ্মা পাড়ি দিতে দেড় ঘণ্টার অধিক সময় লাগতো সেই পদ্মা পাড়ি দিয়েছেন মাত্র সাত মিনিটে। আবার উদ্বোধনের শুরুতেই বাসে করে বরিশাল আসতে পেরে নিজেদের ধন্য মনে করছেন তারা।

তবে ফরিদপুরের ভাঙ্গা থেকে বরিশাল নগরীর রূপাতলী পর্যন্ত মহাসড়র প্রশস্ত না করায় ভোগান্তি বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করছেন যাত্রী ও চালকরা। তারা বলছে পদ্মা সেতু আমাদের জন্য আশীর্বাদ হলেও সরু সড়ক দুর্ঘটনার বড় কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। তাই যত দ্রুত সম্ভব মহাসড়ক প্রশস্ত করণের দাবি জানিয়েছেন তারা।

রবিবার সকালে বরিশাল নগরীর নথুল্লাবাদ কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালে কথা হয় যাত্রী ও চালকদের সাথে। তারা জানান, এমন অনুভূতির কথা মুখে প্রকাশ করার মত না। এক সময়ে বাসে করে ঢাকা থেকে বরিশালে আসতে ফেরি ঘাটে ঘণ্টার পর ঘণ্টা সময় লেগে যেত। পদ্মা সেতুর বদৌলতে সেই ভোগান্তি এখন নিশ্চিহ্ন।

বরিশাল-ঢাকা রুটের সাকুরা পরিবহন কোম্পানির বাসের চালক কাজী আনোয়ার বলেন, ‘প্রায় ৩০ বছর পরিবহন সেক্টরের সাথে আছি। ৫ বছর ধরে সাকুরা গাড়ি চালাই। ফেরিঘাটে কতো সময় বইসা থাহোন লাগছে, আবার ফেরি পাড় হইতেও তো দেড়-দুই ঘণ্টা লাগতো। কিন্তু আজ কোন কষ্ট হয় নাই, সেতুর টোল দিয়া একটানে পদ্মা পাড়ি দিয়া বরিশালে আইয়া পড়ছি। হেই সকাল সাড়ে ৮ টায় সায়েদাবাদ দিয়া রওয়ানা দিয়া পৌনে ১ টায় বরিশাল আইয়া পোছলাম। আগের দিন হইলে তো আড়াইটার আগে পৌঁছাইতামই না।’

ইলিশ পরিবহনের বাসের চালক এনামুল হোসেন বলেন, স্বপ্নের সেতুর ওপর দিয়া পদ্মা পাড়ি দিতে গিয়া নিজের কাছেই মনে হইছে, বাস্তবে না স্বপ্নে আছি। কয়েক মিনিটের মাথায় যখন সেতু পার হয়ে গেলাম, তখন সত্যিই মনে হইছে প্রধানমন্ত্রী দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের জন্য একটা উপহার-ই দিছেন। যার ফল একদিন প্রত্যেকটা মানুষ ভোগ করবে।

তিনি বলেন, ‘সকাল ৮টায় যাত্রাবাড়ী থেকে রওয়ানা দিয়া বেলা সাড়ে ১২টায় বরিশাল নিরাপদেই যাত্রীদের নিয়ে পৌঁছেছি। ফেরি থাকলে দুই ঘণ্টার মতো বেশি সময়  লাগতো।’


আরো আগে আসা যেতো জানিয়ে তিনি বলেন, ‘প্রথম দিনে একটু বেশি সময় লাগছে, কারণ সেতুর টোলঘর পার হইতে প্রায় ঘন্টাখানেক সময় লাগছে। ছোট গাড়িতে পুরো টোলঘর ভড়া। ব্রিজেও অনেক গাড়ি, যাদের আরোহীরা সবাই পদ্মা সেতু দেখতে আইছে। তবে টোলঘর ফ্রি হইলে চার ঘণ্টায় ঢাকা-বরিশাল আসা যাওয়া করা যাবে।’

দশমিনাগামী অন্তরা পরিবহনের চালক রেজবি বলেন, আগে ঢাকার সায়েদাবাদ দিয়ে দশমিনা যেতে গোটা দিন লেগে যেতো। কিন্তু টোলঘরের গাড়ির দীর্ঘ ঠেলে পদ্মা সেতুর উপর দিয়ে মাত্র ৪ ঘণ্টায় বরিশালেই আসছি, আশা করি আর দুই ঘণ্টার মাথায় দশমিনা থাকতে পারবো। এতে যাত্রীদেরও ভোগান্তি কমছে।

কুয়াকাটাগামী মিজান বাসের চালক এনামুল হোসেন বলেন, ‘সকাল ৮টার দিকে সায়েদাবাদ থেকে যাত্রী নিয়ে কুয়াকাটার উদ্দেশে রওয়ানা দেই। এক্সপ্রেসওয়ে দিয়ে অল্প সময়েই পদ্মা সেতুর টোলঘরে এসে পৌঁছাই। সেখানে প্রাইভেট গাড়ির অনেক চাপ। ফলে সেখানে কিছুটা সময় লেগেছে। আর টোল দেয়ার পর পদ্মা সেতুর ওপর দিয়ে গাড়ি চালিয়ে আসতে হিসেবে সময় লেগেছে আড়াই ঘণ্টার একটু বেশি। তবে রাস্তায় থ্রি-হুইলার না থাকলে টেনশন ছাড়া গাড়ি চালানো যাবে। সময়ও কম লাগবে।’

সকাল ৮টায় ঢাকার সায়েদাবাদ থেকে রওয়ানা দিয়ে বেলা সাড়ে ১২টায় বরিশালে পৌঁছে সাকুরা পরিবহনের যাত্রী আমজাদ হোসেন। 

তিনি বলেন, ‘যখন আমাদের গাড়ি পদ্মা সেতুর ওপর উঠলো তখন আশপাশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য আমাদের সবাইকে বিমোহিত করেছে। মনে হয়েছে স্বপ্নে আছি। আর যখন ব্রিজ থেকে নামলাম তখন মনে হয়েছে স্বর্গ থেকে আসলাম। স্বপ্নের এ সেতু নির্মাণে কত বাধা-বিপত্তি ছিলো, কিন্তু আজ আমরা কতটা মসৃণ পথ ধরে বরিশালে চলে আসলাম তা বলে বোঝাতে পারবো না।

ইলিশ পরিবহনের যাত্রী ব্যবসায়ী রবিউল হোসেন বলেন, পদ্মাসেতুর ওপর দিয়ে যখন গাড়িটি আমাদের নিয়ে পাড় হচ্ছিলো তখন আলাদা এক অনুভূতি কাজ করেছে। মনে চাচ্ছিলো গাড়ি থেকে নেমে পায়ে হেঁটে ব্রিজের ওপর দিয়ে আসি। চিৎকার করে বলি- এটা আমাদের স্বপ্নের পদ্মা সেতু। প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানাই, তিনি দক্ষিণাঞ্চলবাসীর জন্য এটা করে দিয়েছেন।’

গ্রিন লাইন পরিবহনের চালক ইয়াসিন জানান, সকাল সাড়ে ৬ টায় ঢাকার আরামবাগ থেকে ছেড়ে আসার পর তাদের গাড়ি ৪০ মিনিট টোল ঘড়ে বিলম্ব হওয়ার পরও তিন ঘণ্টায় বরিশালে আসতে পেরেছে।

অপরদিকে সরকারি বিআরটিসি কাউন্টারে ঢাকাগামী যাত্রীদের দেখা গেছে প্রচুর ভিড়। তারাও টিকিট কাউন্টারে লাইনে দাঁড়িয়ে টিকিট কেনার জন্য অপেক্ষা করছেন।

বরিশাল বিআরটিসি ডিপো ম্যানেজার মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘বরিশাল-ঢাকার জন্য ১৪টি এসি বাস সার্ভিস চালু করেছেন তারা। এর মধ্যে ঢাকা-বরিশাল-কুয়াকাটা রুটে ২টি, ভাণ্ডারিয়ায় ১টি ও বরিশাল-ঢাকা রুটে ১১টি।’

তিনি আরো বলেন, ‘আমরা বরিশাল-ঢাকার গুলিস্তান পর্যন্ত জনপ্রতি ৫০০ টাকা ভাড়া নেওয়ার কারণে বিআরটিসিতে যাত্রী চাপ বেড়েছে। রবিবার সকাল সাড়ে ১০ টায় আমাদের প্রথম বাসটি ৫০ জন যাত্রী নিয়ে ঢাকায় রওয়া দিয়েছে।’

অন্যদিকে বরিশাল নথুল্লাবাদসহ কাশিপুর সড়কে বিভিন্ন যাত্রীবাহী ও পণ্যবাহী গাড়ির চাপ বৃদ্ধি পাওয়ায় সেখানের সড়কে দায়িত্ব পালনকারী ট্রাফিক সদস্যদের দারুণ বেগ পেতে হচ্ছে।

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫