
কর্ণফুলী এক্সপ্রেস
নৌ-পরিবহন প্রতিমন্ত্রীসহ
অতিথিদের নিয়ে কক্সবাজার-সেন্টমার্টিন নৌরুটে যাত্রা শুরুর উদ্বোধনের পরপরই
সমুদ্রের নাজিরারটেক পয়েন্টের চরে সজোরে ধাক্কা খেয়ে আটকে গেল পর্যটকবাহী জাহাজ
‘কর্ণফুলী এক্সপ্রেস’। এতে অল্পের জন্য দুর্ঘটনার হাত থেকে রক্ষা পেয়েছে জাহাজটি।
তবে জাহাজটির ব্যবস্থাপনা
কর্তৃপক্ষের দাবি, নাবিকের গতিপথ ভুলের কারণে এ ঘটনা
ঘটেছে।
তারপরও আগামীকাল শুক্রবার (৩১
জানুয়ারি) সকালে কক্সবাজার শহরের উত্তর নুনিয়ারছড়াস্থ বাঁকখালী নদীর বিআইডব্লিউটিএ
ঘাট থেকে জাহাজটি পর্যটকদের নিয়ে সেন্টমার্টিনের উদ্দ্যেশে রওনা দেবে বলে
জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
আজ বৃহস্পতিবার (৩০ জানুয়ারি)
বিকালে কক্সবাজার শহরের উত্তর নুনিয়ারছড়াস্থ বাঁকখালী নদীর বিআইডব্লিউটিএ ঘাট থেকে
কক্সবাজার-সেন্টমার্টিন নৌরুটে জাহাজটি চলাচলের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন নৌ-পরিবহন
প্রতিমন্ত্রী খালেদ মাহমুদ চৌধুরী।
ফিতা কেটে উদ্বোধনের পর
জাহাজটি নৌ-পরিবহন প্রতিমন্ত্রীসহ অন্য অতিথিদের নিয়ে কক্সবাজার-সেন্টমার্টিন
নৌরুটে সংক্ষিপ্ত সফরে রওনা হয়।
জাহাজটি বাঁকখালী নদীর মোহনা
পার হয়ে সমুদ্রের নাজিরারটেক পয়েন্টে পৌঁছলে চরে সজোরে ধাক্কা খেয়ে আটকা পড়ে। এসময়
জাহাজে থাকা নৌ-পরিবহন প্রতিমন্ত্রীসহ অন্য অতিথিরা আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। পরে জাহাজটি
গতিপথ পরিবর্তন করে সমুদ্রে কিছু দূর যাওয়ার পর পুনরায় বাঁকখালী নদীর বিআইডব্লিটিএ
ঘাটে ফিরে আসে।
কক্সবাজার-সেন্টমার্টিন নৌরুটে
জাহাজটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করতে গিয়ে নৌ-পরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালেদ মাহমুদ
চৌধুরী বলেন, কর্ণফুলী এক্সপ্রেস চলাচলের মধ্য দিয়ে কক্সবাজারে
পর্যটনের নতুন দ্বার উন্মুক্ত হল। এর আগে পর্যটকদের সেন্টমার্টিন ভ্রমণে নানা
ধরণের দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে। দীর্ঘ সড়কপথ পাড়ি দিয়ে টেকনাফ পৌঁছে জাহাজযোগে
পর্যটকদের সেন্টমার্টিন যেতে হতো। এখন পর্যটকদের কক্সবাজার থেকে সরাসরি
সেন্টমার্টিন ভ্রমণের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, কর্ণফুলী এক্সপ্রেস চালুর মধ্য দিয়ে পর্যটকদের দুর্ভোগ লাঘব হবে। দীর্ঘ সমুদ্রপথ ভ্রমণের পাশাপাশি পাহাড়, নদী ও সমুদ্র উপকূলের মনোরম দৃশ্য উপভোগ করতে পারবে পর্যটকরা।
এতে কক্সবাজারে দেশি-বিদেশি
পর্যটকদের আকর্ষণে নতুন দিগন্তের উন্মোচন হয়েছে বলে মন্তব্য করেন প্রতিমন্ত্রী
খালেদ মাহমুদ চৌধুরী।
এসময় উপস্থিত ছিলেন, মহেশখালী-কুতুবদিয়া আসনের সংসদ সদস্য আশেক উল্লাহ রফিক, কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেন, অতিরিক্ত
পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মো. আদিবুল ইসলাম ও কর্ণফুলী শিপ বিল্ডার্সের
ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম এ রশিদ সহ অন্য অতিথিরা।
পর্যটকবাহী জাহাজটি উদ্বোধনের
পরপরই সমুদ্রে জেগে উঠা চরে আটকে যাওয়া প্রসঙ্গে কর্ণফুলী এক্সপ্রেসের পরিচালক এম.
হোসাইনুল ইসলাম বাহাদুর বলেন, নাবিক গতিপথ ভুল করায় সমুদ্রে
পানির নিচে জেগে উঠা চরে আটকা পড়ে। এতে সজোরে ধাক্কা খাওয়ায় জাহাজে থাকা যাত্রীরা
ভয় পেয়েছিল।
তবে বিষয়টি দুর্ঘটনা ঘটার মত
কোন কারণ ছিল না বলে দাবি করে জাহাজটির পরিচালক বাহাদুর বলেন, জাহাজটি উদ্বোধনের আগে কক্সবাজার-সেন্টমার্টিন নৌরুটে চলাচলের উপযোগীতা
নিয়ে পরীক্ষণমূলক যাছাই করা হয়েছিল। এতে তারা সফলতাও পেয়েছিল।
বাহাদুর বলেন, কক্সবাজার শহরের উত্তর নুনিয়ারছড়াস্থ বাঁকখালী নদীর বিআইডব্লিউটিএ জেটি
ঘাট থেকে পর্যটকবাহী জাহাজ ‘কর্ণফুলী এক্সপ্রেস’ নিয়মিত প্রবাল দ্বীপ
সেন্টমার্টিনের উদ্দ্যেশে রওনা দেবে। প্রতিদিন সকাল ৭ টায় জাহাজটি সেন্টমার্টিনের
উদ্দ্যেশে ছাড়বে এবং সেখান থেকে ফিরবে বিকাল সাড়ে ৩ টার পর।
কক্সবাজার-সেন্টমার্টিন নৌরুটের দীর্ঘ ৯৫ কিলোমিটার সমুদ্রপথে জাহাজটিতে যাত্রীদের নিরাপত্তায় সবধরণের ব্যবস্থাসহ আধুনিক সুযোগ-সুবিধা রয়েছে বলে জানান জাহাজটির কক্সবাজারের এ পরিচালক।
বাহাদুর জানান, জাহাজটিতে যাত্রী ধারণ ক্ষমতা রয়েছে ৫৪৭ জন। এর মধ্যে রয়েছে আসন সংখ্যা
(চেয়ার) ৫১০ টি এবং ১৭ টি কেবিন। এতে ইকোনমিক আসনের চেয়ার (দ্বিতীয় শ্রেণী) ভাড়া ২
হাজার এবং বিজনেস আসনের চেয়ার (প্রথম শ্রেণী) ২ হাজার ৫০০ টাকা।
কেবিনের মধ্যে রয়েছে সিঙ্গেল, ডাবল, ইকোনিমিক ও ভিভিআইপি শ্রেণীর। এগুলোর মূল্য
নির্ধারণ করা হয়েছে সিঙ্গেল (১ জনের) ৫ হাজার, ডাবল (২ জনের)
৮ হাজার, ইকোনমিক (২ জনের) ১০ হাজার এবং ভিভিআইপি (২ জনের)
১৫ হাজার টাকা। এছাড়া প্রতিটি কেবিনে অতিরিক্ত যাত্রীদের জন্য ইকোনমিক আসনের
চেয়ারের (দ্বিতীয় শ্রেণীর) ভাড়ার টিকেট সংগ্রহ করতে হবে।
এতে টিকেট সংগ্রহকারিরা
কক্সবাজার-সেন্টমার্টিন আসা-যাওয়া করতে পারবে। এর মধ্যে কেউ যদি ভিন্ন তারিখে আসতে
চান সেটি জাহাজ কর্তৃপক্ষকে টিকেট সংগ্রহ করার সময় অবহিত করতে হবে।